বিনোদন ডেস্ক : ঠিক ১০০ বছরের ব্যবধান। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবদাস’ প্রকাশের শতবর্ষ উদ্যাপনের বছরেই মুক্তি পেতে চলেছে ‘দেবী’। এবার একেবারে রোল রিভার্সাল! ভেক বদলও বলা যেতে পারে। এখানে দেবদাস পুরুষচরিত্র নয়। মহিলা।
একশো বছর আগে এই চরিত্রে কোনও মহিলাকে ভাবা যেত না! কিছুদিন আগেও যেত কি? পরিচালক ঋক বসুর কথায়, ‘‘বোধহয় না। এতদিন এত পরিচালক ‘দেবদাস’ নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁরা তো কেউ দেবদাসের চরিত্রে মহিলাকে দেখেননি!’’
‘দেবদাস’ বরাবরই হট প্রপার্টি! শরৎচন্দ্রের রচনার পর এই ১০০ বছরে ১৬ বার দেবদাসকে নিয়ে ছবি হয়েছে। ঋক ১৭তম ইন্টারপ্রিটেশনে হাত িদয়েছেন। দিলীপ কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শাহরুখ খান থেকে অভয় দেওল সকলেই একবার করে জার্সিটা গায়ে চাপিয়েছেন। নবতম সংস্করণ পাওলি দাম। ঘটনাচক্রে একই গল্প দেখতে দর্শকও বার বার হল’এ ভিড় জমিয়েছেন। প্রত্যেকবার এক অভিনেতার সঙ্গে আরেক অভিনেতার তুলনা চলেছে। ইতিবাচক-নেতিবাচক যা-ই হোক না কেন, ‘দেবদাস’ সব সময় চর্চায় থেকেছে। হালফিলের ছেলেপিলেরা বাংলা সাহিত্যের আর কিছু না জানলেও ‘দেবদাস’ জানে! প্রেমে হাফসোল খাওয়া বন্ধুদের এখনও ওই নামেই ডাকা হয়! পাওলির মতে, ‘দেবদাস’এর আবেদন শুধু বাংলায় আটকে নেই। যে চরিত্রটা দিলীপ কুমার থেকে শাহরুখ খান করেছেন, সেটা করতে কেমন লেগেছে তাঁর? ‘‘বিখ্যাত অভিনেতাদের সঙ্গে আমার নাম কিন্তু জুড়ে গেল! আর আমি শাহরুখের ফ্যান। তাই চরিত্রের প্রস্তাব পাওয়ার পর দ্বিতীয়বার ভাবিনি,’’ বললেন পাওলি।
বিমল রায়ের ‘দেবদাস’ হোক কিংবা সঞ্জয় লীলা ভংসালীর, সকলেই শরৎচন্দ্রের ধারাবিবরণী অনুসরণ করেছেন। বেমালুম ধাক্কা দিয়েছিলেন অনুরাগ কাশ্যপ। ‘দেব ডি’তে। শরৎচন্দ্রের সময়কার আবেগকে এখনকার বারবিকিউ’তে সেঁকেছিলেন! ঋক নিজেই বলছেন, ‘দেব ডি’ই তাঁর অনুপ্রেরণা। ‘‘আধুনিক রিপ্রেজেন্টেশনটা ‘দেব ডি’ দেখেই মাথায় আসে,’’ বললেন পরিচালক। অনুরাগের ছবি দেখে অনেকে আঁতকে উঠেছিলেন। ঋকের ‘দেবী’ও বাঙালি দর্শকের কাছে একটা শক হতে পারে। পরিচালকের জবাব, ‘‘সব ছবি দেখে সকলে বাহবা দেবেন না জানি। অত ভাবলে তো নতুন কিছুই করা যাবে না।’’ দেবদাসের মতো করে বাকি চরিত্রগুলোতেও জেন্ডার রিভার্সাল হয়েছে। এখানে চুনীবাবু মহিলাচরিত্র। পার্বতী এবং চন্দ্রমুখী পুরুষ।
ছবিতে পাওলি বেশ একসেন্ট্রিক। তাঁর মেকআপ, পোশাক সবেতেই অনেক ড্রামা রেখেছেন পরিচালক। মূল গল্পের মেলোড্রামাকে খানিকটা অন্যভাবে পর্যবেক্ষণ করার মতো করে। পাওলি বলছিলেন, ‘‘ঋক বলেই দিয়েছিল, ছবিতে আমাকে সুন্দর দেখানোর কোনও চেষ্টা করবে না। আমার কাছে এই মেকআপ, সাজগোজ সবটাই একেবারে নতুন ছিল।’’ ঋক কিন্তু মনে করেন, দেবদাসের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো এখনকার মেয়েদের মধ্যে আকছার দেখতে পাওয়া যায়। তাই ‘দেবী’ করতে গিয়ে তিনি সেখানে একজন মেয়েকেই ভেবেছেন। সেইমতো ঋতর্ষি দত্ত চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন। ট্রেলার দেখে দেবীকে উগ্র মনে হতে পারে।
তবে ঋকের বয়ান, ‘‘একটা বাঙালিয়ানা আছে গল্পে। বাঙালি পরিবারের মেয়ে দেবী ব্যানার্জির গল্প। সেখানে কোথাও একটা ‘দেবদাস’এর সঙ্গে মিল আসছে। দেবী একটু খ্যাপাটে, একবগ্গা। ক্ষণে ক্ষণে মত বদলায়। পাবর্তীর উপর যে অধিকারবোধটা দেবদাসের ছিল, সেটা এখানেও আছে।’’ -এবেলা।
১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম