বিনোদন ডেস্ক: ২০১৪ সালে ‘মর্দানি’। তারপর থেকে রূপোলি পর্দা দেখেনি তার রানিকে। মাঝে ব্যক্তিগত জীবনে বিস্তর রদবদল। বিয়ে, সন্তান। প্রায় বছর তিনেক পরে অন্তরাল ভেঙে ফের বড়পর্দায় ফিরছেন রানি মুখোপাধ্যায়। আর পাঁচটা বিনোদনের ছবি নয়। এবারও চ্যালেঞ্জিং বিষয় ও চ্যালেঞ্জিং চরিত্র নিয়েই তাঁর ফেরা। সম্প্রতি মুক্তি পেল রানির কামব্যাক ছবি ‘হিচকি’র ট্রেলার।
ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠানে পুরনো মেজাজে ধরা দিলেন রানি। প্রায় মিনিট চল্লিশেক সকলের প্রশ্নের উত্তর দিলেন ধৈর্য ধরে। দীর্ঘদিন সাংবাদিকদের সামনে ধরা দেননি। আদিরাকে এই গ্ল্যামারের দুনিয়ার আড়ালেই রাখতে চেয়েছেন। কেননা রানি বিশ্বাস করেন, আদিরা তা ডিজার্ভ করে না। আর পাঁচজন সেলিব্রিটি যেভাবে নিজের সন্তানকে লোকচক্ষুর সামনে নিয়ে আসেন, সে পথে হাঁটেননি রানি। বরং সাধারণ এক বাচ্চার মতোই বেড়ে উঠুক আদিরা, মা হিসেবে তাইই চেয়েছেন। গ্ল্যামার দুনিয়ার বাসিন্দা হয়েও ব্যতিক্রমী ভাবনা ভেবেছেন রানি।
এ ছবিতেও তাঁর ব্যতিক্রমী মননের ছাপ। ‘মর্দানি’ ছবিতে উইমেন এমপাওয়ারমেন্টকে ফোকাস করেছিলেন। অন্যদিকে বছর তিনেক পর ফেরার ছবি হিসেবে বেছে নিয়েছেন, আরও এক চ্যালেঞ্জিং বিষয়কে। ছবির নাম ‘হিচকি’। যেখানে রানির চরিত্রের নাম নয়না মাথুর। নয়না আক্রান্ত ‘টুরেত সিনড্রোমে’। নিউরোলজিক্যাল এই ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি মুখে নানারকম শব্দ করতে থাকেন। বারংবার। ফরাসি নিউরোলজিস্ট জিন-মার্টিন চারকট এ নিয়ে গবেষণা করেন। একাধিক রোগীর ব্যবহার তিনি সমীক্ষা করে দেখেন। তাঁরই রোগী ছিলেন টুরেত। যাঁর নামে এই রোগের নামকরণ করা হয়।
ছবির চরিত্র নয়নাও এই সিনড্রোমে আক্রান্ত। কিন্তু তার স্বপ্ন শিক্ষক হওয়া। এই অসুখ নিয়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে তাঁর? ছবির গল্পে পরতে পরতে আছে সেই সামাজিক চ্যালেঞ্জ। যা অতিক্রম করেছে নয়না। আর পর্দায় নয়না হয়ে উঠে, ব্ল্যাক-এর পর আবার এক প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন রানি। ছবির প্রসঙ্গে ফিরে গেলেন ব্যক্তিজীবনেও। জানালেন, তাঁর মায়ের ভীষণ তোতলামির রোগ ছিল। গান গাইতে গেলে সমস্যা হত না। মহম্মদ রফির সঙ্গেও গান গেয়েছেন তিনি। কিন্তু কথা বলার সময়ই দারুণ সমস্যায় পড়তেন।
এদিকে মায়ের থেকে এই সিনড্রোমে আক্রান্ত হন রানির দাদাও। রানিও ছোটবেলায় সমস্যায় পড়েছিলেন। তবে পরে নানারকম থেরাপিতে সে রোগ কেটেছে। রানি তাই জানেন, এ আসলে শুধুই একটা অসুখ নয়। ব্যক্তিজীবনের এই উপলব্ধিই তিনি মিশিয়ে দিয়েছেন নয়নার মধ্যে। বাস্তব জীবনের এক চরিত্রের আদলেই নয়নাকে তৈরি করা হয়েছে।
তবে এখনই তাঁর পরিচয় খোলসা করতে চান না রানি। তুখড় অভিনেত্রী। তবু মেথড অ্যাক্টিংয়ের ধর্ম মেনেই ছবির আগে একাধিক বাচ্চার সঙ্গে দেখা করেছেন রানি। যাঁরা এই সমস্যায় পড়েছেন তাঁদের অভিভাবকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। ঠিক কী পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয় সে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে মিশিয়ে দিয়েছেন নয়নার রূপায়ণে।
তবে এ ছবি আরও একদিক থেকে স্পেশাল। শুধুই কামব্যাক নয়। মা হিসেবে এটিই রানির প্রথম ছবি। এতদিন কি লাইট-ক্যামেরার দুনিয়াকে মিস করেছিলেন তিনি? রানির উত্তর, মোটেও না। “ছেলেরা যদি সন্তানের জন্ম দিতে পারতেন, তাহলে মেয়েরা কাজে বেরতে পারত। কিন্তু সে উপায় তো নেই। অগত্যা….”, জানান রানি। তবে আদিরার সঙ্গে কাটানো সময়টাও তাঁর কাছে স্পেশাল। গোটা টিম তাঁর পাশে ছিল।
সে কৃতজ্ঞতাও জানাতে ভোলেননি রানি। সকাল সাতটায় শুটিংয়ে গিয়ে সাড়ে বারোটায় ফিরে আসতেন। আদিরার কারণেই এরকম সময় নিতে হয়েছিল তাঁকে। পুরো টিমই তাঁকে পূর্ণ সমর্থন করেছে এ ব্যাপারে। ছবির সেটে আদিরাকে বেশি নিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না রানি। বরাবর তিনি চেয়ে এসেছেন, আদিরা আর পাঁচজন সাধারণের মতোই বেড়ে উঠুক। স্বাভাবিক শৈশব যেন নষ্ট না হয় তার।
আদিত্য চোপড়ার পরিবেশনায় ‘হিচকি’ ছবিটি পরিচালনা করেছেন সিদ্ধার্থ পি মালহোত্রা। ছবির প্রযোজক মনীশ শর্মার সঙ্গেও ছবির খুঁটিনাটি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে বলে জানান রানি। এ ছবি আত্মবিশ্বাসের। প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে নিজেকে খুঁজে পাওযার। ব্ল্যাক-এর পর আবারও এরকম এক চরিত্রে দেখা যাবে রানিকে। দীর্ঘদিন এই তুখোড় অভিনেত্রীর পারফরম্যান্স থেকে বঞ্চিত দর্শকরা। এতদিনে কি ‘হিচকি’ কাটতে চলেছে?ট্রেলারে অন্তত সে ইঙ্গিতই মিলছে।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি