নাম বদলে ঢালিউডে তারকা খ্যাতি
আলাউদ্দীন মাজিদ : ‘নামের বড়াই করো নাকো নাম দিয়ে কি হয়, নামের মাঝে পাবে না তো আসল পরিচয়’- হ্যাঁ এই গানের চরণের মতো চলচ্চিত্র দুনিয়ার মানুষের আসল নাম হারিয়ে যায়। তাই পাওয়া যায় না তাদের আসল পরিচয়। মানুষ তাদের চেনে নতুন নামে। চলচ্চিত্র দুনিয়ার গোড়াপত্তন থেকেই নায়ক-নায়িকাদের নতুন নাম মানে ফিল্মি নাম রাখা ট্রেডিশনে পরিণত হয়। কেউ বাপ-দাদার দেওয়া নাম পাল্টে নতুন নাম, কেউ ডাক নাম কেউবা মূল নামকে কাটছাঁট করে সংক্ষিপ্ত রূপ দেন। তারপর অমুক নামে নায়ক-নায়িকা হয়ে বুক চেতিয়ে গর্ব ভরে হাঁটেন। অনেকে আবার নামের শেষে খানদানি বিশেষণ যোগ করে বিশেষ ভাব নিয়ে বেড়ান। যেমন নামের সঙ্গে খান থাকলে ফিল্মে ভাব বাড়ে, দামও নাকি বাড়ে। বলিউড দুনিয়া তো খানে খানে এখন খান খান। যেমন শাহরুখ, সালমান, আমির, সাইফ, জায়েদ খান। ঢাকাই ছবিতেও এ ‘খান কালচার’ চলছে নব্বই দশক থেকে। বলিউডের সালমান খানের প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে ঢাকায় সোহেল রানা তার ফিল্মি নাম রাখলেন শাকিব খান। মো. স্বপন হয়ে গেলেন আমিন খান। মোহাম্মদ জহিরুল হক হয়েছেন জায়েদ খান। এ রকমই আরেক খান শাকিল খান। শাকিব খান এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন বলিউডের সালমান খান আমার প্রিয় নায়ক। চলচ্চিত্রে আসার পর তার সঙ্গে মিল রেখে নিজের নাম খুঁজছিলাম। কাছের মানুষের সহায়তায় এক সময় পেয়েও গেলাম। সোহেল রানা থেকে হয়ে গেলাম শাকিব খান। শাবানা, শবনম, শাবনূর। এই তিনজনের নাম অবশ্য তারা নিজেরা পাল্টাননি। তাদের আবিষ্কারক প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার এহতেশাম তাদের এই ফিল্মি নাম দেন। ‘শ’ অক্ষরটির প্রতি দুর্বল ছিলেন এই নির্মাতা। তাই নিজের আবিষ্কার করা নারী শিল্পীদের এ অক্ষর দিয়ে নামকরণ করতেন তিনি। আর পুরুষ শিল্পীদের জন্য তার অক্ষর ছিল ‘ন’। যেমন- নাদিম, নাইম।
পুরনো যুগেও নাম বদলের কালচার ছিল। তখন খান নয়, ছিল ‘কুমার কালচার’। পঞ্চাশের দশকে বলিউডে ইউসুফ খান অভিনয়ে এসে হয়ে গেলেন দিলীপ কুমার। টালিগঞ্জের কেদারনাথ হলেন উত্তম কুমার। এ দেশের চলচ্চিত্রে ওবায়দুল হক হয়েছিলেন কিরণ কুমার। ভাবের ভার বাড়াতে মেকি নাম ধারণ করেছেন এমন শিল্পীর তালিকা কিন্তু একেবারেই ছোট নয়। আমাদের জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রায় সবাই নিজেদের নাম বদল করেছিলেন। যেমন নায়ক আলমগীরের আসল নাম ছিল ‘মহিউদ্দিন আহমেদ’। অঞ্জলী ঘোষ থেকে ‘লী’ ফেলে অঞ্জু হয়ে গেলেন অঞ্জু ঘোষ। মিনা পাল হয়েছেন কবরী। ফরিদা আক্তার পপি হলেন ববিতা, তবারুক আহমেদ হলেন বুলবুল আহমেদ, আবদুস সামাদ থেকে টেলিসামাদ। এ রকম আরও অনেকে নাম বদলিয়েছেন।
আবার কেউ নিজের নাম ছেঁটে আকর্ষণীয় করেছেন। নিচে তাদের একটি তালিকা দেওয়া হলো-
রাজ্জাক (আবদুর রাজ্জাক), দিতি (পারভীন সুলতানা), দোয়েল (ইফতে আরা ডালিয়া), নাদিম (নাজিম বেগ), নূতন (ফারহানা আমির রত্না), মাহমুদ কলি (মাহমুদুর রহমান ওসমানী), মিজু আহমেদ (মিজানুর রহমান), প্রয়াত মান্না (আসলাম তালুকদার), রোজিনা (রওশন আরা রেনু), প্রয়াত রোজী (শামীম আক্তার), প্রয়াত শওকত আকবর (সাইয়েদ আকবর হোসেন), শবনম (নন্দিতা বসাক ঝর্ণা), শর্মিলী আহমেদ (মাজেদা মল্লিক), শাবানা (আফরোজা সুলতানা রত্না), সুচন্দা (কোহিনূর আক্তার), সুচরিতা (বেবি হেলেন), সুজাতা (তন্দ্রা মজুমদার), সুনেত্রা (ফাতেমা হক), সুমিতা দেবী (হেনা ভট্টাচার্য), সুলতানা জামান (মীনা জামান), সোহেল রানা (মাসুদ পারভেজ), রুবেল (মাসুম পারভেজ), ইলিয়াস কাঞ্চন (ইদ্রিস আলী), সালমান শাহ (শাহরিয়ার ইমন), চম্পা (গুলশান আরা), রিয়াজ (রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ), শাবনুর (কাজী শারমিন নাহার নূপুর), মৌসুমী (আরিফা জাহান), পূর্ণিমা (দিলারা হানিফ রিতা) ও অপু বিশ্বাস (অপু শ্রাবন্তী বিশ্বাস), মাহি (শারমীন আক্তার নিপা), রুহি (দিলরুবা ইয়াসমিন)।-বাংলাদেশ প্রতিদিন।
০১লা নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই
�