বিনোদন ডেস্ক : দেশ প্লাবিত হচ্ছে ভয়াল বন্যায়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় তথ্য অনুযায়ী এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৩ লাখ মানুষ! মন্ত্রণালয়ের সচিবের চলতি দায়িত্বে থাকা গোলাম মোস্তফার প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ ৫২ হাজার পরিবার আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারা গেছে ৩৭ জন। এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১ হাজার ৫৯৯টি। এগুলোতে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা ৪ লাখ ১১ হাজার।
বাংলাদেশের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বর্তমানে উদ্বিগ্ন রয়েছে দেশবাসী। উদ্বিগ্ন রয়েছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের তারকারাও। বন্যার্তদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা। মুহূর্তে মুহূর্তে খোঁজ খবর নিচ্ছেন বন্যা কবলিত মানুষের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে। কিন্তু ঠিক সেই সময়ই মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে দেওয়া একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে একটি কমেন্ট করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও স্বনামধন্য সাংবাদিক মুন্নী সাহা। ফারুকী তার পোস্টে লিখেছেন- ‘বন্যার অবস্থা কোন দিকে যাইতেছে? পত্রিকাগুলা কি বলতেছে? এটা কি দীর্ঘস্থায়ী কিছু হইতে যাচ্ছে নাকি এই বছরের আগের কয়েক দফার মতোই একটা কিছু হবে? সলিড ইনফরমেশন আছে? যারা ফ্রেন্ড লিস্টে নাই, কোনো ছবি বা তথ্য থাকলে ইনবক্স করতে পারেন। বাট নো ওল্ড ফটো প্লিজ। সংযুক্তি: ইনবক্সে পাঠানো ভিডিও আর কিছু ছবি দেখে সত্যি ভয় পাইছি। জানিনা এটা দীর্ঘস্থায়ী কিছু হইতে যাচ্ছে কিনা। হইলে ঘোর বিপদ’।
ফারুকীর এই পোস্টের নিচে মুন্নী সাহা এসে কমেন্ট করেছেন- ‘কিচ্ছুনা বস্। স্বাভাবিক বন্যা’।
প্রতিউত্তরে ফারুকী লিখেন, ’সিরিয়াসলি, মুন্নী আপা?’
দেশের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে মুন্নী সাহার মতো একজন দায়িত্ববান সাংবাদিকের এমন কমেন্ট দেখে অনেকের চোখই ছানা বড়া। ফেসবুক দুনিয়ায় শুরু হয়েছে মুন্নী সাহার বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা। অনেকেই স্ক্রিনশট দিয়ে কড়া সমালোচনা করছেন এই সেলিব্রেটি সাংবাদিকের। তবে এ বিষয়ে মুন্নী সাহা কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি কোথাও।
নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ফেসবুক স্ট্যাটাসের স্ক্রিন শট।
যা হোক, শুরুতেই বলেছিলাম- বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন দেশের বেশ কজন তারকা। তাদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে পড়েছে সেই উদ্বিগ্নতার প্রতিচ্ছবি। যেমন-
সৈয়দ নাফিজ নামক একজনের স্ট্যাটাস স্ট্যাটাস নিজ ফেসবুক টাইমলাইনে আপ করেছেন অভিনেত্রী মৌসুমী নাগ। সেখানে লেখা রয়েছে- ‘সবাইকে খুব বড় আকারের বন্যার প্রিপারেশন নিতে হবে, হাতে সময় নেই। তিস্তা নদীর বাঁধ আজ বিকালে ভেঙে গিয়েছে। আর তিস্তা বাধের ২১ টি গেট ভারত খুলে দিয়েছে আজ সন্ধ্যায়। এই মুহূর্তে তিস্তায় পানি ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দিনাজপুর পানিতে ভেসে গেছে। কয়েকশ চালের আড়ত পানিতে ভেসে গিয়েছে। বাজার ঘাট তো কবেই বন্ধ। ফারাক্কা বাঁধ সম্ভবত আজ রাতেই খুলে দেওয়া হতে পারে। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের কার্যালয় (ইউএনআরসিও) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ গবেষণা কেন্দ্রের (জেআরসি) বৈশ্বিক বন্যা সতর্কতা পদ্ধতির (গ্লো-এফএএস) বিশ্লেষণ করে এই সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার অঞ্চলগুলোতে ১১ আগস্ট শুক্রবার থেকে পানি বাড়ছে এবং ১৯ আগস্ট পর্যন্ত এই পানি ভাটির দিকে প্রবাহিত হবে। ২১ আগস্ট অমাবস্যা। গত ২০০ বছরের বেশি সময়ের ইতিহাসে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার উজানে বন্যার মাত্রা সবচেয়ে ভয়াবহ হবে। অনেক বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এবারের বন্যা ১৯৮৮ সালের থেকেও ভয়াবহ হবে। সবাইকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসসহ পর্যাপ্ত চাল, ডাল, লবণ, আলু, তেল সবই সংগ্রহ করে রাখতে হবে। মনে রাখবেন, বন্যা হলে হয়তো সারা বিশ্ব থেকে ত্রাণ সহায়তা আসবে। হাজার হাজার কোটি টাকা সাহায্য আসবে। কিন্তু আমাদের নিজেদের চিন্তা নিজেকেই করতে হবে আর প্রস্তুতিও সেভাবেই নিতে হবে। ভালো থাকুক আমার বাংলা মা। ভালো থাকুক আমার বাংলা মায়ের সন্তানেরা’।
অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি লিখেছেন- ‘মানুষ হলো দেহ আর মানবতা হলো আত্মা। মানুষ থেকে বেরিয়ে মানবতা হাত বাড়াক অসহায়ের প্রতি। এই বন্যায় পশু পাখির প্রতিও সদয় হই।
নজরুল সঙ্গীতশিল্পী সুজিত মুস্তাফা লিখেছেন- ‘জলাবদ্ধ ছিল ঢাকা, তারপর চট্টগ্রাম, ক্রমে পুরো দেশ। ঢাকার অবস্থা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, জলাশয়গুলো দখল করে হাই রাইজ সব স্থাপনা তৈরি, নিষ্কাশন ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং সর্বপরি আলোচিত হয়েছে পলিথিন ছাড়াও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ জায়গামতো না ফেলার বিষয়। ঢাকা শহরে প্রায় এক কোটি আশি লক্ষ মানুষের বসবাস। প্রতিটি মানুষ গড়ে ২৫ গ্রাম করে বর্জ্য যেখানে সেখানে নিক্ষেপ করলে সেটা একটা বিশাল ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এই ময়লা একিভূত হয়ে ড্রেনেজ সিস্টেম বিকল করে দেয়। পলিথিনের আয়ু শত বছরের। এই বর্জ্য আমাদের স্থায়ী সমস্যার দিকে ঠেলে দেয়, সেটা শুধু জলাবদ্ধতা নয়, মাটির গুণ নষ্ট করা থেকে আরো দীর্ঘমেয়াদী নানান সমস্যা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। এই মাসের শুরুতে আমাদের নজরুল সঙ্গীতশিল্পী পরিষদের সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রায় ৬০ জন নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ও শ্রোতাকে আমরা একটা অনুরোধ করেছি, আমরা যেন নিজেরা প্রত্যেকে এখন থেকে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত জায়গায় কোনো ধরনের ময়লা না ফেলি। আমরা আমাদের নিজেদের পরিবারের মধ্যেও এই বিষয়গুলো চালু করব বলে সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি। এভাবেই ছোট পরিসর থেকে আস্তে আস্তে আমরা নিজ দায়িত্বে এই কাজগুলো শুরু করলে এর সামগ্রীক সুদূরপ্রসারী সুপ্রভাব অবশ্যম্ভাবী। আমাদের বন্ধু ও ফলোয়ার সংখ্যা বেশ অনেক। আপনাদের সবার কাছেই আমাদের অনুরোধ আসুন আমরা এখন থেকে এই কাজটি শুরু করি এবং আমাদের পরিবার ও বন্ধুদের উৎসাহিত করি।
সর্বশেষে একটু উল্লেখ করতে চাই যে, আমরা বাংলাদেশিরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ রাখার পাশাপাশি সকল নিয়ম অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে চলি। আমাদের যত অবহেলা নিজের দেশের প্রতি। নিজের দেশটিকে ভালো রাখার দায়িত্বতো আমাদের নিজেদেরই, নয় কি?
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস