আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আম আদমি পার্টি’র সংসদ সদস্য ভগবন্ত মান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে সমন পাঠানোর দাবি তুলেছেন। তিনি আজ (মঙ্গলবার) সংসদের স্পিকার সুমিত্রা মহাজনকে রীতিমত নিজস্ব প্যাডে চিঠি লিখে ওই দাবি জানিয়েছেন।
সংসদের ভিডিও চিত্র ধারণ করে বিপাকে পড়া আম আদমি পার্টির সদস্য ভগবন্ত মান স্পিকারকে চিঠিতে জানিয়েছেন, ‘গতকাল আপনি আমার ভিডিও তৈরি করা নিয়ে এক কমিটি গঠন করেছেন। ওই কমিটি তদন্ত করে দেখবে ভিডিওতে সংসদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে কি না। ২০০১ সালে আইএসআই সংসদে হামলা করেছিল। ফের ২০১৬ তে আইএসআই পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায়। প্রধানমন্ত্রী সেই আইএসআইকে পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে সসম্মানে ডেকে তাদের ঘুরিয়েছেন। আইএসআই গোটা বিমানঘাঁটির নকশা তৈরি করে নিয়ে গেছে। এতে কী গোটা দেশের নিরপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়েনি?’
ভগবন্ত মান স্পিকার সুমিত্রা মহাজনকে লেখা ওই চিঠিতে আরো বলেছেন, ‘আমার ভিডিও তৈরি কি দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি, না প্রধানমন্ত্রী আইএসআইকে ডেকে যেভাবে বিমানঘাঁটি ঘুরিয়েছেন সেটি দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি?’
ভগবন্ত মান স্পিকারকে অনুরোধ করে বলেছেন, ‘আপনার ওই তদন্ত কমিটির কাজের পরিধি আরো সম্প্রসারিত করা উচিত। প্রধানমন্ত্রীকেও তার কৃতকর্মের জন্য কমিটির আওতায় আনা হোক। আমার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকেও ওই কাজের জন্য সমন পাঠান। আমি যদি দোষী হই, তাহলে প্রধানমন্ত্রী আমার চেয়ে একশ’গুণ বেশি দোষী। আমার আশা, আপনি এ নিয়ে কোনো পক্ষপাত করবেন না।’
ভগবন্ত মানের অভিযোগ, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের নিরাপত্তা নিয়ে খেলা করেছেন।
পাঞ্জাবের সাংরুরের সংসদ সাদস্য ভগবন্ত মান গত শুক্রবার সংসদের বাইরে এবং ভিতরে ভিডিও ছবি তুলে তা নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে বিপাকে পড়েছেন। এ নিয়ে ভারতীয় সংসদের উভয় কক্ষে ব্যাপক নিন্দা এবং প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। তাকে সংসদ থেকে বরখাস্ত করারও জোরালো দাবি জানানো হয়েছে। তীব্র বিতর্কের মধ্যে তিনি অবশ্য লোকসভার স্পিকারের কাছে লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
যদিও লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন ওই ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনে সাড়া না দিয়ে সোমবার তার বিরুদ্ধে ৯ সদস্যের তদন্ত দল গড়ার ঘোষণা দেয়ার পাশাপাশি তাকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত সাময়িকভাবে সংসদ থেকে বহিষ্কার করেছেন।
স্পিকার অভিযুক্ত সংসদ সদস্য ভগবন্ত মানকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত সংসদে আসতে নিষেধ করেছেন। আগামী ৩ আগস্টের মধ্যে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট পেশ করবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এরকম ঘটনা না ঘটে সেজন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে।
ভগবন্ত মানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছেন। সোমবার ভগবন্ত মান বলেন, ‘আমি জানতে চাই যখন পাকিস্তানের নিরাপত্তা এজেন্সি এসেছিল এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি তাদের পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন তখন দেশ কি নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে ছিল না? প্রধানমন্ত্রীকেও তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হতে বলা উচিত এবং তাকেও সংসদ থেকে সাসপেন্ড করা উচিত।’
তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রসঙ্গে ভগবন্ত মান বলেন, ‘এ ধরণের একতরফা পদক্ষেপ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। এসব রাজনৈতিক দল ভয় পেয়ে গেছে, কারণ আগামী নির্বাচনে পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে চলেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমেই বলেছি সংসদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে ফেলার কোনো উদ্দেশ্য আমার ছিল না। আমি কেবল শিক্ষামূলক ভিডিও তৈরি করতে চেয়েছিলাম। মানুষ আমাকে নির্বাচিত করেছে এজন্য তাদের জানার অধিকার রয়েছে হাউসে কীভাবে ইস্যু নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু আমার মনে হয়, আমার ক্ষমা পর্যাপ্ত নয়, তাই আমাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এর অর্থ আমি এই অধিবেশনে মানুষের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরতে পারছি না।’
ভগবন্ত মান এসব কথা বললেও স্পিকারের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটিই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সুপারিশ করবে।-প্যারিস টুডে
২৬ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই