বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭, ০৭:৪৯:৩৩

গুলশানে তখন শিয়াল ডাকত

 গুলশানে তখন শিয়াল ডাকত

বিনোদন ডেস্ক: শৈশব কেটেছে তাঁর গেণ্ডারিয়ায়। তখনকার গেণ্ডারিয়া এতটা ঘিঞ্জি ছিল না। বসতি খুব কম। ছোট ছোট দোতলা বাড়ি। সেখানকার ছোট্ট এক বাড়িতেই বেড়ে উঠেছেন চম্পা। পড়াশোনা কিংবা খেলাধুলা—সবখানেই সঙ্গী ছিলেন দুই বোন সুচন্দা ও ববিতা। শৈশবের সেই যাপিত জীবন নিয়ে বলতে গিয়ে চম্পা বলেন, “বাবা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। রোজ সকালে অফিসে ছুটতেন। বিকেল গড়ালেই আমরা বাবার জন্য অপেক্ষায় থাকতাম। বাবা রোজই কিছু না কিছু নিয়ে আসতেন। খাবারগুলো মজার ছিল। তার চেয়েও মজার ছিল বাবার হাত থেকে নেওয়ার আনন্দ। বাবা বেশ রগচটা মানুষ ছিলেন। ছেলে-মেয়েদের কড়া শাসনে রাখতেন। বাবার ঘোষণা, ‘দিনভর খেলাধুলা করলেও মাগরিবের আজানের পর পড়তে বসতে হবে। ’ ভাই-বোন সন্ধ্যায় পাটি বিছিয়ে পড়তে বসতাম। পড়ার মাঝে খুনসুটিও চলত। ওয়ারী কিন্ডারগার্টেন থেকে আমি নার্সারি শেষ করেছি। স্কুলে যাওয়ার পথে মা হাতে কিছু পয়সা ধরিয়ে দিতেন। এটা-ওটা কিনে খেতাম। স্কুল থেকে ফেরার পর বাড়ির পাশের মাঠে লুকোচুরি, এক্কাদোক্কা খেলা চলত। কাপড় দিয়ে নিজেই পুতুল বানাতাম, বিয়েও দিতাম। সপ্তাহে এক দিন রবিবার ছিল ছুটির দিন। তখন শুক্রবার ছুটির চল ছিল না। সেই দিনটির জন্য মুখিয়ে থাকতাম। ওই একটা দিনই সারা দিন বাবাকে কাছে পেতাম আমরা। বাসায় সাংস্কৃতিক আসর বসত। যে যা পারি, সেটাই করে দেখাতাম। বাবা খুব ভালো অ্যাক্টিং করতেন। কবিতা আবৃত্তি করতেন। আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। কখনো কখনো বাইরে নিয়ে যেতেন। বাবার মাছ শিকারের শখ ছিল। নৌকায় করে মাছ ধরেছি। ”

বছরে একবার ধূপখোলা মাঠে মেলা বসত। ভাই-বোনরা মিলে মেলায় যেতেন। নাগরদোলায় চড়তেন। কাগজের কুমির, টমটম কিনে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতেন। ‘হাতে কিছু পয়সা জমলে লোহারপুলে লাচ্ছি খেতাম। সকালে ফেরিওয়ালা মাঠা নিয়ে আসত। মাঠা খেতাম। শীতকালে রস আসত। কুলফি বরফ খেতাম। ’—যোগ করলেন তিনি। বললেন, ‘তখনকার প্রতিটি বাড়িতে ফুলের বাগান থাকত। শিউলি ফুলের গন্ধ ম-ম করত। তিন টাকায় মুরগি পাওয়া যেত তখন। লাচ্ছি এক গ্লাস চার আনা ছিল। স্কুলে ক্লাসের ফাঁকে নারিকেল খেতাম। ফালি করে কেটে কাসুন্দি দিত দুই পয়সায়। ’

শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে সেই বাসাটা ছেড়ে বনানী-গুলশান এলাকায় চলে আসেন তাঁরা। সেই সময়ের গুলশানটা আজকের মতো ছিল না। ‘গুলশানে তখন শিয়াল ডাকত। এই এলাকা ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। একদিন তো বাসায় সাপ ঢুকেছিল। ভাইয়ের কোলের ওপর সাপ উঠেছিল। ঘুম ঘুম চোখে নিজের কোলে সাপ দেখে তো চিত্কার! সাপকে আঁচড়ে ফেলে দিয়ে দৌড়। পরে ববিতা আপার সিনেমায় যে সাপুড়ে সাপ সাপ্লাই দিতেন, তাঁকে ডাকা হলো। তিনি এসে সাপটা ধরে নিয়ে যান। তিনি পরে নাকি সেই সাপটা নিয়ে খেলা দেখাতেন। ’

মাঝে গুলশান-বনানী এলাকায় একবার বন্যা নেমেছিল। চারদিকে থইথই পানি। গুলশান থেকে নৌকায় বনানীতে সুচন্দার বাসায় গিয়েছিলেন চম্পা। ‘বড় আপার উঠানে বসেই ছিপ দিয়ে মাছ ধরেছি। বড় আপার হাতের রান্না ছিল দারুণ। তিন বোন একসঙ্গে হলেই পিকনিক হতো। মাটির চুলায় রান্না খেতাম। ’

সেই স্মৃতিবহুল ঢাকার এখনকার রূপ তাঁকে ব্যথিত করে। তাঁর কাছে এই ঢাকা খুব কষ্টের ঢাকা। ‘বাড়ি থেকে বের হতে হবে শুনলে গায়ে জ্বর আসে। কয়েক মিনিট হয়ে গেছে কয়েক ঘণ্টা। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য আরো বেশি কষ্টের। কয়েক দিন আগে চন্দ্রার এক দাওয়াত থেকে ফিরছিলাম। চন্দ্রা থেকে ঢাকায় আসতে ছয় ঘণ্টা লেগেছে। বাসায় পৌঁছে ভাবলাম, ভাগ্যিস আমরা সুস্থ আছি। আগের ঢাকা পরিষ্কার লাগত। স্নিগ্ধ লাগত। এখন তো গ্যাঞ্জাম আর নোংরা। আকাশ দেখার উপায় নেই। শুধু তার আর তার—ডিশের তার, বিদ্যুতের তার। ’

সঙ্গে যোগ হলো আরেকটু আক্ষেপ, ভবন নির্মাণের সময় একফোঁটা জমি ছাড়ছে না কেউ। দেয়ালে দেয়ালে লাগছে। রাস্তার গঠনটা উল্টাপাল্টা। ফুটপাতে প্রচুর দোকান। সেগুলো খালি করা দরকার। আর রাস্তার দ্বীপে ফুলের গাছ লাগাতে হবে। সুন্দরও দেখাবে আবার পরিবেশও ঠিক থাকবে। পাশাপাশি নগরের পাবলিক টয়লেটগুলো সবার ব্যবহারের উপযোগী রাখতে হবে। যানবাহনগুলোর প্রতিও নজরদারি রাখা উচিত। বিশেষ করে ঢাকায় অতিরিক্ত রিকশা রয়েছে। যতটুকু দরকার ততটুকুই রাখতে হবে।
এমটিনিউজ২৪/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে