বিনোদন ডেস্ক: এই কথাটাই বললেন বিদ্যা বালন। বললেন, নিজের ওপর আস্থা না থাকার জন্যেই অনেক ভাল চরিত্র ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। জানালেন, একসময় একের পর এক ছবি থেকে প্রত্যাখ্যানের রাগ এখনও তাঁর আছে।
সৌগত চক্রবর্তী
• আগে ছিল ‘কহানি’। এবার ‘কহানি ২’। কিন্তু এই নামের সঙ্গে জুড়ে গেছে দুর্গা রানি সিং। পুরো নাম ‘কহানি ২: দুর্গা রানি সিং’। এমন নামকরম কেন?
•• আসলে আমি আর সুজয় একটা ব্র্যান্ড তৈরি করতে চাইছি। ‘কহানি ব্র্যান্ড’। আগের ছবিটায় যেমন বিদ্যা বাগচিকে কেন্দ্র করেই গল্পটা বলা হয়েছে, এবার তেমনি সেই জায়গায় গল্পের কেন্দ্রে দুর্গা রানি সিং। কিন্তু এই ছবি আগের ছবির সিক্যুয়েল নয়। আসলে সুজয় প্রথম থেকেই কনসাস ছিল, যাতে এই ছবিতে আগের ছবি ‘কহানি’র কোনও ছাপ না পড়ে। এই ছবি সম্পূর্ণই দুর্গা রানিকে ঘিরে। সেই কারণে, একমাত্র আমি আর খরাজদা ছাড়া আগের ছবির কোনও শিল্পীকেই রিপিট করা হয়নি।
• প্রকাশিত হয়ে গেছে ‘কহানি ২’ ছবির পোস্টার ও ট্রেলার। কিন্তু একজায়গায় বলা হয়েছে অপহরণকারী ও খুনি দুর্গা রানি সিং-কে খোঁজা হচ্ছে আবার ট্রেলারে দেখা যাচ্ছে দুর্গারই মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে এবং একটা দুর্ঘটনায় দুর্গা কোমায়। আসল ব্যাপারটা কী?
•• খুব মুশকিলে ফেললেন। দুটো স্টেটমেন্টের মধ্যে নিশ্চয়ই একটা যোগসূত্র আছে। কিন্তু সেটা বলে দিলে সর্বনাশ। সুজয় আমাকে মেরে ফেলবে। আসলে একটা থ্রিলার ছবি করতে গেলে একটা ঘোরাটোপ রাখতেই হয়। ক্লাইম্যাক্স জেনে গেলে দর্শক আর হলে আসবেন কেন? এই বিষয়টা নিয়ে প্রথম থেকেই আমরা সজাগ ছিলাম। তাই কালিম্পং-এর এমন একটা জায়গা শুটিং লোকেশন হিসেবে বাছা হয়েছিল যেখানে মানুষের বাস খুব কম। যখন কোনও বাংলো বা অফিসে শ্যুট করেছি তখন তা লোকজনের আড়ালে আবার যখন আউটডোর শ্যুটিং হয়েছে, এমন জায়গা বাছা হয়েছে, যেখানে মোবাইলের টাওয়ারও পাওয়া যায় না অনেক সময়।
• ‘কহানি’র সাফল্য নিয়ে তো নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, ‘কহানি’ তৈরির আগে সুজয় ঘোষের পরিচালক হিসেবে তেমন পরিচিতি ছিল না। দুটো ছবি করেছিলেন, দুটোই ফ্লপ। এমন একজন পরিচালকের সঙ্গে প্রথমবার কাজ করার ক্ষেত্রে মন থেকে বাধা আসেনি?
•• কেন আসবে না? ওকে তো আমি চিনতামই না। প্রথমে একদিন ফোন করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়েছিল। বলেনি কেন দেখা করতে চায়। আমার কাছে আসা মাত্রই একটা চিত্রনাট্য বার করল। পড়েও দেখিনি। সঙ্গে সঙ্গেই বলে দিয়েছিলাম, ওই ছবি আমি করব না। কিন্তু ও নাছোড়বান্দা। বলে দিল, যতবার না বলবেন আমি ঠিক ততবার আপনার কাছে এই একই প্রস্তাব নিয়ে আসব। আর ঠিক সেটাই করতে লাগল। যখন তখন, যে কোনও সময়ে। বাধ্য হয়ে ওকে নিরস্ত করতেই চিত্রনাট্য শোনার আগ্রহ দেখিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, তারপর চিত্রনাট্য পছন্দ হয়নি বলে ওকে ভাগিয়ে দেব। কিন্তু সেটা শোনার পর... সেতো অন্য ইতিহাস, সবাই জানেন।
• আপনার অধিকাংশ ছবিতেই আপনার বিপরীতে তেমন কোনও স্টার নেই। কারণ মুম্বইয়ের সিনেমা জগৎ মনে করে আপনার অভিনয় দক্ষতাই ছবিকে বক্স অফিস পাইয়ে দেবে। কী বলবেন?
•• এটা ওঁদের ব্যাপার। আমার ওপর ওঁদের এই আস্থা আমার কাছে গর্বের। কিন্তু সত্যি বলতে কি, একজন অভিনেত্রী হিসেবে নিজের ওপরে আমার তেমন আস্থা নেই।
• এটা কি আপনার বিনয়ের পরিচয় বলেই ধরে নেব?
•• তা কেন। আমি খুব সত্যি কথাই বলছি। আমার কাছে ছবির প্রস্তাব তো কম আসে না। সত্যি কথা বলতে কি অনেক ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিই ভয়ে। ভয়, কারণ, আমার মনে হয় সত্যি সত্যিই এই চরিত্রটাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারব তো?
• এতদিন মুম্বই সিনেমা জগতে সুনামের সঙ্গে কাজ করেও এই ভয় কেন?
•• আসলে দু’ধরনের অভিনেত্রী আছেন। একদল জন্মগতভাবে প্রতিভাধর। ওঁদের সংখ্যা হাতে গোনা। আর একদল পরিশ্রম করে শেখে। আমিও শিখেছি এবং এখনও শিখছি। আবার এটাও ঠিক, স্তানিশ্লাভস্কির ‘অ্যান অ্যাক্টর প্রিপেয়ার্স’ বা ব্রেখট পড়ে অভিনয় শিখে যাওয়া যায় না। তাহলে গলিতে গলিতে অভিনেতা-অভিনেত্রী ছেয়ে যেত। তবে আমি চেষ্টা করছি।
• কিন্তু আপনাকে মুম্বইয়ের প্রযোজকরা ‘লেডি আমির খান’ বলেন। কারণ আমিরের মতই নিত্য নতুন অবতারে সিনেমায় হাজির হচ্ছেন, একটা ছবিকে একা টেনে নিয়ে যাচ্ছেন, আপনার ছবি বক্স অফিসেও ভাল ফল করছে। কেমন লাগে এই তুলনাটা?
•• ভাল না লাগার তো কোনও কারণ নেই। কিন্তু সত্যি বলতে কি আমি নিজেকে আমির খানের সঙ্গে এক লাইনে রাখি না। যাঁরা এই কথাটা বলেন বা বলছেন তাঁদের আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু পাশাপাশি এটাও বলতে চাই, প্লিজ একবার আমিরের ছবির ব্যবসা দেখুন তারপর আমার ছবির ব্যবসা দেখুন। দেখা যাবে আমিরের সবচেয়ে অসফল ছবির সঙ্গে হয়তো আমার সবচেয়ে সফল ছবিটার তুলনা হবে। সন্দেহ নেই ‘লেডি আমির খান’ আমার কাছে দারুণ প্রশংসা কিন্তু সত্যের থেকে এটা অনেক দূরে।
• ‘কহানি’, ‘তিন’ বা তারপর ‘কহানি ২’—তিনটে ছবিই কলকাতা নির্ভর। আবার তিনটে ছবির পরিচালকই বাঙালি। আপনিও বারবার কলকাতায় আসছেন শুটিং করতে। কেমন লাগে?
•• এতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে? আমি তো বাঙালিই। আমি সবাইকে সেটাই বলে বেড়াই। বলি আমি বাঙালি কিন্তু প্রবাসে আছি। সত্যি বলছি, আপনাদের শহরটাকে, এখানকার মানুষকে আমার খুব ভাল লাগে। কলকাতা এলেই হিংয়ের কচুরী, মাছের নানা প্রিপারেশন, ফুচকা খাই। সুযোগ পেলেই আমি কলকাতায় আসব। এই তো আবার এই মাসেই কলকাতা যাচ্ছি শ্যুটিং করতে।
• কোন ছবির শ্যুটিং?
•• ছবিটা দ্বিভাষিক। মালওয়ালি আর ইংরেজি ভাষায়। বিখ্যাত মালওয়ালি সাহিত্যিক কমলা সুরাইয়ার জীবন নিয়ে। আমি নিজে এই সাহিত্যিকের লেখার খুব ভক্ত।
• কিন্তু এই ছবির শুটিং কলকাতায় কেন?
•• আসলে কমলা সুরাইয়ার যৌবনটা কেটেছে কলকাতায়। এক বাঙালি ভদ্রলোককে বিয়ে করেছিলেন। কলকাতাতেই তাঁর লেখার শুরু। মূলত ইংরেজিতেই লিখতেন। কাজেই তাঁকে নিয়ে ছবি করতে হলে তো কলকাতাতেই আসতে হবে।
• আগামী জানুয়ারিতেই মুক্তি পাচ্ছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় আপনার ছবি ‘বেগম জান’। এই ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হওয়ার কারণ কী?
•• এক তো ছবিটার গল্প ইতিহাস নির্ভর। দেশভাগ। আমি ব্যক্তিগতভাবে মান্টোর লেখা পড়েছিলাম আগেই। এই সময়টা নিয়ে আমার কৌতুহলও ছিল। পরে ঊর্বশী বুটালিয়ার ‘দ্য আদার সাইড অফ সাইলেন্স’ও পড়েছিলাম। তবে এর পাশে আর একটা কারণ আছে। সেটা হল বেগম জানের রাগ। এই চরিত্রটার মধ্যে দিয়ে যে রাগটা প্রকাশ পেয়েছে, সাধারণত আমাদের সিনেমায় মহিলাদের এই রাগের প্রকাশটা হয়না। সৃজিৎ সেটা রেখেছে, আমি সৃজিতের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই চরিত্রটা বলতে বাধা নেই, আমার নয় বছরের কেরিয়ারের সবচেয়ে কঠিন চরিত্র।
• এই যে কথাটা বললেন, মহিলাদের রাগ। আপনার ব্যক্তিগতভাবে রাগ হয়?
•• আমিও তো মানুষ। আমি বরাবরই পুরুষ আর নারীর সমানাধিকারে বিশ্বাসী। কাজেই একজন পুরুষ রাগ দেখাতে পারলে একজন মহিলা রাগ দেখাতে পারবে না কেন?
• কিন্তু আপনিতো ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে ঠাণ্ডা মাথার মানুষ হিসেবে পরিচিত।
•• ওটা বাহ্যিক। সুজয় জানে আমার রাগের প্রকাশটা কীরকম। আমরা যখন একসঙ্গে শুটিং করি তখন সবসময়েই মারামারি করি। আক্ষরিক অর্থেই মারামারি। লোকে ভাবে এরা এত মারামারি করছে, শুটিং করবে কখন? ভাগ্য ভাল তার মধ্যেই শুটিংটা হয়ে যায়। আসলে এই রাগটা আমার অনেকদিনের। সেই যখন একের পর এক দক্ষিণী ছবি আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। সেই সময় এই কলকাতাই আমার ওপর আস্থা রেখেছিল। সেই রাগটাই আমার মধ্যে এখনও প্রকাশ পায় একটা ভাল চরিত্র পেলেই। মন-প্রাণ দিয়ে তাই চরিত্রটার মধ্যে ঢুকে যেতে চাই। যাঁরা একসময়ে আমাকে প্রত্যাখান করেছিলেন, তাঁরা আমার প্রশংসা করতে যেন বাধ্য হন।-আজকাল
১ নভেম্বর,২০১৬/এমটি নিউজ২৪ ডটকম/আ শি/এএস