শুক্রবার, ১৯ মে, ২০১৭, ০২:৩০:০০

বাপের জোরে যে চলে, তার এত বড় কথা মানায় না: বদিউল আলম খোকন

 বাপের জোরে যে চলে, তার এত বড় কথা মানায় না: বদিউল আলম খোকন

সৈয়দ নূর-ই- আলম : বদিউল আলম খোকন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব। সম্প্রতি চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিকে হেয় করে কথা বলার অভিযোগ এনে পরিচালক ও চিত্রনায়ক বাপ্পারাজকে কারণ দর্শনোর নোটিশ পাঠিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে সাক্ষাৎকার দেন বাপ্পারাজ। তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ও বদিউল আলম খোকনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনেছেন। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে এফডিসিতে কথা হলো বদিউল আলম খোকনের সঙ্গে।

বাপ্পারাজকে দেওয়া নোটিশের বক্তব্য কী ছিল?

চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৪ মে বাপ্পারাজকে ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ব্যাপারটা স্পষ্ট যে, শাকিব খান সংক্রান্ত কোনো বিষয় নয়। বাপ্পা শাকিবের পক্ষে না বিপক্ষে, সেটা আমাদের কাছে বিবেচ্য নয়। পত্রিকায় তিনি বলেছেন, ‘কার্যকর পরিষদে কী হয়, তা আমি ভালো করেই জানি। এখানে কাজের কাজ কিছুই হয় না।’—তার এই মন্তব্যের ব্যাখা চাওয়া হয়েছে। নয়তো সাধারণ সদস্যরা ভাববে নির্বাচন করে যাদের তারা সমিতির চেয়ারে বসিয়েছেন, তারা কিছুই করছে না। ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েই ব্যস্ত।

এখানে শাকিব খানের প্রসঙ্গ আসছে কেন?

চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি শাকিব খানকে বয়কট করার পর বাপ্পারাজ এই বক্তব্য দিয়েছেন। শাকিবকে নিয়ে আমাদের তো কোনো বক্তব্য নেই, সে একটি ভুল করেছিল, তার জন্য ক্ষমাও চেয়েছে। আমরা মাফ করে দিয়েছি। বিষয়টা সেখানেই শেষ। তারপরও বাপ্পা বিষয়টা তুলে ধরার চেষ্টা করছে। এটা তার ঠিক হচ্ছে না।

বাপ্পারাজকে যে নোটিশ পাঠিয়েছেন, তার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে?

নোটিশে তাকে ৭ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সে যদি জবাব দেয় এবং এই জবাব যদি এক্সিকিউটিভ কমিটি সঠিক মনে করে, তাহলে সিদ্ধান্ত সেভাবেই হবে। আর যদি মনে করে তার জবাব সঠিক হয়নি তাহলে সমিতির সংবিধান অনুয়ায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেটা বাপ্পারাজ ভালো করেই জানে। এখানে আমার ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নেই।

আপনি আর্থিক অনিয়ম করছেন— এমন অভিযোগ করেছেন বাপ্পারাজ।

 আমার ব্যাপারে বাপ্পারাজ সার্টিফিকেট দিলে কিছু যায় আসে না, না দিলেও কিছু যায় আসে না। আর আমার আমি কিংবা সভাপতি কেউ টাকা আদায়ের দায়িত্বে থাকি না। আমাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করে কোনো লাভ হবে না।

চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন তিনি।

বাপ্পারাজ সদস্য হয়েছেন ২০১০ সালে আর সদস্য ফি দিয়েছেন তার চার বছর পর। নিয়ম কিন্তু ফি’র টাকা সাথে সাথে দেওয়া। তিনি যদি সৎ হন, তাহলে সাথে সাথে কেন মেম্বারশীপের টাকাটা দিলেন না। অর্থ সম্পাদকের মাধ্যমে এখানে অর্থ আদায় করা হয় সদস্যদের কাছ থেকে। প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর নিরীক্ষকের মাধ্যমে হিসাব করা হয় আয়-ব্যায়ের। প্রতি বছর সমিতির পুনঃরেজিষ্ট্রেশন করতে এসব হিসাবপত্র জমা দিতে হয়। তাহলে আর্থিক অনিয়ম কোথায় হলো। গত কমিটিতে তিনি একটা মিটিংয়েও অংশ নেন নাই। শুধু দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর বদান্যতায় বাপ্পারাজ এক বছর কমিটিতে ছিলেন। তা না হলে তিনি যখন তিন মিটিংয়ে আসেননি, তখনই তার নির্বাহী সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও তিনি আসেননি। সেই লোকের আবার বড় বড় কথা।

পরিচালকদের কাছ থেকে সদস্য ফি নেওয়ার পর সমিতি তাদের ব্যাপারে আর কোনো দায়িত্ব পালন করে না। কেন?

এমন অনেক মানুষ আছেন যারা পেশার অপব্যবহার করে, দুর্নীতি করছে। তাই বলে সেই পেশার সংগঠন কি তাদের নিয়ন্ত্রণ করছে? আমি যদি বলি সমিতির নিয়ম অনুয়ায়ী বাপ্পারাজই সদস্যপদ পায় না। রাজ্জাক সাহেবের ছেলে বলে বাপ্পারাজের প্রতি সম্মান দেখিয়েছি।

পরিচালক হিসেবে বাপ্পারাজের কোনো যোগ্যতা নেই?

আমাদের পরিচালক সমিতির নিয়ম অনুযায়ী ডিগ্রি পাশের পর সদস্য হতে পারবে নিজের তৈরি ছবি দেখিয়ে। কিন্তু বাপ্পারাজ তো উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। যোগ্যতা বিচার করলে বাপ্পারাজ মেম্বার হতে পারেন না। এখানে অনেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে সদস্য হয়েছি। আমাদের যোগ্যতা নেই কথাটা বাপ্পারাজের মুখে মানায় না। বরং চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি বলবে, বাপ্পারাজ পরিচালক সমিতির সদস্য হিসেবে অযোগ্য।

অযোগ্য হলে তাকে সদস্য করলেন কেন?

তিনি যখন সদস্য হন, আমি তো তখন মহাসচিব ছিলাম না। আর রাজ্জাক সাহেবের ছেলে বলে তাকে সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। এটা সে সময়ের নির্বাহী কমিটির সবার ঐক্যমতে হয়েছে।

জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কোনো সংগঠনের অফিস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আপনারা এখানে কীভাবে সংগঠনের কার্যক্রম চালাচ্ছেন?

বুঝেছি, বাপ্পারাজ বলেছেন। এটা তার মুখে শোভা পায় না। আর যাক সরকারের কাছে। দেখুক সরকার তাকে মূল্যায়ন করে কিনা।

বাপ্পারাজ কিন্তু বিকল্প সমিতি গঠনের কথা বলেছেন।

করুক। সে বিকল্প ভাবলে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। বিকল্প অনেকেই অনেক কিছু করেছে, কিছুই হয়নি শেষ পর্যন্ত। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি এখন আর ছোট কোনো সংগঠন নয়। এক বাপ্পারাজ চলে গেলে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির কিছুই যাবে আসবে না।

পরিচালক সমিতিকে অথর্ব সমিতি আর এখানে এসে সবাই খাওয়া দাওয়া করে, বিকালে ১০০ টাকা নিয়ে চলে যায়। বাপ্পরাজের এমন অভিযোগের ব্যাপারে কী বলবেন?

এক্সিকিউটিভ মিটিং ছাড়া এখানে কোনো খাওয়া দাওয়া হয় না। তিনি গুলশানে থাকেন। তিনি এর কিছুই জানেন না। উনি অথর্ব বলেছেন সমিতিকে। অথচ সমিতিকে কার্যকর করতে তিনি যে কমিটির নির্বাহী সদস্য ছিলেন, সে মিটিংগুলোতে তো আসেননি। এমনকি বর্তমান কমিটি হওয়ার পর ৬ মাস অন্তর অন্তর যে মিটিং হয়, সেখানেও সদস্য হিসেবেও আসেননি তিনি। তাহলে তিনি কী করে অথর্ব বলেন সমিতিকে? বাপের জোরে যে চলে, তার মুখে এত বড় বড় কথা মানায় না। নিজের জোরে চললে বাপ্পারাজের কথাগুলো শুনতে সুন্দর লাগত। বাপ্পারাজ তো এবার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। পাশ তো করেননি। অনেক বড় শিল্পী বাপ্পারাজ। অথচ একদম সাধারণ শিল্পী পাশ করলেও তিনি কিন্তু পাশ করেননি। আমরা আমাদের যোগ্যতা দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি, বাপের যোগ্যতায় নয়।-চ্যানেল আই
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে