সোমবার, ০৫ জুন, ২০১৭, ০২:১০:৩৩

‘তুমি সত্যিই চলে গেছ?’

‘তুমি সত্যিই চলে গেছ?’

সৈয়দ নূর-ই- আলম: তুমি সত্যিই চলে গেছ ….বিশ্বাস হয় না। আজম খান মারা যাওয়ার পর কথাটি বলেছিলেন তার প্রথম ব্যান্ড ‘উচ্চারণ’–এর সহকর্মী প্রয়াত লাকী আখান্দ। আসলেই তিনি চলে গেছেন সবাইকে ছেড়ে। কিন্তু তার বন্ধু বিশ্বাস করতে চাননি। কেন চাইবেন? একসঙ্গে কতটি বছর গান গেয়েছেন তারা। সত্তরের দশকে বাংলাদেশের গানের রেনেসাঁর যুগে আজম খান ছিলেন অগ্রগামী যোদ্ধা। ৪০ বছরেরও বেশি সময় গানে গানে রাজত্ব করেছেন শ্রোতাদের মধ্যে। তারপর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগীতশিল্পী আজম খান ২০১১ সালের ৫ জুন চলে যান না ফেরার দেশে। আজ আজম খানের মৃত্যুবার্ষিকী।

আজম খানের পুরো নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান।  ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আজিমপুরে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে আজম খান ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য হিসেবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসঙ্গীত প্রচার করেন। সচিবালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাবা আফতাব উদ্দিন খানের অনুপ্রেরণায় যুদ্ধে যাবার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

একটি সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে যুদ্ধে যোগ দেয়ার ঘটনা তিনি বর্ননা করেছেন এভাবে, আম্মাকে বললাম, আমি যুদ্ধে যাচ্ছি। আম্মা বললেন, যুদ্ধে যাবি, ভাল কথা, তোর আব্বাকে বলে যা। আব্বা ছিলেন সরকারি চাকুরে। ভয়ে ভয়ে তাকে বলালাম, যুদ্ধে যাচ্ছি। উনি বললেন, যাবি যা, তবে দেশ স্বাধীন না করে ফিরবি না! তার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। একটা সালাম দিয়ে যুদ্ধে যাই। তখন আমার বয়স ২১ বছর। সেক্টর ২ এ খালেদ মোশাররফের অধীনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি।

দেশ স্বাধীন করে বীরের বেশে ঘরে ফিরলেন আজম খান। গানই তার একমাত্র নেশা হয়ে যায়। নিজে গান তৈরি করেন, নিজেই সুর করেন, নিজেই কন্ঠ দেন। কিছু বন্ধু বান্ধব নিয়ে একটা গানের দলও করে ফেলেন তিনি। ১৯৭২ সালে লাকি আখান্দ ও হ্যাপি আখান্দ এই দুই ভাইকে নিয়ে ‘উচ্চারণ’ নামের ব্যান্ড গঠন করেন।

এর মধ্য দিয়ে পপসংগীতের পথে তার যাত্রা শুরু হয়। শুরু হয় পপসংগীতের চর্চা। সে বছরই বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে নারে’ ও ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুটি আলোড়ন তৈরি করে। এরপর ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’, ‘আসি আসি বলে তুমি আর এলে না’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘হারিয়ে গেছে খুঁজে পাব না’ এ গানগুলো গেয়ে শ্রোতাদের হৃদয় দখল করেন তিনি।

এছাড়াও তার রয়েছে ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘জীবনে কিছু পাব না’, ‘পাপড়ি কেন বোঝে না’, ‘সাঁইজি’, ‘সব মানুষই সাদা-কালো’, ‘এমনি চলে যাব’সহ আরও অনেক শ্রোতাপ্রিয় গান। ১৯৮২ সালে ‘এক যুগ’ শিরোনামে আজম খানের প্রথম অডিও ক্যাসেট প্রকাশিত হয়। সব মিলিয়ে তার গানের অ্যালবাম ১৭টি।

১৯৮৬ সালে ‘কালা বাউল’ নামে একটি নাটকে কালা বাউলের চরিত্রে এবং ২০০৩ সালে ‘গডফাদার’ চলচ্চিত্রে নামভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ক্রিকেটার আজম খান হিসেবে তার আরেকটি পরিচয়ও ছিল। গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের হয়ে তিনি প্রথম বিভাগে ক্রিকেট খেলেছেন।

বর্ণাঢ্য জীবনে অনেকবার পুরস্কৃত হয়েছেন পপগুরু আজম খান। এর মধ্যে হলিউড থেকে ডিসকো রেকর্ডিংয়ের সৌজন্যে ১৯৯৩ সালে বেস্ট পপ সিংগার অ্যাওয়ার্ড ও টেলিভিশন দর্শক পুরস্কার ২০০২ অন্যতম।

দেশিয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুরস্কৃত এই গুণী ব্যক্তি শেষজীবনে অনেকটা নিভৃতেই সময় কাটাতেন। কেন কাটাতেন, তার সঠিক উত্তর তিনি নিজেও দেননি। চ্যানেল আই অনলাইনের পক্ষ থেকে এই কিংবদন্তির প্রয়াণদিবসে রইল শ্রদ্ধাঞ্জলী।-চ্যানেল আই
এমটিনিউজ২৪/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে