রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০১৬, ০৩:১৮:১৭

তুরস্কে ‘মীরজাফরের গোরস্তান’

তুরস্কে ‘মীরজাফরের গোরস্তান’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দাফনের আগে গোসলও করানো হয়নি ক্যাপ্টেন মেহমেত কারবেকির দেহকে। জানোয়ার রাখার ঘরে তাড়াহুড়ো করে তাকে দাফন করার আগে কেউ পবিত্র কোরআন থেকেও তেলাওয়াত করেনি। ইসলামী রীতির কোনো কিছুই পালন করা হয়নি তার জন্য।
 
চলতি মাসে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান সরকারকে উৎখাত করার জন্য এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে জড়িত যে ডজন ডজন সন্দেহভাজন সেনা নিহত হয় তাদের একজন হলেন মেহমেত। এই হামলায় প্রায় ৩০০ জন নিহত হওয়ার পর যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় তার পরিণতি মেহমেতের এই শেষ বিদায়ের চিত্র।
 
কারাবেকিরের কবরে কোনো স্মৃতিফলক নেই। আরও তিনজনের পাশে যন্ত্র দিয়ে তৈরি দুই মিটার গভীর কবরে তাকে সমাহিত করা হয়। ইস্তাম্বুলের পূর্বের শহরতলিতে একখণ্ড জমিতে যেসব বিদ্রোহী সেনাকে দাফন করা হয়েছে তাদের প্রথম ছিলেন মেহমেত।
 
ইস্তাম্বুলের মেয়র কাদির টপবাস এই গোরস্তানটিকে ‘বিশ্বাসঘাতকদের (মীরজাফরের) গোরস্তান’ বলে মন্তব্য করেন এবং জানান এখানে শুধু বিদ্রোহী সেনাদের দাফন করা হবে।
 
ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর সুন্নিপ্রধান তুরস্কের সরকার অভ্যুত্থানে জড়িত কিংবা মদদ দেয়ার অভিযোগে বিচার বিভাগ, সামরিক বাহিনী, বেসামরিক প্রশাসনসহ বিভিন্ন বিভাগ থেকে হাজার হাজার লোককে আটক অথবা বরখাস্ত করেছে।
 
তুর্কি সরকারের এ দমনপীড়ন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো, মানবাধিকার সংগঠন এবং দেশের সরকারবিরোধী কিছু সংগঠন সমালোচনায় মুখর হলেও বেশিরভাগ তুর্কিই সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে একাট্টা এবং তারা নিয়মিত সংহতি সমাবেশ করে যাচ্ছেন।
 
তবে ‘মীরজাফরের গোরস্তান’ নিয়ে অনেক লোকই সমালোচনামুখর। মানবাধিকার সংগঠনের পাশাপাশি সামাজিক গণমাধ্যমেও এর সমালোচনা হচ্ছে। এর জেরে সরকারি কর্মকর্তারা এটা থেকে নিজেদের দূরত্ব বজায় রাখছেন।
 
তুরস্কের ধর্ম মন্ত্রণালয় নিহত বিদ্রোহী সেনাদের ইসলামী রীতি অনুযায়ী দাফনের ব্যবস্থা না করতে নির্দেশ দিলেও একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেন, তুরস্কের শীর্ষ আলেম মেহমেত গর্মেজ মীরজাফরের গোরস্তানকে সমর্থন দেননি। তিনি বলেছেন, এটা নিহতদের পরিবারের জন্য বেদনাদায়ক।
 
এ অবস্থায় মেয়র টপবাস বৃহস্পতিবার মীরজাফরের গোরস্তান নামের সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন বলে স্থানীয় একটি টিভি জানিয়েছে। তবে গোরস্তানটি একই উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়।
 
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের এসব সিদ্ধান্তের সঙ্গে এরদোগান বা কেন্দ্রীয় সরকারের জড়িত থাকার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
 
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, কারাবেকির পরিবার তার লাশ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে কর্তৃপক্ষ তার লাশ দাফনের ব্যবস্থা করে। এ ব্যাপারে তার শ্যালিকার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
 
তবে স্থানীয় একজন অধিবাসী বলেন, ইস্তাম্বুলের একটি ভবন দখলের সময় কারাবেকির একজন স্থানীয় প্রশাসককে গুলি করে হত্যা করেন। ‘এমন অন্ধকারের মধ্যে কারও কবরে যাওয়া উচিত নয়’- কারাবেকির সম্পর্কে মন্তব্য ওই অধিবাসীর। -রয়টার্স থেকে যুগান্তর

৩১ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে