এমটিনিউজ২৪জবস : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ে অত্যন্ত উচ্চ বেতনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বার্ষিক বেতন ধরা হয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৫৫ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসেবে)। যোগ্যতা ও পারফরম্যান্স অনুযায়ী এর সঙ্গে ইকুইটি শেয়ার পাওয়ার সুযোগও থাকবে।
ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যান জানিয়েছেন, এ পদে কাজ করতে হলে সাধারণ যোগ্যতা যথেষ্ট নয় প্রার্থীকে হতে হবে প্রায় “অতিমানব”। কারণ, দায়িত্বটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও ঝুঁকিপূর্ণ।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির ‘হেড অব প্রিপেয়ার্ডনেস’ পদে একজন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হবে। তাকে ওপেনএআইয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেলগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা (সেফটি সিস্টেম) তদারকির দায়িত্ব নিতে হবে। পাশাপাশি এআই মডেলের ঝুঁকি মূল্যায়ন, সুরক্ষা কাঠামো উন্নয়ন এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণ করাও তাঁর কাজের অংশ হবে।
ওপেনএআই জানিয়েছে, চ্যাটজিপিটি তৈরির মধ্যেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ নেই। পরবর্তী প্রজন্মের আরও শক্তিশালী ও উন্নত এআই মডেল তৈরিতে বিপুল বিনিয়োগ করা হয়েছে। তবে এসব মডেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দিন দিন আরও কঠিন হয়ে উঠছে। প্রযুক্তি উন্নয়নের সময় তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান একই ধরনের মডেল তৈরি করে বাজার দখল করতে পারে এ কারণেই সুরক্ষাব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ কাজ প্রায় অসম্ভবের কাছাকাছি। কারণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন মানসিক স্বাস্থ্য, সাইবার নিরাপত্তা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য সম্ভাব্য হুমকি হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে এআই সংক্রান্ত নানা ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা সামলাতে হবে।
আরও উদ্বেগের বিষয় হলো বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অদূর ভবিষ্যতে এআই নিজেই নিজেকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে এবং একপর্যায়ে মানবজাতির বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে পারে।
স্যাম অল্টম্যান বলেন, এই দায়িত্ব অত্যন্ত চাপের। শুরু থেকেই গভীর ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হবে। তবে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সুরক্ষিত রাখতে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এআই শিল্পের ভেতর থেকেও এ বিষয়ে সতর্কবার্তা আসছে। সম্প্রতি বিবিসি রেডিও ফোরের টুডে অনুষ্ঠানে মাইক্রোসফট এআইয়ের প্রধান নির্বাহী মুস্তাফা সুলায়মান বলেন, এ মুহূর্তে আপনি যদি এআই নিয়ে একটুও ভয় না পান, তাহলে বুঝতে হবে আপনি বিষয়টির দিকে মনোযোগই দিচ্ছেন না।”
এ মাসেই গুগল ডিপমাইন্ডের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ডেমিস হাসাবিস সতর্ক করে বলেন, এআই এমনভাবে ‘লাইনচ্যুত’ হতে পারে, যা মানবতার জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এআই নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কাঠামো গড়ে ওঠেনি। এআইয়ের ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত কম্পিউটার বিজ্ঞানী যোশুয়া বেঞ্জিও সম্প্রতি মন্তব্য করেন, একটি স্যান্ডউইচের জন্য যত নিয়মকানুন রয়েছে, এআইয়ের জন্য বিদ্যমান নীতিমালা তার চেয়েও কম।
ফলে বাস্তবতায় এআই কোম্পানিগুলোকে অনেকটাই আত্মনিয়ন্ত্রণের পথেই এগোতে হচ্ছে।