শাহরুখের কাছে হারলেন মোদি!
বিনোদন ডেস্ক : রাজত্ব বাড়ল বাদশার। বলিউডের পাশাপাশি এখন তিনি নেট দুনিয়ারও বেতাজ বাদশা। সম্প্রতি ট্যুইটারে শাহরুখের ফলোয়ার সংখ্যা ছাড়াল ১৬ মিলিয়ন। সেই সঙ্গে শাহরুখ টপকে ফেললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তার গণ্ডি৷ এই মুহূর্তে নমোর টুইটারে অনুগামীর সংখ্যা ১৫ কোটি ৮ মিলিয়ন।
বর্তমানে ট্যুইটারে ফ্যান ফলোয়িং-এ ভারতের এক নম্বরে রয়েছেন অমিতাভ বচ্চন, তার অনুগামীর সংখ্যা ১৭.৬ মিলিয়ন। তারপর দ্বিতীয় স্থানে কিং খান। ২০১০-এর ৩ জানুয়ারি সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিষেক হয় শাহরুখের। এর পর থেকে ফ্যানদের সঙ্গে শাহরুখের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্যুইটার। প্রায় প্রতিদিনের খুঁটিনাটি কিছু না কিছু আপডেট করতে থাকেন। তাছাড়া নতুন সোশ্যাল মিডিয়ায় টেকনোলজি ব্যবহারে সবাইকে পিছনে ফেলে বলিউডে এক নম্বরে শাহরুখ খান।
কেন যে শাহরুখ অসহিষ্ণুতা প্রশ্নে মুখ খোলায় রে রে করে আক্রমণে নেমেছিল বিজেপি ও সংঘ পরিবার, তা আজ আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল। দেশজোড়া অসহিষ্ণুতা নিয়ে ৫০ তম জন্মদিনের দিন মুখ খোলেন শাহরুখ।
তিনি বলেছিলেন, দেশ এখন অসহিষ্ণুতার চরমে। শিল্প যে কোনও জাত, ধর্মের বেড়াজালে আটকে থাকতে পারে না এবং তা যদি হয় তবে দেশ যে প্রতি পদক্ষেপে পিছিয়ে যাচ্ছে এ কতা দ্বর্থ্যহীনভাষায় জানিয়েছিলেন বলি-বাদশা। আর তাতেই রাতারাতি আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে ওঠেন তিনি।
সংঘ পরিবারের সাধ্বী প্রাচী তাকে ‘পাকিস্তানি এজেন্ট’ বলেই অভিহিত করেন। বিজেপির তরফ থেকেও ‘দেশদ্রোহী’ বলে আখ্যা দেওয়া হয় তাকে। সংঘ ও বিজেপির সদস্যরা ভালোই জানেন, জনপ্রিয়তার নিরিখে শাহরুখের অবস্থান ঠিক কোথায়। আর তাই আক্রমণ করে শাহরুখকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছিল তারা।
এদিনের ফলাফল জানিয়ে দিল, তাদের সে আক্রমণ বুমেরাংই হয়েছে। শাহরুখের জনপ্রিয়তা বেড়েছে বই কমেনি। বরং নায়ক হিসেবে তাকে যারা পছন্দ করেন না, তারাও সমর্থন বাড়িয়ে দিয়েছেন তার প্রতি।
কেননা শাহরুখের মতো হাই প্রোপাইল মানুষকে যখন মন্তব্য করার কারণে এরকম আক্রমণের মুখে পড়তে হয়, তাহলে দেশের সাধারণ মানুষের বাকস্বাধীনতা কোন অবস্থায় আছে তা সহজেই অনুমেয়।
তাছাড়া বলিউডি নায়ক নায়িকাদের অনেকেই যখন স্রেফ সেলফি সর্বস্ব জীবন কাটাচ্ছেন, তখন শাহরুখ যে সামাজিকতার পরিচয় দিয়েছে, তাও অনেকের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে। অনেকে তার বিরুদ্ধে প্রচারসর্বস্বতার অভিযোগ তুলেছেন বটে, তবে শাহরুখের অতীত কাজও প্রমাণ করে দিয়েছে প্রচারের জন্য তাকে অন্তত অসহিষ্ণুতা নিয়ে মন্তব্য করতে হবে না। হিপোক্র্যাসিকে তিনি যে প্রশ্রয় দেন না, তা শাহরুখের জীবনের নানা ঘটনায় স্পষ্ট।
আইপিএলে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের অন্তর্ভুক্তির স্বপক্ষে মুখ খুলে শিবসেনার বিরাগভাজন হয়েছিলেন। কিন্তু তাও গোঁড়ামিকে সমর্থন করেননি। কিংবা কৌশলে চুপ থাকার পন্থাও নেননি। ব্যক্তিজীবনে হিন্দু রমণী বিবাহ থেকে সন্তানসন্ততির নামেও তিনি যে স্বচ্ছ সংস্কৃতির মডেল তুলে ধরেন, তা তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। তারই ফল মিলল টুইটারে। অসহিষ্ণুতা নিয়ে মুখ খোলায় তার বাড়ির সামনে যখন নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বাড়ল, তখন তার টুইটারে অনুগামীর সংখ্যাও বাড়ল হু হু করে৷
ডিজিটাল মিডিয়ায় সক্রিয় হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নমুনা তৈরি করেছেন। ডিজিট্যাল মিডিয়ার উপর তিনি ও তার দলের ভরসাও অনেকখানি। নিজেদের মত প্রকাশে এই মাধ্যমকে তারা ব্যবহারও করেন যথেচ্ছ।
সেই ডিজিটাল মিডিয়া কিন্তু দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়ে দিয়েছে, জনপ্রিয়তার নিরিখে অন্তত শাহরুখের কাছে তার হারই হয়েছে। এখনও যদি তার দলের সদস্যরা শাহরুখকে আক্রমণে লাগাম না টানেন তবে ভবিষ্যতে যে ডিজিট্যাল মিডিয়া আরও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেবে তার আভাস হয়ত এখনই পাওয়া যাচ্ছে৷
৭ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন
�