কামরুজ্জামান মিলু : মাঝে বন্ধ ছিল অনেকদিন। শুরু হয়েছে ফের। রাজধানীর বিভিন্ন সিনেমা হলে চলছে অশ্লীল ছবির প্রদর্শন। তাও আবার সিয়াম সাধনার মাস রমজানে। অনেকে মনে করেন রমজানে সিনেমা হলে রুচিসম্মত ছবিই চালানো উচিত।
এসবের মধ্যে ফার্মগেটের ছন্দ সিনেমা হলে ‘নয়া কসাই’, মিরপুরের এশিয়া সিনেমা হলে ‘ডাকুরানী’, গাবতলীর পর্বত সিনেমা হলে ‘লাকী সেভেন’, কাকরাইলে রাজিয়া হলে ‘কাটা লাশ’, পুরান ঢাকার আজাদে ‘জাদরেল’ নামের অশ্লীলতার তকমা পাওয়া ছবিগুলো চলছে।
বেশিরভাগ হল মালিকের দাবি, প্রতি বছরই রমজান মাসে নতুন ছবি না থাকার কারণে সিনেমা হলগুলোতে পুরনো ছবি চলে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সিয়াম সাধনার এই মাসে সেসব পুরনো ছবির নামে কেন সিনেমা হলে চলছে অশ্লীল ছবির প্রদর্শন? এ প্রশ্ন অনেক সিনেমাপ্রেমী দর্শকের।
মিরপুরে থাকা তেমনই এক দর্শক সুমন বলেন, আমি প্রতি মাসে একটি-দুটি করে বাংলা ছবি দেখি। তবে রমজানে ছবি দেখি না। এ মাসে সিনেমা হলগুলো বন্ধ রাখা উচিত। অথচ সে জায়গায় রাজধানীর বেশ কয়েকটি সিনেমা হলে অশ্লীল ছবি চলছে।
কাকরাইল এলাকায় থাকেন এমন একজন সিনেমার নিয়মিত দর্শক লিটনের মতে রমজান মাসে সিনেমা হল বন্ধ রাখতে পারলে ভালো। কিন্তু যেহেতু এটি ব্যবসা, এর সঙ্গে অনেক মানুষের রুটি-রুজি জড়িত। এ কারণে হল বন্ধ রাখা কষ্টকরই বটে। তাই সিনেমা হল খোলা রেখে রুচিসম্মত ছবিই চালানো উচিত। কিন্তু রাজধানীর বেশ কয়েকটি সিনেমা হলেই এখন অশ্লীল ছবির প্রদর্শন চলছে। আমি মনে করি প্রশাসনের এ ব্যাপারে আশু দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির বর্তমান সভাপতি ও রাজধানীর মধুমিতা সিনেমা হলের অন্যতম কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, রমজান মাসে এমন সিনেমা প্রদর্শন একদমই উচিত না। আর প্রেক্ষাগৃহে অশ্লীল সিনেমা প্রদর্শনের কোনো অনুমতি তো সরকার দেয়নি। আমিও শুনেছি বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের ছবি চলছে। তবে এ বিষয়টি ডিসি বা র্যাবের দেখা উচিত। উনারা চাইলে এই ধরনের অশ্লীল ছবির প্রদর্শন বন্ধ করতে পারবেন।
এদিকে রাজধানীর ফার্মগেটের ছন্দ সিনেমা হলের ম্যানেজার শামসুল আলম বলেন, চলচ্চিত্রের অবস্থা একদমই ভালো না। তবে আমাদের প্রেক্ষাগৃহে অশ্লীল সিনেমা চলছে এ কথাটি ঠিক না। সরকার বিভিন্ন সময়ে মোট ৩২টি সিনেমা নিষিদ্ধ করে দেয়। এসব সিনেমার বাইরে সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়া ‘নয়া কসাই’ ছবিটি আমরা এখন চালাচ্ছি। এ ছবিতে কোনো ধরনের অশ্লীলতা নেই। সংবাদকর্মীরা চাইলে এসে দেখে যেতে পারেন। এ ছবির পোস্টারেও অশ্লীলতা নেই। আর সবচেয়ে বড় বিষয় সিনেমা হলে তো দর্শকই নেই এখন। ক’দিন আগে বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা চলাকালীন দুটি শো বন্ধ রাখতে হয়েছে। ছন্দ ডিজিটাল সিনেমা হল নয়। অ্যানালগ সিস্টেমে প্রিন্ট কপি এনে ছবি চালানো হয়।
রমজান মাসে প্রতি শোতে কত দর্শক সিনেমা হলে ছবি দেখছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একদমই কম দর্শক। প্রতি শোতে ১০ থেকে ১৫ জনের বেশি দর্শক হয় না। কর্মচারীদের বোনাস দিতে হবে। এখন তাদের বেতনই ঠিক মত দিতে পারছি না। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে রমজানে সিনেমা হলে অশ্লীল চলচ্চিত্র প্রদর্শনের অভিযোগ কি সত্যি না।
এই প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সমিতির আহ্বায়ক ও সেন্সর বোর্ডের সদস্য নাসিরউদ্দিন দিলু বলেন, চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা একটা সময় ছিল। তখন অনেক ছবি নানাভাবে সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে। তখন আমি সেন্সর বোর্ডে ছিলাম না। ওই সময়ের কিছু ছবি হয়তো সিনেমা হল মালিকরা বিভিন্ন সময়ে চালান। তবে রমজান মাসে এমন ছবি চালানো একদমই মানতে পারি না। এ সময়ে তো দর্শকও তেমন ছবি দেখতে যায় না। তাই রমজান মাসে সিনেমা হল বন্ধ রাখাই উচিত। আর যারা তারপরও খোলা রাখে অশ্লীলতা নেই এমন ছবি তাদের সিনেমা হলে দেখানো উচিত। এমজমিন
জুন, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসবি