মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:৪৭:০০

একজন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে লড়াই দুই ব্রিটিশ আইনজীবীর

একজন প্রেসিডেন্টকে  নিয়ে লড়াই দুই ব্রিটিশ আইনজীবীর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মালদ্বীপের কারাবন্দি সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের ভাগ্য নির্ধারণে লড়াই করছেন হাই প্রোফাইল ব্রিটিশ দুই নারী আইনজীবী। নাশিদের মুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন তারা।

একজন সাবেক বৃটিশ ফার্স্ট লেডি চেরি ব্লেয়ার। অপরজন হলিউড অভিনেতা জর্জ ক্লুনির স্ত্রী আমাল ক্লুনি।

মিসেস ক্লুনি নাশিদকে মুক্ত করার চেষ্টা করছেন। মালদ্বীপে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম এ প্রেসিডেন্টের পক্ষে সমর্থন রয়েছে ব্রিটিশ সরকারের। অপরদিকে নাশিদের মুক্তির বিপক্ষে লড়ার জন্য চেরি ব্লেয়ারকে আকর্ষণীয় ফি দিচ্ছে মালদ্বীপের স্বৈরতান্ত্রিক সরকার।

কিন্তু আমাল ক্লুনি নাশিদের পক্ষে লড়াই করছেন বিনামূল্যে। এ বছরের শুরুতে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে নাশিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। সম্প্রতি নাশিদের মুক্তির ইস্যুতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হুগো সয়্যার চেরি ব্লেয়ারকে ঢুকতে দেননি বলে গণমাধ্যমে খবর আসে।

মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুনিয়া মামুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা ছিল সয়্যারের। কিন্তু মামুন তার সঙ্গে চেরি ব্লেয়ারকে বৈঠকে উপস্থিত রাখার জন্য জোরাজুরি করেন। সয়্যার ওই দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানান।

তিনি বলেন, এক মন্ত্রীর সঙ্গে অপর মন্ত্রীর বৈঠকে ব্যক্তিগত আইনজীবী উপস্থিত থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। এদিকে চেরি ব্লেয়ারকে ছাড়া বৈঠকে যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকে মামুন। তিনি বৈঠক বাতিল করে দেন।

এ পরামর্শ তার আইনজীবীর ছিল কি-না তা এখনও স্পষ্ট নয়। এদিকে, আমাল ক্লুনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জুন মাসে সয়্যারের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেছেন। কমন্সে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। সে সময় মোহাম্মদ নাশিদের স্ত্রী লায়লা আলীও উপস্থিত ছিলেন।

চেরি ব্লেয়ারকে বৈঠকে যোগ দিতে না দেয়ার বিষয়টির পক্ষে অভিমত দিয়ে এক কূটনৈতিক সূত্র বলেছে, ‘বিভিন্ন সরকারের মন্ত্রীদের আলোচনার চিরাচরিত রীতি হলো সরাসরি একে অপরের সঙ্গে কথা বলা। তাদের সঙ্গে নামীদামি আইনজীবীদের উপস্থিত থাকা জরুরি নয়। এমন একটি বৈঠকে মিসেস ব্লেয়ারের উপস্থিতি সম্পূর্ণ বেমানান হতো।’

তিনি আরো বলেন, ‘তিনি (চেরি) বা অন্য যে কেউ আলোচনার মধ্যে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতো। এতে স্পষ্ট হয় যে, মালদ্বীপ সরকার জানে আইনগত ভাবে তাদের অবস্থান দুর্বল। তাছাড়া কেন তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চাইবেন তার সঙ্গে আইনজীবী উপস্থিত থাকুক।’

চেরি ব্লেয়ারের লন্ডনভিত্তিক আইনি ফার্ম অমনিয়া স্ট্যাটেজি মালদ্বীপ সরকারের পক্ষে লড়াই করার জন্য উল্লেখযোগ্য অঙ্কের অর্থ পাচ্ছে। অপরদিকে মিসেস ক্লুনি নাশিদকে আইনি সেবা দিচ্ছেন বিনামূল্যে।

তিনি নাশিদের কারান্তরীণ করাকে ‘ন্যায়বিচারের তামাশা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং বলেছেন এর লক্ষ্য হলো ‘সরকারের সমালোচনা করার জন্য নাশিদকে শাস্তি দেয়া আর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তাকে অপসারণ করা।’

চেরি ব্লেয়ারের ক্লায়েন্ট মিস মামুন সাবেক মালদ্বীপ প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইয়ুমের কন্যা। মামুন আব্দুল গাইয়ুমের সমালোচকরা তাকে স্বৈরশাসক হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল।

২০০৮ সালে তিনি নাশিদের কাছে ক্ষমতা হারান। সেটা ছিল মালদ্বীপের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন। পরে ২০১২ সালে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। অভিযোগ করা হয় বন্দুকের মুখে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল।

মালদ্বীপে এ মাসের শুরুতে এক শুনানিতে যোগ দিয়েছিলেন মিসেস ক্লুনি। ওই শুনানিতে নাশিদের সঙ্গে মালদ্বীপ সরকারের আচরণের পক্ষে আদালতে যুক্তি পেশ করেছিল মিসেস ব্লেয়ারের অমনিয়া স্ট্যাটেজির অপর এক আইনজীবী।

ওই আইনজীবী আদালতকে বলেছিলেন, ‘নাশিদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে যা বিচারব্যবস্থার প্রতি ও তিনি যে কার্যালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তার প্রতি জনগণের আস্থাকে খর্ব করে। এমন অপরাধ সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।’

উল্লেখ্য, নাশিদকে মার্চ মাসে ১৩ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। এর সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যে বিচার প্রক্রিয়ায় ওই রায় দেয়া হয়েছিল তা ত্রুটিপূর্ণ বলে আখ্যা দেয় মানবাধিকার সংস্থাগুলো। সূত্র: ডেইলি মেইল
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে