আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সেই হিলারি হতে যাচ্ছেন ক্ষমতাধর দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। ডেমোক্র্যাট থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো নারী প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছেন।
ফিলাডেলফিয়ায় চলছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির ন্যাশনাল কনভেনশন। এ সম্মেলনে তার ঐতিহাসিক ভাষণে হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, আমরা আমেরিকান। আমরা সবাই মিলে একটি শক্তি।
তিনি বলেন, আমাদের সব সমস্যা আমরা সবাই মিলে সমাধান করবো। আমেরিকা কখনো এমন কোনো দেশ হবে না যেখানে এক শতাংশ মানুষের হাতে ক্ষমতা থাকবে। আমরা কোনো ধর্মকেই নিষিদ্ধ করবো না। আমরা আমেরিকানরা একসঙ্গে কাজ করবো।
বৃহস্পতিবার রাতে (মার্কিন স্থানীয় সময়) যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় চলমান ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে অানুষ্ঠানিকভাবে হিলারিকে দেয়া হয় দলীয় মনোনয়ন।
মঞ্চে উঠেই তার চিরচেনা হাসি ছড়িয়ে দিয়ে হিলারি ক্লিনটন বললেন, আপনাদের ধন্যবাদ। আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এ সময় হিলারি....হিলারি.... ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে।
এরপর একে একে শুরু হয় ধন্যবাদের পালা। মেয়ে চেলসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন নাতনী শার্লির কথা। এরপর স্বামী বিল ক্লিনটন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও বার্নি স্যান্ডার্সকে ধন্যবাদ জানান।
ঐতিহাসিক ভাষণে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বার্নি স্যান্ডার্সকে ধন্যবাদ দেন হিলারি ক্লিনটন। হিলারি বলেন, বার্নি আপনার প্রচারণা কোটি কোটি আমেরিকান বিশেষ করে তরুণ মার্কিনীদের উদ্দীপ্ত করেছে। আপনি আপনার প্রচারণায় অর্থনীতি ও সামাজিক ন্যায়বিচারকে সামনে এনেছেন, যা তারা ধারণ করে।
এ সময় বার্নি স্যান্ডার্সের প্রচারণার ইস্যুগুলোকে গুরুত্ব দেয়ার অঙ্গীকার করে হিলারি স্যান্ডার্সের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, স্যান্ডার্সের উদ্দেশ্য আমাদেরও উদ্দেশ্য।
সাবেক ফাস্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন তিনি। হিলারির জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর। তার বয়স এখন ৬৮।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় রাজ্যে বেড়ে উঠেন তিনি। জন্মসূত্রে তিনি খ্রিস্টান। তার বাবা একজন ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিণী।
এ পর্যন্ত হিলারির জীবনের প্রাপ্তিগুলো একনজরে-
১৯৬৫ সালে কলেজের ওয়েলসলি ইয়াং রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট হন তিনি। ১৯৬৮ সালে ওয়েলসলি কলেজ গভর্নমেন্ট অ্যাসোসিয়াশানের প্রেসিডেন্ট হন হিলারি।
১৯৬৯ সালে হিলারি স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৭৫ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে বিয়ে করেন হিলারি ক্লিনটন।
১৯৭৮ সালে ক্লিনটন লিগ্যাল সার্ভিস কর্পোরেশনের বোর্ড অব ডিরেক্টরের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
১৯৭৯ সালে বিল ক্লিনটন আরকানাসের গভর্নর নির্বাচিত হওয়ায় তিনি ফাস্ট লেডি হন।
একই সাথে তিনি রোজ ল ফার্মের সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৮০ সালে একমাত্র কন্যা চেলসিয়া ক্লিনটনের জন্ম হয়।
১৯৯৩ সালে ক্ষমতাধর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফাস্ট লেডি হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন হিলারি।
২০০৭/২০০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিপরীতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন তিনি।
২০০৮ সালে ওবামা সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে ই-মেইল নিয়ে সমালোচনায় জড়িয়ে পরেন। ওই বছরই প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন হিলারি।
হাইস্কুলে পড়াকালীন ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট পদে যখন নির্বাচন করতে যান তখনই হেরে যান।
স্কুলের এক ছেলে তখন ঠাট্টা করে হিলারিকে বলেছিলেন, তুমি সত্যিই নির্বোধ- যদি তুমি ভেবে থাক যে, কোনো নারী প্রেসিডেন্ট হতে পারে। সেই ছেলের কথা প্রমাণ করে দেখাবেন হিলারি। এখন শুধু নভেম্বরের অপেক্ষা!
২৯ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম