শুক্রবার, ০৪ নভেম্বর, ২০১৬, ০৭:৫৭:৩৩

ফারুকীর ইনটেনশন মোটেও ভালো না : শাওন

ফারুকীর ইনটেনশন মোটেও ভালো না : শাওন

সুধাময় সরকার : বলিউডের ইরফান খানকে নিয়ে ‘ডুব’ নামের একটি সিনেমা নির্মাণ করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। যার কাহিনি নিয়ে শুরু থেকেই গোপনীয়তা রক্ষা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে, গুঞ্জন চলছিল শুরু থেকেই- এই ছবির গল্প নাকি দেশের নন্দিত সাহিত্যিক-নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদকে ঘিরেই আবর্তিত। যেখানে ইরফান অভিনয় করেছেন হুমায়ূন চরিত্রে। আর গল্পে উঠে এসেছে হুমায়ূন আহমেদের বর্ণাঢ্য জীবনের ছোট্ট একটি বিতর্কিত বিষয়। যদিও এমন গুঞ্জনের সত্যতা পাওয়া যায়নি ফারুকীর কড়া নজরদারির কারণে।  

আজ শুক্রবার কলকাতার শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা আনন্দবাজার জানালো সেই খবরের সত্যতা। ছবিটি সেন্সরে ওঠার আগে ফারুকী সম্ভবত কলকাতার পত্রিকা দিয়ে ঢাকার মিডিয়াটাকে খানিক বাজিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন। তাই তো “হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রে ইরফান? কিন্তু এত লুকোছাপা কেন”- শিরোনামে আনন্দবাজারের এই প্রতিবেদনটি নিয়ে গেল রাত থেকেই চলছে ভক্ত সমাজে পাল্টাপাল্টি ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আর হুমায়ূন পরিবারের মধ্যে চলছে নীরব বিস্ময় এবং রক্তক্ষরণ।

আনন্দবাজারের আজকের (৪ নভেম্বর) প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ডুব’ ছবিতে ইরফান খান অভিনয় করছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রে। গল্পটাও নাকি অনুপ্রাণিত তার জীবন থেকে।

পত্রিকাটি আরও জানায়, ছবিতে হুমায়ূন আহমেদের মেয়ে শিলা আহমেদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। হুমায়ূনের প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন খানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোকেয়া প্রাচী ও দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন চরিত্রে অভিনয় করেছেন কলকাতার অভিনেত্রী পার্নো মিত্র।

আনন্দবাজারের এই প্রতিবেদনে ‌‘ডুব’ প্রসঙ্গে ফারুকী বলেন, ‘আমি চাইছি দর্শক ছবিটা দেখুক আগে। আমি নিজেও হুমায়ূন আহমেদের বিরাট ফ্যান। এটুকুই বলবো, আমি একটা পরিবারের গল্প বলছি, কয়েকজন মানুষের ভালোলাগা, দুঃখ, ক্ষোভ, হিংসা- এই আবেগগুলো ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি। সেটা কার জীবন অবলম্বনে, তার বিচার ছবি দেখার পরে হলেই ভালো।’

ফারুকী এখানেও বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও পত্রিকাটি আরও জানায়, সিনেমাটির শুটিংয়ের আগে হুমায়ূন আহমেদের প্রচুর ভিডিও দেখেছিলেন ইরফান খান। সেগুলো দেখেই কথাবার্তা বলার ধরন ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে হোমওয়ার্ক করেছিলেন।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, ফারকীর ‘ডুব’ মূলত তৈরি হয়েছে হুমায়ুন আহমেদের সঙ্গে শাওনের প্রেম, গুলতেকিনের বিচ্ছেদ এবং কন্যা শীলা আহমেদের কিছু প্রতিক্রিয়ার গুঞ্জনকে অবলম্বন করে। যে গল্পে আরও উঠে এসেছে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর পরই পারিবারিক কিছু স্পর্শকাতর বিষয়ও।

হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে তার বর্ণাঢ্য নন্দিত জীবনের এমন একটি বিতর্কিত অংশ নিয়ে ছবি নির্মাণ করার বিষয়টিকে ‌‌‌‌‘অন্যায়’ এবং ‘বিরক্তিকর’ বলে দাবি করেছেন মেহের আফরোজ শাওন। তিনি শুক্রবার দুপুরে বলেন, ‘ফারুকীর ইনটেনশন মোটেও ভালো না। তিনি মুখে বারবার বলছেন হুমায়ূন আহমেদকে ভালোবাসেন, তার জন্য কাঁদেন! অথচ একটা ছবির শুটিং শেষ হয়ে মুক্তির অপেক্ষায় আছে। সেটি প্রসঙ্গে আমরা কেউ কিছু জানলাম না! এবং এই খবরটি আমাদেরকে জানতে হয় ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার কাছ থেকে! এটা হুমায়ূন আহমেদের প্রতি ফারুকীর কেমন ভালোবাসা? আনন্দবাজারের প্রতিবেদক দুদিন আগে আমাকে যখন ফোন দিয়ে এই বিষয়ে কমেন্ট চাইলেন এবং আমি শুনে আকাশ থেকে পড়লাম, বিব্রত হলাম- তখন কী হুমায়ূন আহমেদের সম্মান বেড়েছে? নাকি ফারুকীর সম্মান বেড়েছে? কেউ কী বলতে পারেন হুমায়ূন আহমেদের প্রতি জনাব ফারুকীর এ কেমন ভালোবাসার নিদর্শন?’

শাওন আরও বলেন, ‘এই যে দীর্ঘ জীবন এই শহরে আমি হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আছি- কই কোনও দিন কোথাও এই ফারুকী সাহেবকে তো দেখলাম না! প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে দেখেছি- তার মাঝে ফারুকী সাহেবের মুখটাতো খুঁজে পেলাম না। বলতে শুনলাম না- স্যার আমি আপনার ভক্ত আপনাকে ভালোবাসি! তবে কি হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তার প্রতি ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে? নাকি সিনেমার মোড়কে হুমায়ূন পরিবারকে ঘায়েল করার জন্য এটা তার খারাপ ইনটেনশন? প্রশ্ন থেকে যায়। আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি। এত সহজে থেমে যাবো না। আইনানুগভাবে যা যা করা দরকার আমি সেটা করবো। কেউ আমার সঙ্গে থাকুক আর না থাকুক।’

শাওন বলেন, ‘‘হুমায়ুন আহমেদ মারা গেছেন। আমিও মারা যাইনি, তার স্বজন-সন্তানরাও মারা যাননি। সেটা হুমায়ূন আহমেদের ভাই থেকে শুরু করে তার সন্তান নোভা, শীলা, বিপাশা, নূহাশ, আমি আমার দুইটা ছেলে- সবাইতো ছিলাম। ধরে নিলাম ফারুকী ইনস্পায়ার্ড হয়েই ছবিটি বানিয়েছেন। ইন্সপায়ার্ড মুভি সারা দুনিয়ায় হয়। হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কেউ ছবি বানাবে- আমিও খুব খুশি তখন পর্যন্ত, যতক্ষন পর্যন্ত আমি বুঝবো তার ইনটেনশন ভালো। যদি তার ইনটেনশন ভালো হতো সে আমাদের কাউকে না কাউকে বিষয়টি জানাতেন, শেয়ার করতেন গল্পটা।

তিনি বলেন, ধরে নিলাম তিনি আমাকে পছন্দ করেন না। হতে পারে আমার সম্পর্কে তার মনে মিস কনসেপশন আছে। তার স্ট্যাটাস পড়ে সেটা আজই (শুক্রবার) অনুমান করলাম। সমস্যা নেই। তাহলে অন্যদেরকেও তো বিষয়টি সে অবহিত করতে পারতেন। কিন্তু সেটা করেননি, কারণ উনার ইনটেশন ভালো ছিলো না। এবং আমি অনুমান করেই বলতে পারি- হুমায়ূন আহমেদের বিশাল জীবনের ছোট কিছু রিউমারকে তিনি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। আমার সঙ্গে বা আমাদের সঙ্গে কথা বললে কী হতো? আমরা চাইতাম কিংবদন্তি এই মানুষটার জীবনের যে অংশ নিয়েই সিনেমা হোক- সেটা যেন ভুল কিছু না হয়। এমন কিছু না হয় যেটাতে তার মানহানি ঘটে। এটুকুই তো। অথচ ফারুকী সাহেব সেই সুযোগ দিলেন না। উল্টো হুমায়ূন আহমেদের পরিবার নিয়ে তিনি ফেসবুকে ওয়াজ-নসিহত করছেন। ক’দিন আগে স্টার প্লাসে ‘আজ রবিবার’ নাটকটি প্রচার নিয়েও তিনি একই কাণ্ড ঘটালেন। অদ্ভুত এবং অহেতুক।’’

প্রসঙ্গত, ‘ডুব’ প্রযোজনা করছে বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া, ভারতের এসকে মুভিজ এবং ইরফান খান। চলতি বছরের প্রথমদিকে বাংলাদেশের একাধিক লোকেশনে ছবিটির দৃশ্যায়ন হয়। বর্তমানে সম্পাদনার টেবিলে রয়েছে ছবিটি। বাংলা ট্রিবিউন

০৪ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি‌

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে