সোমনাথ গুপ্ত (আজকাল): পুরুষদের ঘৃণা করার হাজারটা কারণ খুঁজে পেয়েছে রিয়া। শুধুই খুঁজেই পায়নি, একটা বইও লিখে ফেলেছে। সেই বইয়ের প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক (পুং) সাংবাদিক তো প্রথমে লেখিকা রিয়ার বাবাকে নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফেলে। কারণ, রিয়ার বক্তব্য, পুরুষদের শুধু দেহ আছে, আত্মা নেই। তাহলে, রবীন্দ্রনাথ, শেক্সপীয়রের কি আত্মা ছিল না?
এমন সব বেয়াড়া প্রশ্নে রিয়া যখন কোনঠাসা, আবির্ভাব ঘটে রিয়ার মায়ের। জমে ওঠে প্রেস কনফারেন্স। এবং আরও কোনঠাসা হয় রিয়া। বিয়ে না করার সিদ্ধান্তে অটল রিয়াকে নড়িয়ে দেয় মায়ের প্রতিজ্ঞা। সে বিয়ে না করলে তার মা তিন মাসের মধ্যে আত্মহত্যা করবে। ফলে, রিয়া বাধ্য হয় বিয়ে করার কথা ঘোষণা করতে। এভাবে, সূচনাতেই বেশ জমে ওঠে ‘যমের রাজা দিল বর’। যদিও, ‘যমরাজ’ হয়, কিন্তু ‘যমের রাজা’ বলে কিছু হয় না বলেই তো গুপী, বাঘা আমাদের জানিয়েছে। তবে, ভূতের রাজাকে সম্মান দিয়ে ছন্দে, মিলে ‘যমের রাজা’কেই এনেছেন আবির সেনগুপ্ত, তার প্রথম ছবিতে।
কমেডির হাত ধরে শুরুটা বেশ ভালই জমেছিল। তারপর বিয়ের ওয়েবসাইট মারফৎ অন্য ধাঁচের এক ভিতু দেব দাস (আবির) কে পছন্দ হয় রিয়ার (পায়েল)। ইন্ধন জুগিয়েছে রিয়ার মা (লাবণি) এবং বোন (অনীশা)।
ফুলশয্যার রাতে রিয়া ওষুধ মিশিয়ে পানীয় খেতে দেয় দেব দাসকে। সেই ওষুধ পুরুষকে ইমপোটেন্ট করে দেয়। ওষুধ খাওয়ার পরে যেভাবে আবিরকে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া দিতে হয়, তা এতই স্থূল, যে, এতক্ষন ধরে তৈরি হওয়া কমেডির আবহটা ঘেঁটে যায়। পরিচালকের ভাবনার দৈন্য এই দৃশ্যে বড় প্রকট হয়ে ওঠে। এবং এই দৃশ্যের সংলাপও ততটাই ভোঁতা হয়ে ওঠে।
অপমানিত দেব দাসের সেই রাতেই আত্মঘাতী হওয়ার পর পুনরায় কমেডির বাতাবরণ তৈরি হয়। বাস্তবের সঙ্গে মিশে যায় কল্পনার বিস্তার। বন্ধ জানলা ও দেওয়ালের ওপারে ধোঁয়া-ভর্তি রাস্তা ধরে রিয়া পৌঁছে যায় যমলোকে। যমরাজের কাছে সে ফেরৎ চায় দেব দাসকে। কিন্তু সেটা যে অসম্ভব, বোঝাতে থাকে যমরাজ (রজতাভ)। রিয়াও ছাড়ার পাত্রী নয়। সাবিত্রী ও সত্যবানের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে রিয়া। ফলে, যমরাজ বাধ্য হয় দাবি মেনে নিতে। কিন্তু শর্ত একটাই। হয় দেহ, নয় আত্না— যে কোনও একটা নিতে হবে রিয়াকে। এবং, রিয়া, ভেবে চিন্তে আত্মার দেব দাসকে নিয়েই ঘরে ফেরে।
দেব দাসকে রিয়া ছুঁতে পারে না। কিন্তু, সেই দেব দাস-ই আবার ঘরের সব কাজ সেরে রাখে। এভাবে বাস্তব ও পরাবাস্তবকে কমেডির আবহে ভালই ধরেছেন পরিচালক। দুই বস্ অরিন্দম শীল ও ইন্দ্রাশিস রায়ের সঙ্গে রিয়ার দৃশ্যগুলি বেশ ইন্টারেস্টিং।
কমেডি থেকে মাঝে মাঝেই এ ছবি যুক্তির বাস্তবে এসে ভালই টানাপোড়েন তৈরি করেছে। ভূতে, মানুষে টানাটানিও মন্দ নয়। যমরাজ্যেও পরিবর্তন হয়, দেখা গেল। রজতাভ দত্তর পর নতুন যমরাজ হয়ে হাজির খরাজ মুখোপাধ্যায়। দুজনেই ভাল জমিয়েছেন।
মর্ত এবং যমরাজ্য পেরিয়ে রিয়ার সঙ্গে দেব দাসের সত্যিই মিলন হবে কিনা, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এগিয়েছে এই ছবি। মিলন যে হবে, বোঝাই গেছে। কিন্তু কতদূরে, সেটাই দেখার ছিল, তার জন্যে ছবিটা বেশ দীর্ঘায়িত হয়েছে। অনেকটা দৈর্ঘ্যই কাটা যেত।
অভিনয়ে আবির চট্টোপাধ্যায় ও পায়েল সরকার— দুজনেই ঠিকঠাকভাবে নিজেদের চরিত্র দুটি স্পষ্ট করেছেন। রিয়ার বন্ধু হিসেবে দেবলীনাও ঠিকঠাক। দুরকম বস্ হিসেবে অরিন্দম শীল, ইন্দ্রাশিস রায় দুজনেই যথেষ্ট স্মার্ট। কমেডির মাত্রা বাড়িয়েছেন লাবণি সরকার। দুই যমরাজ রজতাভ ও খরাজ জমজমাট। অনুপম রায়ের সঙ্গীত ঠিকঠাক।
সন্দেহ নেই, অন্যরকম একটা কাহিনী নিয়ে এগোনোর সাহস দেখিয়েছেন পরিচালক আবির সেনগুপ্ত। কমেডির আবহে ভালই উস্কে দিয়েছেন দেহ আর আত্মার বিতর্ককে। এবং, তার আগামী ছবি নিয়ে আগ্রহও তৈরি করতে পেরেছেন পরিচালক।
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি