বিনোদন ডেস্ক: জনপ্রিয় চিত্রনায়ক মাসুম পারভেজ রুবেল। দেশীয় চলচ্চিত্রে অ্যাকশন হিরো হিসেবে তিনি সুপরিচিত। চলচ্চিত্রে তিনি দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে যাচ্ছেন। রুবেল একাধারে ফাইটিং ডিরেক্টর, নায়ক, প্রযোজক, কণ্ঠশিল্পী ও চিত্রপরিচালক। সম্প্রতি এ অভিনেতা বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া কয়েকটি চলচ্চিত্রের শুটিং নিয়েও ব্যস্ত আছেন। অভিনয়সহ চলচ্চিত্রের নানা বিষয় নিয়ে তার সাক্ষাত্কারটি নিয়েছেন মিলান আফ্রিদী।
এখন কী নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
মিজানুর রহমান শামিমের ‘অপরাধ জগত্’ ছবিটির শুটিং করছি। একই পরিচালকের ‘ফাঁসির আসামি’ নামের নতুন আরেকটি চলচ্চিত্রের কাজ শুরু করব। সম্প্রতি কুমিল্লায় শেখ শামিমের ‘গর্ভধারিণী’ ছবির শুটিং করেছি। এছাড়া মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ভাইয়ের ‘বিধ্বস্ত’ ছবির কাজ শেষ করেছি।
অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র পরিচালনাও করছেন। নতুন বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এসব চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা কী?
আমার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘মায়ের জন্য যুদ্ধ’। এটি ২০০১ সালে মুক্তি পায়। আর সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘রক্ত পিপাসা’ (২০০৮ সাল)। এ পর্যন্ত আমি ১৬টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় ‘মিশন সিক্স’ হলো আমার পরিচালিত ১৭ নম্বর চলচ্চিত্র। শিগগরিই এর কাজ শুরু হবে। এছাড়া ‘ডিজিটাল নায়ক’ ও ‘নন্দিনী’ শীর্ষক চলচ্চিত্র-দুটিরও প্রযোজকের সমস্যার কারণে শুটিং শুরু করতে পারছি না। আশা করছি, খুব শিগগিরিই এ ছবিগুলোর কাজ শুরু করতে পারব। এগুলোর আগে নতুন একটি চলচ্চিত্রের কাজ শুরু করব।
চলচ্চিত্রের বর্তমান মন্দা অবস্থার কারণ কী বলে মনে করেন?
দর্শক একই রকম চলচ্চিত্র দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া হলগুলোর মান ভালো না থাকায় দর্শক হলে যাচ্ছে না। আমাদের দেশে সাম্প্রতিক বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের বেশিরভাগ নির্মিত হচ্ছে ভালোবাসা কেন্দ্রিক। তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, চলচ্চিত্রের নামের সঙ্গে গল্পের কোনো মিল থাকে না। চলচ্চিত্রে দক্ষ অভিনয়শিল্পীরও অভাব দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে চলচ্চিত্রের অবস্থা ততটা সুবিধাজনক নয়।
দর্শকদের হলমুখী করতে কী কী করণীয় বলে মনে করছেন?
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হল সংখ্যা বাড়ানো এবং হলের মান উন্নয়ন করলে দর্শক আবার হলে ফিরবে। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কষণ করছি। ভালো ছবি নির্মাণের জন্য যা যা প্রয়োজন, এগুলো সরকারের পক্ষ থেকে পেলে আমাদের পক্ষে ভালো ছবি নির্মাণ করা সম্ভব হবে।
ইদানীং যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণের হিড়িক পড়ে গেছে। এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণ এর আগেও হয়েছে। তবে ইদানীং আমাদের দেশে যেসব যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ করা হচ্ছে, এর অধিকাংশ ছবিই সঠিক নিয়ম মানা হচ্ছে না। এরপরও এসব ছবিকে কেন সেন্সর সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে, তা আমার জানা নেই। এ রকম চলতে থাকলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। এসব বিষয়ে সরকারকে নজর দিতে হবে।
চলচ্চিত্রে আপনি অ্যাকশন হিরোর খ্যাতি পেয়েছেন। এটাকে কি হিসেবে দেখছেন?
আমাদের দেশে শহরসহ গ্রামাঞ্চলেও কিন্তু বিভিন্ন ধরনের মারামারি হয়ে থাকে। এগুলোও কিন্তু সমাজের বাইরের কিছু নয়। আমি সবসময় এ ধরনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। তবে নিরেট সামাজিক চলচ্চিত্র, যথা একেবারে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রেক্ষাপটের গল্পে নির্মিত, মোটেও মারপিট নেই—এমন চলচ্চিত্রে অভিনয় করা হয়নি। অ্যাকশনধর্মী ছবিতে দর্শকও আমাকে বেশ ভালোভাবেই নিয়েছেন। এটা আমার কাছে অবশ্যই ভালোলাগার।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নায়ক সংকট কাটছেই না। এর কারণ কী বলে মনে করছেন?
মূলত চলচ্চিত্রের প্রতি অভিনেতাদের ভালোবাসার অভাব রয়েছে। যতদিন পর্যন্ত ফিল্মের প্রতি অভিনেতাদের ভালোবাসা না থাকবে, ততদিন পর্যন্ত আমরা ভালো নায়ক বা অভিনেতা আশা করতে পারি না। আমরা চলচ্চিত্রের প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা থেকেই অভিনয় করেছি। এ কারণেই আমাদের সময়ে নায়কের সংকট ছিল না। একসময়ে আমরা প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছি। সে চলচ্চিত্রও দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।
এখনকার প্রজন্মের নায়ক-নায়িকারা কেমন অভিনয় করেন?
এখনকার নায়ক-নায়িকাদের মধ্যে কেউ কেউ ভালো অভিনয় করছেন। তবে এখনকার শিল্পীরা রাতারাতি তারকা হয়ে যেতে চান। এরা প্রচারণায় সময় বেশি দেন। আর আমরা অভিনয়ে সময় বেশি দিতাম।
সম্প্রতি ঢাকাই চলচ্চিত্রে নকলের বেশ অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
বাংলা চলচ্চিত্রের এমন দুরবস্থা হওয়ার জন্য কিছু সংখ্যক প্রযোজক ও পরিচালকরা দায়ী। এমন কিছু প্রযোজক আছেন, যারা নিজেরাই গল্প-চিত্রনাট্য থেকে শুরু করে আর্টিস্ট নির্ধারণ পর্যন্ত সবকিছু করে দেন। এতে চলচ্চিত্রের মান নষ্ট হয়। একসময় আমাদের চলচ্চিত্রগুলো এত ভালো করেছে, কারণ গল্পে বৈচিত্র্য ছিল। সে সময় গল্প নিয়ে পর্যালোচনা করা হতো। এখন তা করা হয় না। এটা চলচ্চিত্রের জন্য মোটেও ভালো নয়। -ইত্তেফাক
৩ নভেম্বর,২০১৬/এমটি নিউজ২৪ ডটকম/আ শি/এএস