বিনোদন ডেস্ক: অকাল প্রয়াত নায়ক সালমান শাহ (ইমন) হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তার সাবেক স্ত্রী সামিরা হককে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত কর্মকর্তারা। তদন্তের প্রয়োজনে সামিরাকে কয়েকটি প্রশ্ন করা হবে বলে জানিয়েছে পিবিআই।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সালমান শাহ গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেলেও কেউ তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেনি। সাক্ষীরা তাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখেছে বলে আগের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। যেহেতু সে সময় তার স্ত্রী সেখানে ছিলেন এবং তিনি হয়তো ফ্যান থেকে তার মরদেহ নিচে নামিয়েছেন, তাই এ বিষয়ে তাকে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করা হবে। সেগুলোর উত্তর পেলে তদন্ত এগিয়ে নেয়া হবে।
সামিরাকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে পিবিআই ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বশীর আহমেদ বলেন, তদন্তভার হাতে পাওয়ার পর তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়নি। আমারা জানি উনি দেশের বাইরে আছেন, দেশে ফিরেছেন কি না জানা নাই। তদন্তের প্রয়োজনে যাকে যাকে প্রয়োজন সবাইকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় সালমানের বিউটিশিয়ান রুবি সুলতানা তার মৃত্যুকে ‘হত্যা’ উল্লেখ করে এর পেছনে স্ত্রী সামিরার সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করেন।
এদিকে রোববার সামিরার সঙ্গে কথা হয়েছে। সামিরা বলেন, ইমনকে (সালমান শাহ) হত্যা করা হয়নি, সে আত্মহত্যা করেছিলো। সত্য কথা একটাই। সত্য কখনও দুইটা হয় না। মিথ্যে কথা বলতে গেলে পেচিয়ে বলতে হয়। একেকবার একেক জনের নাম বলতে হয়। আমি যা বলেছি সেটাই প্রমাণ হবে। ইন্টারপোল, এফিবিআই আসলেও কোনো সমস্যা নেই। আমিও চাই তারা আসুক।
সামিরা আরো বলেন, সালমান ভক্তরা এতদিন এক তরফা শুনে এসেছে। তাই ওরা আমাকে দোষ দেয়। এতে ওদের কোনো দোষ নেই। এখন ওদের বোঝা উচিত। এখন অনেক কিছু আছে, সবকিছু মিলিয়ে দেখুক। কাগজপত্র, বিভিন্ন প্রমাণ, ডিবি (ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ) রিপোর্ট, সিআইডি, জুডিশিয়াল রিপোর্ট দেখুক। সর্বশেষ পিবিআই দেখছে এখন। রিপোর্ট একই হবে ইনশাল্লাহ।
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার বলেন, ঘটনার ২০ বছর পর মামলাটি আমাদের কাছে এসেছে। আমরা তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের কাজ করছি। তবে মামলায় সাক্ষ্য নেয়ার জন্য আমরা যাদের খুঁজছি, তাদের কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না।
এর আগে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহর। রহস্যজনক এ মৃত্যুর ঘটনায় সে সময় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।
এই মামলার তদন্তে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা করেন। ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। এরপর প্রায় ১২ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।
২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহের মা নীলুফার চৌধুরী ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন।
পরে ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলুফার চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের নারাজির আবেদন দাখিল করেন।
নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। আদালত নারাজি আবেদনটি মঞ্জুর করে র্যাবকে তদন্তভার প্রদান করেন।
মামলাটিতে র্যাবকে তদন্ত দেয়ার আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত বছরের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করেন।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ-৬ এর বিচারক ইমরুল কায়েস রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করেন এবং র্যাব মামলাটি আর তদন্ত করতে পারবে না বলে আদেশ দেন। ঘটনার ২০ বছর পর আলোচিত ওই মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় পিবিআইকে।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এইচএস/কেএস