বিনোদন ডেস্ক : কখনো নামকরা ব্যারিস্টার, কখনো ডাকসাইটে উকিল কিংবা ব্যবসায়ী আবার কখনো গ্রামের চেয়ারম্যান, মেম্বার বা মাতব্বর আবার কখনো পুলিশের বড় কর্মকর্তা- একজন অভিনেতা হিসেবে এ সব ধরনের চরিত্রেই তিনি অতুলনীয়। দেশের মঞ্চ, টিভি ও রেডিও নাটক এবং চলচ্চিত্র মাতিয়েছেন প্রায় পাঁচ দশক। তিনি আরিফুল হক। খ্যাতিমান অভিনেতা।
একযুগেরও বেশি সময় ধরে স্থায়ীভাবে কানাডায় বসবাস করছেন অভিনয় জগতের জীবন্ত এ কিংবদন্তি। আরিফুল হক তার অভিনয় প্রতিভা দিয়ে এদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে করেছেন সমৃদ্ধ। জীবনের প্রয়োজনেই তিনি ২০০০ সালে সপরিবারে কানাডায় স্থায়ী হন। মাঝে-মধ্যে দেশে বেড়াতে আসেন। গত বছরের ১৫ই নভেম্বর সর্বশেষ তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। এ আসা অল্প কয়েকদিনের জন্য ছিল বলে সেসময় কোনো নাটক বা চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ তার হয়নি।
তবে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র একটি পর্বে পারফর্ম করে গেছেন। যা গেল বছরের ৩০শে ডিসেম্বর প্রচার হয়। ৮৬ বছরের পথচলায় মনের দিক থেকে এখনো সতেজতায় পূর্ণ একজন মানুষ তিনি। বরাবরের মতোই সদা হাস্যোজ্জ্বল, বিনয়ী এবং নিরহংকারী। নিজেকে এমন একই রকম ভাবে ধরে রাখার ম্যাজিক সম্পর্কে মুঠোফোনে কানাডা থেকে আরিফুল হক বলেন, এটা সম্ভব হয়েছে আসলে আত্মনিয়ন্ত্রণ আর সবসময় নিজেকে এমনই রাখার চেষ্টায় ডুবে থাকি বলে। মাঝে-মধ্যে দেশে এলেও বসবাস আপনার এখন কানাডাতেই।
কেমন আছেন সেখানে? আরিফুল হক বলেন, আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি। স্ত্রী, পুত্র-কন্যা আর নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সুখেই কেটে যাচ্ছে দিন। তবে প্রবাসে থাকলেও আমার মন পড়ে থাকে বাংলাদেশেই। তাই প্রতি মুহূর্তে দেশ, দেশের মাটি, মানুষকে খুব মিস করি। মুঠোফোনে কথা বলার সময় আবেগাপ্লুত আরিফুল হকের কণ্ঠে এভাবেই দেশের প্রতি, দেশের শিল্প সংস্কৃতির প্রতি মায়া আর মমতার ছাপ পাওয়া যায়।
কানাডায় কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বয়স বেড়ে যাচ্ছে। তাই এখন আর আগের মতো সেভাবে সম্ভব হয় না। আবার দেশে আসছেন কবে? এ প্রশ্নের উত্তরে বিশিষ্ট এ অভিনেতা বলেন, খুব সহসাই হয়তো আসা হবে না। তবে চেষ্টা থাকবে যত তাড়াতাড়ি পারি দেশে যাওয়ার। একটা সময় এদেশের মঞ্চ, রেডিও, টিভি নাটক, চলচ্চিত্রে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে অভিনয় করেছিলেন এ বিশিষ্টজন। তিনি এমনই একজন অভিনেতা যিনি অভিনয়কে ভালোবেসে একসময় চাকরি ছেড়ে নিজেকে পেশাজীবী অভিনেতা হিসেবেই গড়ে তোলেন।
প্রথম জীবনে একজন সংগীতশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়েছিলেন আরিফুল হক। তাই সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি তিনি কলকাতার দক্ষিণী সংগীত বিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্রসংগীতের ওপর চার বছরের ডিপ্লোমা কোর্সও সম্পন্ন করেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় চলে আসেন। এখানে এসেও স্বপ্ন ছিল নিজেকে সংগীতশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার। কিন্তু অডিশন দেয়ার পর নানা জটিলতার কারণে তা আর হয়নি। একসময় টেলিভিশনে অভিনয়ে সুযোগ আসে তার। আতিকুল হক চৌধুরীর নির্দেশনায় একুশে ফেব্রুয়ারির একটি নাটকে অভিনয়ের পর দর্শকের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পান তিনি।
এরপর আর গানে ফেরা সম্ভব হয়নি। অভিনয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর এ ব্যস্ততা টিভি, মঞ্চ বা রেডিও নাটকের চেয়ে চলচ্চিত্রেই বেশি ছিল। উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘উত্তরায়ণ’ চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন তিনি। এটি নির্মাণ করেছিলেন বিভূতি লাহা। এদেশে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হচ্ছে ‘লালন ফকির’, ‘সারেং বউ’, ‘বড় বাড়ির মেয়ে’, ‘সূর্য কন্যা’, ‘সুন্দরী’, ‘সখি তুমি কার’, ‘কথা দিলাম’, ‘নতুন বউ’, ‘এখনই সময়’, ‘পিতা মাতা সন্তান’, ‘তোমাকে চাই’ ‘দেশপ্রেমিক’, ‘ঘৃণা’, ‘স্বপ্নের নায়ক’ ইত্যাদি।
গুণী এই চলচ্চিত্রাভিনেতা সর্বশেষ এ কে এম ফিরোজ বাবু পরিচালিত ‘প্রেম বিষাদ’ এবং প্রয়াত খালিদ মাহমুদ মিঠু পরিচালিত ‘গহীনে শব্দ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। আরিফুল হক অনেক চলচ্চিত্র এবং টিভি নাটকে অভিনয় করলেও এ মাধ্যম দুটিতে নির্দেশনা দেয়া হয়ে ওঠেনি তার।
এ প্রসঙ্গে বলেন, চলচ্চিত্র কিংবা টিভি নাটকে না হলেও ভারত এবং বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি মঞ্চ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছি আমি। ঢাকার মঞ্চে ‘থিয়েটার আরামবাগ’ নাট্যদল থেকে আমি ‘জমিদার দর্পণ’, ‘ক্ষত বিক্ষত’ নাটকের যেমন নির্দেশনা দিয়েছি ঠিক তেমনি ভারতে শরৎচন্দ্রের ‘মহেষ’ আমার নাট্যরূপ এবং নির্দেশনায় বহুবার মঞ্চস্থ হয়েছে। এমজমিন
০৭ এপ্রিল ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি