সোমবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৭, ০৯:২১:৫৬

সময় এলে ভারতীয়রাও আমায় ঠিক চিনবেন

সময় এলে ভারতীয়রাও আমায় ঠিক চিনবেন

বিনোদন ডেস্ক: রৌরকেল্লা থেকে আমেরিকা পাড়ি দিয়েছিলেন অর্থনীতি নিয়ে পড়বেন বলে। কিন্তু ভাগ্য তাঁকে নিউ ইয়র্কের ফ্যাশন হাউসগুলোর রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছিল। নিজের লেবেল লঞ্চ করার পর থেকে তাঁর ক্লায়েন্ট লিস্ট ধীরে ধীরে ভরে ওঠে প্রথম সারির হলিউড সেলেবদের নামে। অচিরেই সেখানে যোগ হয় আমেরিকার প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার নামও!

বহু বছর দেশের বাইরে থাকলেও আদপে তিনি পাক্কা দেশি! তাই দেশের কোনও ব্র্যান্ডের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করার ইচ্ছে ছিল তাঁর অনেক দিনেরই। অবশেষে সেটা সম্ভব হয় ‘ফরএভারমার্ক’এর মাধ্যমে। ‘সাওয়ানসুখ’ এবং ‘ফরএভারমার্ক’এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি বাজারে নিয়ে এলেন ‘আর্টেমিস’ কালেকশন। কলকাতা লঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত ডিজাইনার।

কলকাতা শুনলেই প্রথম কী মনে হয় আপনার?
বিরিয়ানি! কলকাতার বিরিয়ানি আমার খুব প্রিয় (হাসি...)। তবে এই শহরটা সত্যিই সুন্দর। তার কারণ অবশ্য এই শহরের মানুষ। এখানকার বাতাসে ইতিহাসের গন্ধ পাওয়া যায়। যেটা মন মাতিয়ে রাখে।

রৌরকেল্লায় বড় হয়েছেন। এখানে কোনও আত্মীয় থাকেন নাকি?
বেশ কয়েকজন আত্মীয়ের বাড়ি এখানে। তবে আমার ছোটবেলার বেস্ট ফ্রেন্ড রানা রায়ও এখানে থাকে। রৌরকেল্লায় আমরা একসঙ্গে বড় হয়েছি। গত ২৫ ধরে ও এখানেই থাকে। গতবার এসে ওর সঙ্গেই ছিলাম। সারা রাত ও আমায় গাড়িতে ঘুরিয়েছিল। শহরের এমন কোনও প্রান্ত নেই, যেখানে আমরা যাইনি!

বাঙালিদের সঙ্গে তাহলে ভালই যোগাযোগ রয়েছে আপনার?
থাকবে না! বাবা শিবপুরের ছাত্র ছিলেন। ছোটবেলায়ও আমরা বাবার সঙ্গে অনেকবার কলকাতা এসেছি। তাছাড়া রৌরকেল্লায় আমাদের অনেক প্রতিবেশীই বাঙালি ছিলেন। ওড়িয়া আর বাঙালিদের মধ্যে এমনিই অনেক মিল। বিশেষ করে খাদ্যাভ্যাসে। মাছের ঝোল আমাদের খুব প্রিয়!

ছোট থেকেই কি ফ্যাশনের দিকে আপনার ঝোঁক ছিল?
সত্তর কিংবা আশির দশকের রৌরকেল্লাটা এখনকার চেয়ে অনেকটাই আলাদা ছিল। ফ্যাশন নিয়ে এত আলোচনা তখন হতো না। তবে খবরের কাগজের মাধ্যমে যেটুকু জানতে পারতাম, পড়তে ভালই লাগত। ফ্যাশন নিয়ে সিরিয়াসলি কোনওদিনই ভাবিনি। যখন ১৪-১৫ বছর বয়স, আমার বোনের জন্যে মাঝে মাঝে কিছু পোশাক তৈরি করে দিতাম। তা-ও কখনও মনে হয়নি আমি ডিজাইনার হব। ছাত্র হিসেবে খুবই সিরিয়াস ছিলাম। তাই স্কুল শেষ করে আমেরিকায় চলে গিয়েছিলাম অর্থনীতি নিয়ে পড়ব বলে।

সেখানে থেকে নিউ ইয়র্ক কী করে পৌঁছলেন?
আমার মেজরের এক প্রফেসর আমার স্কেচবুকটা দেখে ফেলেছিলেন। তিনিই বলেছিলেন উটা নয়, আমার জায়গা নিউ ইয়র্কে! আমায় বেশ কিছু ফ্যাশন স্কুলের ব্রশিওর দেন। সেগুলো দেখে প্রস্তুতি শুরু করি। পরীক্ষায় বসে চান্সও পেয়ে যাই। তারপর ফ্যাশন স্টুডেন্ট হিসেবে আমার সফর শুরু হয়। ক্লাস করতাম, পাশাপাশি নানা রকম পার্ট টাইম কাজ করতাম। আর নিউ ইয়র্কের ফ্যাশন হাউসগুলোয় গিয়ে নিজের পোর্টফোলিও জমা দিয়ে আসতাম। সেভাবেই প্রথম কাজটা পেয়েছিলাম।

আপনার বাবা-মায়ের কী প্রতিক্রিয়া ছিল?
আমার জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে বাবা মায়ের আশীর্বাদ পেয়েছি। কোনও সিদ্ধান্তেই তাঁরা বাধা দেননি। বিশেষ করে আমার বোন, আমার জীবনের বড় অনুপ্রেরণা। ও অনেক সময় আমায় সাহায্যও করেছে। তাই এবার কলকাতায় জুয়েলারি লাইনের লঞ্চেও ও থাকছে আমার সঙ্গে।

গয়না ডিজাইন করার পরিকল্পনা কি শুরু থেকেই ছিল আপনার?
ইচ্ছে ছিল অনেকদিনই। তবে আমার লেবেলের সঙ্গে ফরএভার মার্ক’এর ভাবনা মেলে। তাই এই কোলাবরেশনটা সম্ভব হয়েছে। হিরের ক্ল্যারিটির জন্য এগুলো নিয়ে কাজ করার সুবিধে হয়েছে। এমন একটা কালেকশন তৈরি করতে চেয়েছিলাম, যেগুলো কমবয়সিরা সহজেই পরতে পারবে। সারা বছর আলমারিতে তুলে রাখতে হবে না।

গয়নার প্রতি উৎসাহ তৈরি হল কী করে?
মায়ের কাছে কয়েকটা ভিনটেজ গয়না দেখেছিলাম। সেগুলো পারিবারিক সূত্রে পাওয়া। মা পরতেন না কখনও। কিন্তু গল্প শুনতাম। গয়না এমন একটা জিনিস, যেটা এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে হাতবদল হয়। আর সঙ্গে অনেক গল্পও গড়ে ওঠে।

গোয়েনেথ প্যালট্রো থেকে জেনিফার লোপেজ, আপনার ক্লায়েন্ট লিস্ট জমজমাট। কোনও ক্লায়েন্টের জন্য ডিজাইন করার আগে কোন জিনিসটা মাথায় রাখেন?
চেষ্টা করি আমার ডিজাইন করা পোশাক পরে মানুষটা যেন বদলে না যায়! প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিত্বে একটা জোরের জায়গা থাকে। সেগুলো আমি বার করে আনার চেষ্টা করি।

আপনার প্রায় সব কালেকশনেই বেশ একটা ফিল-গুড ব্যাপার থাকে...।
জীবনের ইতিবাচক দিকগুলো আমি খুঁজে বার করার চেষ্টা করি। নিজে খুশি না থাকলে মন দিয়ে কাজ করতে পারব না। আর খুশি থাকলে সেটা ডিজাইনে ফুটে উঠবেই।

মিশেল ওবামা আপনার পোশাক পরে ভারতে আসার পর এখানকার লোকে আপনার নাম আরও ভালভাবে জানল। অথচ আমেরিকায় আপনার জনপ্রিয়তা বহুদিনের। নিজের দেশে পরিচিতি এত কম বলে খারাপ লাগে না?
একদমই না। খারাপ লেগে কী হবে! আমি জানি, বাস্তবটা কী। যখন সময় আসবে লোকে আমায় ঠিক চিনবে। আমার কাজের জন্যেই। আগে থেকে আমি দাবি করতে পারি না যে আমায় চিনতেই হবে! কী আর এমন করি বলুন! কারও প্রাণ তো বাঁচাতে পারিনি এখনও। সেটা যখন পারব, তখন কেউ নাম না জানলে হয়তো কষ্ট হবে। তবে আমি অন্যদের জীবন একটু হলেও ভাল করার চেষ্টা করি। আই এমপাওয়ার উইমেন থ্রু মাই ক্লোদস।

ভারতীয় ফ্যাশন কতটা ফলো করেন?
মোটামুটি। তরুণ তাহিলিয়ানি, রাজেশ প্রতাপ সিংহ, শান্তনু অ্যান্ড নিখিল খুব ভাল লাগে। আর সব্যসাচী (মুখোপাধ্যায়) তো বটেই!

বলিউড তো আপনার জন্যে পাগল! আপনার কাকে ভাল লাগে?
মাধুরী দীক্ষিত ইদানীং স্টাইল নিয়ে খুব এক্সপেরিমেন্ট করছেন। বেশ ভাল লাগছে। তবে আমার সবচেয়ে ভাল লাগে দীপিকাকে (পাড়ুকোন)।

কোন ভারতীয়কে আপনার পোশাকে দেখতে চান?
কাকে ছেড়ে কার নাম বলি! অরুন্ধতী রায়ের সঙ্গে কাজ করতে পারলে খুব ভাল লাগবে। তবে আমার স্বপ্নের নারী রেখা। ওঁর সঙ্গে কাজ করার চ্যালেঞ্জটা নিতে পারলে দারুণ হতো!-এবেলা
২৪ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে