বুধবার, ০৫ অক্টোবর, ২০১৬, ০৩:৩১:৫৬

ছোটবেলায় পুজো কীভাবে কাটাতেন সোহম, তা নিজেই জানাচ্ছেন

ছোটবেলায় পুজো কীভাবে কাটাতেন সোহম, তা নিজেই জানাচ্ছেন

বিনোদন ডেস্ক: কটা রিয়েল লুকের গান হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াব, বেশ একটা ঘ্যামা ব্যাপার! হাবভাবখানাই আলাদা! এবং সেই বন্দুকটা যেন অবশ্যই আমার অন্য বন্ধুদের বন্দুকগুলোর তুলনায় অনেক বেশি ভাল দেখতে হয়। সেই বন্দুক হাতে নিয়ে ঘুরব, আর সবাই বেশ আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে! এটাই ছিল আমার ছোটবেলার পুজোর মেন অ্যাট্রাকশন। ক্যাপ বন্দুক ছাড়া দুর্গাপুজো? জাস্ট ভাবতেই পারতাম না সেই বয়সে। নতুন জুতো-জামা-প্যান্ট কটা হল তাই নিয়েও ছিল প্রচুর উন্মাদনা। পাড়ার প্যান্ডেলে দৌড়ে যাওয়া-আসা লেগে থাকত সারা দিন। সারা বছর ঘুম থেকে ওঠা, পড়তে বসা, স্কুল যাওয়া নিয়ে হাজারো বাহানা থাকলেও বছরের ওই চারটে দিন কিন্তু সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে, স্নান সেরে, নতুন জামা প্যান্ট পরে, ক্যাপ বন্দুক নিয়ে একদম রেডি— প্যান্ডেলে গিয়ে দাদাগিরি করার জন্য। মোটামুটি এরকমই একটা দৃশ্য ভেসে ওঠে একদম ছোটবেলার পুজোর স্মৃতিতে।

খানিকটা বড় হওয়ার পরে বন্দুকী দাদাগিরিটা বদলে হয়ে গেল ভলেন্টিয়ারি দাদাগিরি। তখন দড়ি হাতে নিয়ে দাদাগিরি করার দিন। আমাদের ব্যাচের উপর দায়িত্ব থাকত পুজো প্যান্ডেলের শৃঙ্খলা বজায় রাখার। সবাই ঠিকঠাক অঞ্জলি দিতে পারছেন কি না, প্রত্যেকে প্রসাদ পেলেন কি না, কোথাও যেন কোনও গন্ডগোল না শুরু হয়— এইসব। সেই সময় সবথেকে যেটা করতে ভাল লাগত, তা হল, সন্ধ্যাবেলা যখন দর্শনার্থীদের ঢল উপচে পড়ত পাড়ার প্যান্ডেলে, তখন লম্বা দড়ি নিয়ে লাইন নিয়ন্ত্রণ করাটা। কত কত মানুষ দূরদূরান্ত থেকে, প্রায় সারা রাত ধরে এসেই চলেছেন। আর আমরা তাঁদের সুষ্ঠুভাবে প্রতিমা দর্শনের ব্যবস্থা করছি। অদ্ভুত একটা আনন্দ পেতাম এই কাজটা করে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়দায়িত্ব পালনের প্রথম একটা অনুভূতি। সে সব দিন আজ বড্ড মিস করি।

না, তার চেয়ে অনেক বেশি আনন্দ পেতাম লোকজন সামাল দেবার কাজে। ওই অঞ্জলি দেবার সময় কাউকে দেখে একটু ভাললাগা, বা ঠাকুর দেখতে আসা অজস্র মানুষের মধ্যে কোনও সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে একটু-আধটু চোখাচোখি হল। ব্যস্, ওই টুকুই। আসলে পুজোর সময় প্রেমটেমে খুব একটা মজা পেতাম না। তার চেয়ে অনেক বেশি ভাললাগার জায়গা ছিল পাড়ার পুজোর সঙ্গে ইনভল্‌ভমেন্টটা। ঠাকুর আসা থেকে বিসর্জন পর্যন্ত— প্রচুর কাজ। তার সঙ্গে সঙ্গে প্যান্ডেলে দাদাগিরি করব, বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা দেব, খিচুড়ি খাব— এই গুলোই ছিল আমার পুজোর আসল আনন্দ।

‘মাস্টার বিট্টু’ ছিলাম বলে একটা স্পেশাল ট্রিটমেন্ট পেতাম ছোটবেলায়। বিকেল থেকে যখন মণ্ডপে মানুষের জমায়েত শুরু হত, বন্ধুরা মজা করে বলত, ‘ওই দেখ লোকজন ঠাকুর ছেড়ে এবার তোকে দেখতে আসছে’। একটু লজ্জা লাগত ঠিকই, কিন্তু ব্যাপারটা বেশ এনজয় করতাম।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখনকার পুজোর চালচিত্র অনেক বদলে গিয়েছে। আজকালকার বাচ্চারা হয়ত ক্যাপ বন্দুক নিয়ে খেলতেই শেখেনি।

আজ এতগুলো বছর বাদেও আমার পুজো কিন্তু খুব একটা বদলায়নি। আজও অষ্টমীর অঞ্জলি মাস্ট। ভলেন্টিয়ারি দাদাগিরি বা দড়ি ধরে লোক সামলানো না থাকলেও, নিয়ম করে আমার পুরনো পাড়ার পুজোয় যাই। বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিই। আমি এখন যে কমপ্লেক্সে থাকি সেখানে খুব বড় করে পুজো হয়। বাড়ির সবাই সেখানেই আনন্দ করে কাটাই। প্রত্যেক দিন কোনও হোটেলে বা বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বসে প্রচুর আড্ডা এবং খাওয়াদাওয়া হয়। পুজোর চার দিন কোনও শ্যুটিং বা কাজ নয়। শুধুমাত্র পরিবার ও বন্ধু। বাইরে যাই না, কলকাতাতেই থাকি। আলাদা করে ঠাকুর আর এখন দেখতে যাওয়া হয় না। পুজো ওপেনিং করতে গিয়েই ঠাকুর দেখা পর্বটা মিটে যায়।

এই বছর আমার পুজো অত্যন্ত স্পেশাল। আমার বাবা হওয়ার আনন্দ! আমার বেবির প্রথম দুর্গাপুজো বলে কথা। তার জন্য অনেক শপিং হয়েছে। আরও হবে। পুজোর ছুটির এই ক’টা দিন ওর সঙ্গে অনেকটা সময় কাটাতে পারব।-এবেলা
৫ অক্টোবর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে