অশ্লীলতায় আবারও প্রশ্নবিদ্ধ বাংলা সিনেমা
বিনোদন ডেস্ক : বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে সঙ্গীত ও নৃত্যের ভূমিকা অপরিহার্য। তাই চলচ্চিত্রের সঙ্গে নৃত্য ও গানের ওতপ্রোত সম্পর্ক বিরাজমান রয়েছে। কিন্তু দেশীয় চলচ্চিত্রে অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শনের বিষয়টি দিনকে দিন বেড়েই চলছে। এ কারণে সপরিবারে ছবি দেখার অবস্থা নেই বললেই চলে।
চলচ্চিত্রের দর্শক বাড়ানোর জন্য ইদানীং প্রতিটি ছবিতে 'আইটেম গান' নামের অশ্লীল নৃত্য রুচিশীল দর্শককে হতাশ করছে।
ঢাকাই চলচ্চিত্রে একটা অশ্লীলতার যুগ ছিল। এ নিয়ে অনেক আন্দোলন ও সমালোচনাও হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ময়ূরী, মুনমুন, পলিসহ বেশ কয়েকজন অশ্লীল নৃত্যের নায়িকাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এরপর অশ্লীল নৃত্যের ধারাটা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসে। কিন্তু কিছুদিন ধরে 'আইটেম গান'-এর মধ্যদিয়ে আবারো চলচ্চিত্রে অশ্লীল নৃত্যের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে।
ইদানীং কোনো বাণিজ্যিক ছবিই অশ্লীল ধারার আইটেম গান ছাড়া নির্মিত হচ্ছে না। প্রযোজক-পরিবেশকদের ধারণা হয়ে দাঁড়িয়েছে, চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হলে আইটেম গান রাখতেই হবে। তা না হলে ছবি নাকি ব্যবসা সফল হবে না!
তাই নির্মাতারাও ব্যবসার কথা ভেবে চলচ্চিত্রে ধুমধাড়াক্কা আইটেম গানের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু এসব আইটেম গানের নামে অনেকেই নীরবে চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার চর্চা শুরু করেছেন।
কিছুদিন আগে শফিকুল ইসলাম পরিচালিত 'অচেনা হৃদয়' ছবির আইটেম গান নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। এতে আইটেম গার্ল হিসেবে নেচেছেন সাদিয়া আফরিন।
শুটিং স্পটে যারা এই নৃত্য দেখেছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ যেন নাচ নয়, আইটেম গানের নামে নায়িকার শরীর দেখানোই এর মূল উদ্দেশ্য ছিল। অশ্লীল নৃত্যের সঙ্গে এতে কুরুচিপূর্ণ গানের কথাও ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব গান রুচিশীল কোনো দর্শক মুখে উচ্চারণ করতেও লজ্জাবোধ করবেন। এ ধরনের আইটেম গানের ছবি একবার কোনো দর্শক সপরিবারে দেখলে, দ্বিতীয়বার আর হলমুখী হবেন না।
চলচ্চিত্রে এখন যারা এ ধরনের নৃত্য পরিবেশন করছেন তাদের 'আইটেম গার্ল' হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। বর্তমানে আইটেম গার্লদের মধ্যে জনপ্রিয়তার কাতারেও অনেকেই দাঁড়িয়ে গেছেন। এ তালিকায় রয়েছেন-নায়লা নাঈম, বিপাশা কবির, সাদিয়া আফরিন, শিরিন শিলা প্রমুখ।
অন্যদিকে, নায়িকাদের মধ্যে ববি, পরীমনি, অাঁচল, সিমলাসহ অনেকেই আইটেম গানের শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
এদের মধ্যে খোলামেলাভাবে নৃত্য পরিবেশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন নায়লা নাঈম। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত তন্ময় তানসেনের 'রানআউট' ছবিতেও তাকে একই স্টাইলে নৃত্য পরিবেশন করতে দেখা গেছে।
মূলত ২০১৩ সালে 'দেহরক্ষী' ছবির মধ্যে দিয়ে ঢাকাই ছবিতে 'আইটেম গান' নামের অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন শুরু হয়। 'হিটম্যান', 'ভালোবাসা সীমাহীন', 'কিস্তিমাত', 'রাজত্ব', 'আই ডোন্ট কেয়ার', 'দাবাং'সহ প্রভৃতি ছবির মাধ্যমে অশ্লীল নৃত্য মহামারী রূপে ছড়িয়ে পড়েছে।
দেশীয় চলচ্চিত্রে লাগামহীনভাবে আইটেম গান কেন ব্যবহার করা হচ্ছে, তা জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্মাতা বলেন, 'আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বাণিজ্যিক ছবিগুলোতে নিয়মিত আইটেম গান ব্যবহার করা হচ্ছে। এ দেশের সিংহভাগ দর্শকই ভারতীয় চলচ্চিত্র দেখেন। তাই এসব দর্শককে দেশীয় ছবি দেখতে আগ্রহী করার জন্য ঢাকাই ছবিতে আইটেম গান ব্যবহার করা হচ্ছে।'
ভারতের অনুকরণে প্রথম দিকে দেশীয় চলচ্চিত্রে রুচিশীল কিছু গান তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে এ আইটেম গান এখন অশ্লীলতার পর্যায়ে চলে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ের অধিকাংশ চলচ্চিত্রের আইটেম গানের নায়িকারা প্রায় নগ্ন অবস্থায় ক্যামেরার সামনে দাঁড়াচ্ছেন।
এমন কি সুস্থ বিনোদনমূলক চলচ্চিত্র নির্মাণের দাবিকারীরাও আইটেম গানের মাধ্যমে খোলামেলা দৃশ্যের আশ্রয় নিচ্ছেন। আইটেম গানে অভিনয় করার জন্য এমন কিছু অভিনেত্রীর আবির্ভাব ঘটেছে, যারা বিদেশের ডিস্কো কিংবা ক্যাবারে নর্তকীদেরও হার মানাচ্ছেন।
প্রযোজকদের চাহিদার কারণে অনেক সুস্থ ধারার পরিচালকও এ ধরনের নৃত্যের ছবি অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই সাম্প্রতিক সময়ের নৃত্যরূপী চলমান অশ্লীলতা রোধ করতে না পারলে এ শিল্পটি আবারো গভীর সংকটের মধ্যে পড়বে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। -যাযাদি
২০ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি
�