বিনোদন ডেস্ক : সেটা ১৯৮০-র দশকের কথা। এক খ্যাতনামা কবিদম্পতি তাদের শিশুপুত্রকে সঙ্গে নিয়ে ইঙ্গমার বার্গম্যানের ‘ফ্যানি অ্যান্ড আলেকজান্ডার’ ছবিটি দেখতে গিয়েছেন এসপ্লানেড অ্ঞ্চলের একটি হল-এ। ছবি শুরু হওয়ার কিচুক্ষণের মধ্যেই দম্পতির চক্ষু চড়কগাছে। সুইডেনের এক স্বচ্ছল যৌথ পরিবারকে নিয়ে বিংশ শতকের গোড়ার দিকের পটভূমিকায় নির্মিত এই ছবিতে পরতে পরতে ছিল ভয়াবহ সব বদ রসিকতা।
এ ছবিকে ‘কাল্ট’ বলে মনে করেন বিশ্বসুদ্ধু ক্রিটিক। কিন্তু, এক বাঙালি দম্পতির সন্তান-সান্নিধ্যে এই ছবি এনজয় করা কী দুঃসহ হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। দম্পতি একবার ভাবছেন, হল থেকে বেরিয়ে যাবেন কি না, পরক্ষণেই আবার মনে হচ্ছে, হঠে পড়াটা আরও ক্যাডাভ্যারাস হবে। প্রাক কৈশোরের পুত্ররত্নটি কি ছেড়ে কথা কইবে?
কেন উঠে যাব— এই প্রশ্ন সে অবধারিত ভাবে করবেই, আর তখন কী উত্তর দেবেন তাঁরা? এই রকম উভয় সঙ্কটে পড়তে হয়েছে বেশিরভাগ বাঙালিকেই। আজও হয়। ঘরে অথবা বাইরে এমন কিছু সিনেমা আমরা দেখতে বসে পড়ি বাবা-মা সমভিব্যহারে, যা কিছুক্ষণ চলার পরে আমরা না-পারি উঠে যেতে, না পারি বসে ছবি উপভোগ করতে। অথচ এই সব ছবি একা বা সমবয়সিদের সঙ্গে দেখলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টিই হতো না। দেখে নিন সেই ৫টি সিনেমা। খবর এবেলার।
ইনসাফ কা তরাজু : ১৯৮০ সালের এই ছবি আজও টিভি-র বিভিন্ন চ্যানেলে দেখানো হয়। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আমরাও সপরিবার দেখতে শুরু করি। কিন্তু দু’খানি ভয়াল-ভয়ঙ্কর বিতর্কীয় দৃশ্যের সামনে পড়ে ধরণী দ্বিধা হও-পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ই। বিশেষ করে ‘মাইনর’ পদ্মিনী কোলাহ্পুরীর দৃশ্যটি আজও গুরুজনের সামনে অস্বস্তি তৈরি করে।
গ্যাংগস অফ ওয়াসিপুর : না কোনও আপত্তিকর দৃশ্য এখানে নেই। কিন্তু ধানবাদ খনি অঞ্চলের রূঢ়তম বাস্তবকে ক্যামেরায়িত করতে পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ ব্যবহার করেছিলেন অমেয় স্ল্যাং। প্রায় প্রতিটি সংলাপেই ঝরে পড়েছে ঠেঠ অপভাষার মণিমুক্তো। ‘সপরিবারে’ এ ছবি দেখা সত্যিই কঠিন।
দিল্লি বেলি : ২০১১-এর এই ডার্ক কমেডির নান্দনিকতা নিয়ে কিছু বলার নেই। কিন্তু পরিচালক অভিনয় দেও আর চিত্রনাট্যকার অক্ষত শর্মা রাজধানীর আরবান স্ল্যাংকে তুমুলভাবে ব্যবহার করেছিলেন এই ছবিতে। তার উপরে ছিল বদলাতে থাকা সামাজিক সম্পর্কের খতিয়ান। বাঙালির সপরিবার মুভিদর্শন এখানেও অস্বস্তিকর।
পার্চড : লীনা যাদব পরিচালিত ২০১৫-এর এই ছবির কেন্দ্রীয় বিষয় রাজস্থানের মরু অঞ্চলের সমাজ ও নারী। নারী অবদমনের বাস্তবকে তুলে ধরতে একদিকে যেমন উঠে এসেছে স্পষ্ট খোলামেলা, তেমনই এর সংলাপে কোনও আগল রাখেননি পরিচালক। আপত্তিকর দৃশ্য এখানে এতটাই অবারিত যে, পারিবারিক দর্শন সত্যিই দুরূহ।
পিঙ্ক : অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর ২০১৬-এর হিন্দি ছবিরও বিষয় নারী-নিগ্রহ। রয়েছে লম্বা আদালত-দৃশ্য। চিত্রনাট্যের প্রয়োজনেই উঠে এসেছে এমন সব সওয়াল-জবাব, যা বয়ঃসন্ধি পর্বের সন্তান-সহযোগে উপভোগ করা কঠিন। সব থেকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়, যখন অপ্রাপ্তবয়স্কটি বাবা বা মা’র কাছে জানতে চায়, ছবিটার নাম ‘পিঙ্ক’ হল কেন। আসলে একে গ্রহণ করে উপভোগ করতে ভারতীয় তথা বাঙালি মধ্যবিত্তির এখনও ঢের দেরি।
১৩ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস