বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬, ১১:২৫:৫২

ইহুদী দখলদারিত্বের প্রতিবাদে আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের বিয়ে

ইহুদী দখলদারিত্বের প্রতিবাদে আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের বিয়ে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে ছোট পরিসরে মিষ্টি বিতরণের মধ্য দিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করেছেন তারা। এরপর জেরুজালেমের ঐতিহাসিক আল-আকসা মসজিদের বিখ্যাত গম্বুজের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলাটা নব বিবাহিত ফিলিস্তিনিদের একটি সুপ্রাচীন রেওয়াজ।

আর এই যুগের ফিলিস্তিনি তরুণ-তরুণীরা ঐতিহাসিক মসজিদের সামনে উঠানো নিজেদের বিয়ের ছবি ফেসবুক, টুইটার, স্ন্যাপচ্যাটের মতো বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে প্রাচীন প্রথাটির আধুনিক রূপ দান করেছেন।

এসব ছবি শুধুমাত্র পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজনকে দেখানোর জন্য উঠানো হয় তা নয় বরং ফিলিস্তিনের গণমাধ্যমসহ সকল যোগাযোগ মাধ্যম এসব ছবি ব্যবহার করে ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থানের প্রতি তাদের একনিষ্ঠতা বিশ্বের নিকট তুলে ধরে।

এছাড়া পবিত্র মসজিদে কড়া ইসরাইলি বেস্টনী থাকা স্বত্ত্বেও ফিলিস্তিনিরা যে এই মসজিদের অধিকার ছাড়েন নি সে বার্তাটিও পৌঁছে দেয়ার জন্য এসব ছবি ব্যবহার করা হয়।

রামি মাজদি কাজ্জাজ নামের ২৫ বছর বয়সী জেরুজালেমের আল কুদস বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ বছর বয়সী ছাত্রী আমিরা আযম গাইথকে বিয়ে করে আল-আকসা মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে যে ছবি উঠান তা ফেসবুকে শেয়ার করেন।

এই তরুণ দম্পতির ভাষ্য, এই ছবি দেখে যেন অন্যান্য ফিলিস্তিনিরাও আল-আকসা চত্বরে বিয়ে করতে উৎসাহিত হয় তাই ছবিটি শেয়ার করা হয়েছে।

তালা শেরহান নামে ২৬ বছর বয়সি এক ফিলিস্তিনি নববিাহিত তরুণী তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত বলেন, ‘আল-আকসা মত একটি পবিত্র স্থানে আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দি’। আমরা অনুভব করলাম ঔপনিবেশিকরা যে মসজিদ প্রাঙ্গণের মধ্যে আমাদের অধিকার লঙ্ঘন করছে এবং আক্রমণ করছে এর একটি জবাবের জন্যই আমাদের এই কি করা উচিত।

শেরহানের স্বামী বাসিম জিদানি (২৯), যিনি বাবুর্চির কাজ করেন।তিনি বলেন, রাজনৈতিক গ্রুপ তাদের ছেলেমেয়েদের বিয়ে অনুষ্ঠানগুলো সুন্দরভাবেই সফল করে থাকে। কারণ ফিলিস্তিনি জনগণ এই সুপ্রাচীন মসজিদকে অনেক ভালবাসে।

জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ মুসলিমদের মতো ইহুদিদের নিকটও ‘পবিত্র তীর্থভূমি’ বলে বিবেচিত। এই মসজিদ চত্বরটি প্রায়ই উগ্রবাদী ইহুদিদের হামলায় মুসলিমদের রক্তে রঞ্জিত হয়। এছাড়া ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ প্রায়ই আল-আকসা মসজিদে মুসলিমদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

অনেক ফিলিস্তিনি মুসলিমের আশঙ্কা- উগ্রবাদী ইহুদিরা আল-আকসা মসজিদটি ধ্বংস করতে পারে।

এই আশঙ্কা থেকেই ফিলিস্তিনিরা পবিত্র আল-আকসা মসজিদে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে চান এবং সেই ছবি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে আল-আকসার প্রতি তাদের একনিষ্ঠতার কথা বিশ্ববাসীর নিকটে তুলে ধরেন।

তবে প্রতিনিয়ত জীবন-মরণ যুদ্ধে লিপ্ত ফিলিস্তিনি তরুণ-তরুণীদের সবার বিয়ে করার সৌভাগ্য হয় না। আর যারা বিয়ে করে তারাও ঘরোয়া পরিবেশে খুব অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ শেষ করে।

আল-আকসা মসজিদে বিয়ে করতে হলে পোহাতে হয় অনেক আনুষ্ঠানিকতার ধকল। এর সাথে ইসরাইলি বাহিনীর অযাচিত আক্রমণের শিকার হওয়ার ভয় তো আছেই।

ফলে আল-আকসা মসজিদে বিয়ে করার প্রাচীন ফিলিস্তিনি রীতি পালন থেকে সরে আসছে যুদ্ধপীড়িত ফিলিস্তিনবাসী।

তবে এখনো ফাতাহ আন্দোলন, ইসরাইল ভিত্তিক ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে আর আকসা মসজিদ প্রাঙ্গনে বিয়ের আয়োজন করে। সেখানে মিষ্টি বিতরণ করা হয়, আংটি পরানো হয় এবং ধর্মীয় নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ রেজিস্ট্র করে থাকেন। -ওয়ার্ল্ড বুলেটিন
২৮ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে