জয়ন্ত সেন : চেয়ার বসে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার এক সরকারি কর্মী। তার সামনে থাকা টেবিলের উল্টো দিকে ইন্টারভিউ দিতে আসা মাধ্যমিক উত্তীর্ণ এক প্রার্থী। সরকারি কর্মীটি প্রশ্ন করলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম কী?
প্রার্থীর সপ্রতিভ উত্তর, মমতা ব্যানার্জি! উত্তর শুনে ওই সরকারি কর্মীটির তো চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম। কিছুটা ধাতস্ত হয়ে আবার ওই প্রার্থীকেই তার প্রশ্ন, পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীর নাম কী? জবাব এলো, দিল্লি।
শুনেটুনে ওই কর্মীটির চোখ প্রায় ছানাবড়া। জবাব শোনার পরে তিনি উত্তরদাতাকে শুধু বলেন, বেশ বেশ। আপনি এ বারে আসুন!
শুধু এক জন নন, ওই ইন্টারভিউ নিতে যাওয়া আরও অন্তত এক ডজন সরকারি কর্মীকে ১১ দিন ধরে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ প্রার্থীদের কাছ থেকে এই সব বিস্ফোরক উত্তর হজম করতে হয়েছে। এমনকী জানা গিয়েছে, হেরে গেলেও বর্তমান পরিবহণমন্ত্রীর নামের উত্তর এসেছে মদন মিত্রই! অনেকে রাষ্ট্রপতির নামও বলতে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ছাদের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, রাষ্ট্রপতির নাম নরেন্দ্র মোদি!
তবে সবাই যে এমন উত্তর দিয়েছেন, তা নয়। সরকারি কর্মীদের দাবি, স্নাতকোত্তর ও স্নাতক প্রার্থীদের কাছ থেকে তারা বেশিরভাগ জবাবই ঠিকঠাক পেয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) দেবতোষ মণ্ডল বলেন, ‘আমি ইন্টারভিউ নিইনি। তবে যে কর্মীরা নিয়েছেন, তাদের মুখে শুনেছি, বেশ কিছু প্রার্থী ওই ধরনের আশ্চর্যজনক উত্তর দিয়েছেন।’ জেলা সামাজিক নিরীক্ষা দফতরের নোডাল অফিসার সুকান্ত সাহা বলেন, ‘ইন্টারভিউয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব কী হয়েছে, তা বলতে পারব না।’
জেলা সামাজিক নিরীক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ২ আগস্ট থেকে জেলার ইংরেজবাজার, হবিবপুর, মানিকচক ও চাঁচল-১ ব্লকে সামাজিক নিরীক্ষা শুরু হবে। মূলত, ২০১৫ সালের পয়লা এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ওই ব্লকগুলিতে একশো দিনের প্রকল্পের কাজ কোথায় কী কী হয়েছে, বিভিন্ন ভাতা প্রাপকরা ঠিকঠাক মতো ভাতা পেয়েছেন কি না ও ইন্দিরা আবাসন প্রকল্পের ঘর ঠিকঠাক হয়েছে কি না— এ সবেরই মূল্যায়ণ হবে এই সমীক্ষায়। সে জন্য চারটি ব্লকের ৪১টি গ্রাম পঞ্চায়েতে সমীক্ষা করার জন্য ১০ জন করে মোট ৪১০ জন ভিলেজ রিসোর্স পার্সন নিয়োগ করা হয়েছে। এই পদ পুরোপুরি চুক্তিভিত্তিক। এরা ১০ দিন সমীক্ষা করবে।
একশো দিনের কাজের প্রকল্পের নিয়মে দৈনিক একটি দক্ষ শ্রমিকের পারিশ্রমিক ৩৫২ টাকা করে। এই সমীক্ষার কাজ যারা করবেন, তারাও দৈনিক ওই টাকাই পাবেন। এখানে আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়ের দিকে অনেকেই আঙুল তুলেছেন— এমন একটা কাজে, যেখানে আবেদনকারীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক পাস এবং দৈনিক ভাতা একশো দিনের কাজের সমান, সেখানে ১৭৭ জন স্নাতক তো বটেই, ১৭০ জন স্নাতকোত্তর প্রার্থীই এলেন কেন? শুনে কেউ কেউ বলছেন, চাকরির বাজার ভাল নয় বলেই বোধহয় এই কাজের জন্যও ১৭ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। এবং এতজন স্নাতক-স্নাতকোত্তর প্রার্থী।
কেউ কেউ আবার এ-ও বলছেন, ভাগ্যিস ওরা ছিলেন! না হলে এমন সব জবাব দেওয়া প্রার্থীদের থেকেই হয়তো লোক বাছতে হতো!
২৯ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস