বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৬, ০১:২৪:৩৪

আঠারো বছর ধরে 'সিআইডি' এত জনপ্রিয় কেন?

আঠারো বছর ধরে 'সিআইডি' এত জনপ্রিয় কেন?

বিনোদন ডেস্ক : ফেসবুক পেজ-এ লাইক গুনে শেষ করা যায় না৷ একে নিয়ে জোক আর শায়েরিও হাজার-হাজার৷ নাম উঠেছে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও৷ ঠিকই ধরেছেন৷ 'সিআইডি'৷ ভারতীয় টেলিভিশনে দীর্ঘতম সিরিয়াল৷ কিন্তু কেন এত জনপ্রিয় এখনও?

সন্ত্রাসবাদীরা হামলা করেছে৷ মারাত্মক বোমা, উন্নত সব হাতিয়ার আর অনেক লোকবল তাদের৷ অন্য দিকে মাত্র দুজন৷ হাতে শুধু সার্ভিস রিভলবার৷ যুক্তি বলে সন্ত্রাসবাদীরাই জিতবে৷ কিন্তু সিআইডি বলে ইন্সপেক্টর দয়া একটা বিরাশি সিক্কার চড় কষাবে অপরাধীদের, অভিজিত্‍ গুলি করবে আর এসিপি প্রদ্যুম্ন ন্যারেটিভ দেবে কীভাবে সিআইডি আগে থেকেই সব কিছু জেনে ফেলেছিল৷ আপনি প্রশ্ন করতেই পারেন কেন সন্ত্রাসবাদীরা চড় খাওয়ার আগে গুলি চালায় না, কেনই বা বোমা ছোঁড়ে না? এর উত্তরে বলতেই হয় আপনি তাহলে 'সিআইডি'-র নিয়মিত দর্শক নন৷

অথবা ইন্সপেক্টর অভিজিতের গুলি লেগেছে৷ হাসপাতাল থেকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে৷ দাহ করার সময় হঠাত্‍ উঠে বসলো অভিজিত্‍৷ এসিপি প্রদ্যুম্ন জানালেন আসলে এটা খুনিকে ধরার জাল ছিল৷ একটা বিশেষ ধরনের চিপ লাগানো ছিল অভিজিতের চিতায়৷ তার মাধ্যমেই পুরো বিষয়টা মনিটর করছিল সিআইডি টিম৷ বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন? তাহলে আবারও বলব আপনি সিআইডি-র নিয়মিত দর্শক নন৷ আচ্ছা, সুপারস্টার রজনীকান্তের সিনেমা দেখতে গেলে কি আপনার মনে এই সব প্রশ্ন আসে? আসে না তো? তেমনই 'সিআইডি' হল টেলিভিশনের রজনীকান্ত৷

যতই প্রতিকূল পরিস্থিতি হোক না কেন এর ক্ষয়ও নেই, বিনাশও নেই৷ আঠারো বছর ধরে, হ্যাঁ আঠারো বছর ধরে তাই 'সিআইডি'-র টেলিভিশন রেটিং সব থেকে বেশি৷ কোনও সাস-বহু সিরিয়াল মাত্‍ দিতে পারেনি৷ যে চ্যানেলে 'সিআইডি' টেলিকাস্ট হয় সেই বেসরকারি চ্যানেলের মিডিয়া পার্সন গীতাঞ্জলী লাহিড়ি জানান-'সিআইডি ছাড়া আমরা ভাবতেই পারি না৷ সেই ১৯৯৮ সাল থেকে এখনও সমান জনপ্রিয়৷ প্রথমে শুধু হিন্দিতেই হত৷ এখন তামিল, তেলুগু, বাংলায়ও সিআইডি হয়৷ এমনকী পাকিস্তানের 'আপনা চ্যানেল'-এও সিআইডি টেলিকাস্ট করা হয়৷ আমদের চ্যানেলের জনপ্রিয়তার একটা বড় কারণ কিন্ত্ত এই সিরিয়াল৷' এই জনপ্রিয়তার জন্যই বোধহয় সালমান খান থেকে আমির খান- সবাই নিজের ছবির প্রমোশনের জন্য বেছে নেন এই সিরিয়াল৷

ওঁরা কী বলছেন

শিবাজী সাটম (এসিপি প্রদ্যুম্ন) : আমি আগেও বি পি সিং-এর সঙ্গে কাজ করেছি৷ ও দুরদর্শনের ক্যামেরাম্যান ছিল৷ আমাকে জানায় ও এরকম একটা টিভি সিরিজ করতে চলেছে৷ আমায় এসিপি-র চরিত্রে নিতে চায়৷ আমি সঙ্গে সঙ্গে হ্যাঁ করে দিই৷ যদিও থিয়েটার আর ফিল্মে তখন প্রচুর অভিনয় করছিলাম, তাও না করতে পারিনি৷ ওঁ প্রথম থেকেই বলেছিল আমাকে ছবি করার জন্য ছুটি দেবে৷ আমি বেশ কিছু ছবি করেওছি৷ কিন্ত্ত এখন আর পারি না৷ বয়স হচ্ছে তো! খুব হেকটিক শিডিউল থাকে আমাদের৷ কখন শেষ হবে কোনও ঠিক থাকে না৷ তবে এই খাটনি উসুল হয়ে যায় যখন দেখি আমাদের সিরিয়ালটা কত জনপ্রিয়৷ 'সিআইডি বীরতা অ্যাওয়ার্ড' দিই আমরা৷ সিরিয়ালের নামে অ্যাওয়ার্ড ফাংশন আর হয় বলে তো আমার জানা নেই৷ এখানেই আমরা অন্যদের থেকে আলাদা৷

আদিত্য শ্রীবাস্তব (সিনিয়ার ইনসপেক্টর অভিজিত্‍ ) : প্রতিদিন আমাদের খুব হেকটিক শিডিউল থাকে৷ ক্রিমিনালদের পিছনে কম করে ১৫ কিলোমিটার আমাদের ছুটতে হয় প্রতিদিন৷ কিন্তু কী করব? সিরিয়াল ইন্ডাস্ট্রিতে এর থেকে ভালো অপশন আর কিছু হতেই পারে না৷ ভাবতে পারেন আঠারো বছর ধরে একটা সিরিয়াল চলছে, আর এখনও সেটা এত জনপ্রিয়! তাই হয় সিআইডি-তে অভিনয় করব, নাহলে কিছুই করব না৷ জানেন কত ছেলেমেয়ে চায় সিআইডি-ডে অভিনয় করতে৷ নিজেকে বলি এটাই তো করতে চেয়েছি৷ তাই এত দিন সিআইডি করেও হাঁপিয়ে পড়ি না৷ আগে শুধুমাত্র শুক্রবার সিআইডি হত৷ এখন শনি-রবিবারও হয়৷ ফলে কাজের চাপ আগের থেকে অনেক বেশি৷ তবে মিথ্যে বলব না এত কিছুর মাঝেও বড় পর্দাকে একটু তো মিস করিই৷ মাত্র ২৬টা এপিসোড করার চুক্তি ছিল আমার৷ কিন্ত্ত সেটাই পরে বেড়ে এতো বছর হয়ে গেল৷ আমি এক বছর পর থেকে সিআইডি-তে আছি৷ এখানেই আমার অভিনয় দেখে রাম গোপাল ভর্মা 'সত্য'-তে অভিনয় করার সুযোগ দেন৷ আরও পরে 'গুলাল'-এ আমার অভিনয় খুবই প্রসংশিত হয়েছিল৷ আরও কিছু ছবি করার কথা চলছে৷ ভালো পরিচালকদের সঙ্গে৷ কিন্তু সব ঠিক না হলে কিছু বলব না৷ অনেকবার এরকম হয়েছে যে সব ঠিক হয়েও শেষ পর্যন্ত রোলটা আমি পাইনি৷ আমার তো কোনও গড ফাদার নেই! যাই হোক, মোট কথা ভালো চরিত্র না পেলে বড় পর্দায় আমি আর নেই৷ ও আরও একটা শর্ত আছে, নিয়মিত সিআইডি-র শ্যুটিং করতে দিতে হবে৷ কারণ এটা প্রথমে ছিল শুধু রোজগারের উপায়, এখন আমার পরিবার৷

দয়ানন্দ শেট্টি (সিনিয়ার ইনসপেক্টর দয়া) : এখন দুপুর দুটো৷ সকাল থেকে এখনও কিছু খাওয়া হয়নি৷ প্রতিদিন সকাল ৯টায় আসতে হয়৷ আর বাড়ি যাওয়ার কোনও ঠিক থাকে না৷ এত রাগ হয় মাঝেমধ্যে৷ মনে হয় সিরিয়ালটা করবই না আর৷ কিন্তু তারপরেই ভাবি এটা ছাড়া তো কিছু করতেই পারি না৷ এমন কিছু ভালো অভিনয়ও করি না৷ ছুটির দিনে নিজের অভিনয় দেখলে নিজেরই হাসি পায়৷ কিন্তু দুদিন ছুটি নিলে মন আনচান করে৷ মনে হয় কখন সেট-এ পৌঁছাবো৷ আসলে খুব ইনসিকিওরিটিতে ভুগতে থাকি৷ এতো বছর শুধুমাত্র 'সিআইডি'-তে অভিনয় করেছি৷ এটা তো চাকরি করার মতোই হল৷ ষোলো বছর কোনও কোম্পানিতে চাকরি করার পর সেটা নিজেরই মনে হতে থাকে৷ বাড়ির লোক তো আমাকে দেখতেই পায় না প্রায়৷ ওরাও আমাকে টিভির পর্দায়ই দেখে৷ সত্যি সেট-এ এলেই এত শান্তি লাগে কী বলব৷ মনে হয় আমি সত্যিই পুরো সমাজ থেকে ক্রাইম দূর করছি৷ দেশের জন্য ভালো কিছু করছি৷

১৮ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে