সোমবার, ০২ অক্টোবর, ২০১৭, ০২:০৩:৫২

বাংলা চলচ্চিত্রে এক ‘ভয়ংকর’ নাম! কেমন ছিলো ডিপজলের দুই জগৎ?

বাংলা চলচ্চিত্রে এক ‘ভয়ংকর’ নাম! কেমন ছিলো ডিপজলের দুই জগৎ?

বিনোদন ডেস্ক : মনোয়ার হোসেন ডিপজল। বাংলা চলচ্চিত্রে এক ‘ভয়ংকর’ নাম, যার চেহারা পর্দায় দেখলে এখনো কেঁপে ওঠেন অনেকে। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যে কজন খ্যাতিমান খল অভিনেতার আবির্ভাব ঘটেছে, তাদের মধ্যে তিনি অগ্রগণ্য।

এটিএম শামসুজ্জামান, খলীল উল্লাহ খান, আহমেদ শরীফ, রাজিব, হুমায়ুন ফরীদি, নাসির খান ও বর্তমানের মিশা সওদাগরের মতো শক্তিমান খল-অভিনেতাদের মধ্যে ডিপজল আলাদা বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। তার মতো এমন ভয়াবহ রূপ নিয়ে কাউকেই কখনো পর্দায় হাজির হতে দেখা যায়নি। ছবিতে তার শরীরী ভাষা ও চোখের চাহনিতে যেন পিলে চমকে যাওয়ার জোগাড় হয় সহ-অভিনেতা আর দর্শকদের।

ভয়ের সেই জগৎ ছেড়ে এখন তিনি বাস করেন ভিন্ন এক জগতে। আজ আমরা জানব ডিপজলের সেই দুই জগৎ সম্পর্কে।

ডিপজলের সেকাল

১৯৮৯ সালে মনতাজুর রহমান আকবরের ‘টাকার পাহাড়’ ছবির মাধ্যমে রুপালি পর্দায় অভিষেক হয় ডিপজলের। তবে তিনি মূলত পরিচিতি পান কাজী হায়াতের ‘তেজী’ ছবির মাধ্যমে। ১৯৯৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ওই ছবিতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন তখনকার সুপারহিট মান্না। ছবিতে ডিপজলের ‘সানডে মানডে ক্লোজ কইরা দিমু’ ডায়ালগটি তখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। জনপ্রিয়তা পান তিনি নিজেও। রাজিব ও হুমায়ুন ফরীদির পর বাংলা চলচ্চিত্র পায় নতুন এক প্রতিভাবান খল-অভিনেতা।

প্রথম ছবিতে বাজিমাতের পর অভিনয় জগতে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক ছবিতে ভয়ংকর খলচরিত্রে অভিনয় করে গেছেন তিনি। মানুষকে অতি নিষ্ঠুর কায়দায় খুন করা, হাত-পা কেটে নেয়া, জোর করে অন্যের সম্পত্তি দখল করা, ডাকাত সেজে লুটে নেয়াই যার প্রধান কাজ। বড় বড় চোখে ভয়ংকর দৃষ্টি হেনে যেন পুড়িয়ে দিতেন প্রতিপক্ষকে। তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিলে ফল কী হবে তা যেন তার চোখেই লেখা থাকত।

রাজিব-হুমায়ুন ফরীদি যুগের পর ডিপজল বাংলা ছবির সবচেয়ে সফল খল-অভিনেতা। ভিলেন হিসেবে তিনি অভিনয় করেছেন ‘তেজী’, ‘ভয়ংকর বিষু’, ‘আম্মাজান’, ‘কে আমার বাবা’, ‘কুখ্যাত খুনি’, ‘গুন্ডা নাম্বার ওয়ান’, ‘কঠিন বাস্তব’, ‘ঢাকাইয়া মাস্তান’, ‘মেজর সাহেব’, ‘ইতিহাস’, ‘ধর’ ও ‘কঠিন সীমার’ মতো বক্স অফিস সফল সব ছবিতে। তার অধিকাংশ ছবির পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবর। আর অধিকাংশ ছবিতেই তিনি সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছেন প্রয়াত অ্যাকশন হিরো নায়ক মান্নাকে।

ডিপজলের একাল

ক্যারিয়ারের মধ্য গগণে হঠাৎই ভয়ংকর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন ডিপজল। শুরু করেন ইতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করা। বাস্তবের খুব ভয়ংকর একজন মানুষ হঠাৎ একটা ভালো কাজ করলে যেমন ভালো লাগা ছুঁয়ে যায়, সিনেজগতও তার ব্যতিক্রম নয়। ডিপজলের হঠাৎ ইতিবাচক চরিত্র সাদরে গ্রহণ করে দর্শক। মোটকথা, যিনি অভিনয় জানেন, সব চরিত্রেই নিজেকে মানিয়ে নেন তিনি। এর আগে, প্রয়াত খল-অভিনেতা রাজিব, হুমায়ুন ফরীদি, এমটিএম শামসুজ্জামানরাও বেশ কয়েকটি ছবিতে ইতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি কুড়িয়েছেন।

খ্যাতিমান পরিচালক এফ আই মানিকের ‘চাচ্চু’ ছবির মাধ্যমে ইতিবাচক চরিত্রে অভিনয় শুরু ডিপজলের। তার অভিনীত সবশেষ ছবি ‘দুলাভাই জিন্দাবাদ’। এই ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্র দুলাভাই চরিত্রে ডিপজলকে পর্দায় দেখলে মনেই হবে না একসময় তিনি চোখ মেললেই ভয়ে কাঁপত রুপালি পর্দার দর্শক। এর আগে ডিপজল নায়ক চরিত্রে ১০টি ছবিতে অভিনয় করেন- ‘চাচ্চু’, ‘দাদীমা’, ‘কাজের মানুষ’, ‘রিকসাওয়ালার ছেলে’, ‘মায়ের চোখ’, ‘মায়ের হাতে বেহেশতের চাবি’, ‘জমিদার’, ‘ছোট্ট সংসার’, ‘মানিক রতন দুই ভাই’ ও ‘বাজারের কুলি।

ঢাকাই ছবির দাপুটে অভিনেতা ডিপজল অসুস্থতার কারণে বর্তমানে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।  সেখানে তার হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। অস্ত্রোপচার শেষে চিকিৎসকরা তাকে দুই মাসের বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

হৃদযত্রের সমস্যাজনিত কারণে গত ১৯ সেপ্টেম্বর হঠাৎ নিজ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন ডিপজল। রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এই ‘কালা মানিক’কে দ্রুত সিঙ্গাপুর পাঠানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসক। তার হৃদযন্ত্রে দুটি ব্লক ধরা পড়ে। পরদিন ২০ সেপ্টেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে নেয়া হয় সিঙ্গাপুর। অস্ত্রোপচারের পর এখন সুস্থ আছেন কালা মানিক।ইতোমধ্যে ছারপত্র পেয়ে হাসপাতাল ও ছেড়েছেন ডিপজল ।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে