রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১০:১০:৩৪

টাইগার জিন্দা হ্যায়: ঘোড়ার পিঠে সালমান আইএস জঙ্গিদের চেয়েও বেশি দুর্ধর্ষ!

টাইগার জিন্দা হ্যায়: ঘোড়ার পিঠে সালমান আইএস জঙ্গিদের চেয়েও বেশি দুর্ধর্ষ!

বিনোদন ডেস্ক: উত্তর সিরিয়ায় একটি টানটান উত্তেজনাপূর্ণ দিন। ৪০ জন ভারতীয় এবং পাকিস্তানি নার্সকে অপহরণ করেছে সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসসি (পড়ুন আইএসআইএস)।

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW তাদের স্পেশাল এজেন্ট টাইগারকে (সালমান খান) ওই নার্সদেরকে উদ্ধারের জন্য পাঠিয়েছে। তিনি ডেঞ্জার জোনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন আর এমন সময় তার স্ত্রী, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এজেন্ট জোয়া (ক্যাটরিনা কাইফ), তার কানে ফিসফিস করে বললেন, ‘নিজের খেয়াল রেখো’। উত্তরে সালমান তামাশার ভঙ্গিতে একটি মুচকি হাসি দিলেন। যেন বা দুনিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বহীন উইশ ছিল সেটি।

ওই মিশনের আগে গত ৮ বছর ধরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কাটিয়ে এসেও ভেতর থেকে এতকুটু বদলে যায়নি টাইগার। তার বয়স এখন ৪৫ এবং তার হৃদয়ে এখনো তার দেশ ভারতের জন্য রক্তক্ষরণ হয়। কিন্তু বয়সটা শুধু তার জন্য একটি সংখ্যা মাত্র। ফলে সে নেকড়েদের সঙ্গে লড়াই করে তার শারীরিক সক্ষমতার একটি নজির দেখালেন। ভিন ডিজেলের মতো স্কিইং করা থেকে শুরু করে ব্যাটম্যানের মতো লড়াই করার মধ্য দিয়ে সে দর্শকদেরকে তার চিরযৌবনের বিষয়টি পুনরায় জানান দেয়।
কিছু কিছু মুহূর্তে তাকে তার শার্টও খুলে ফেলতে হয়েছে। যা তার ভক্তদের জন্য হয়তো চুড়ান্ত উত্তেজনা এনে দিবে।

খানের টাইগার শুষ্ক রসে আশীর্বাদপুষ্ট। কিন্তু পরিচালক সেটি কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এটা করতে পারলে হয়তো মূল সিনেমা এক থা টাইগার (২০১২)-এ যে নিঃসঙ্গ এজেন্টকে দেখা গিয়েছিল তাতে হয়তো আরো গভীরতা যুক্ত হত।

আপনি হয়তো জানেন এই ধরনের সিনেমা কীভাবে শুরু হয়। কোনো একটি স্থানের নাম টাইপ করা হতে থাকবে স্ক্রিনের একেবারে নিচের দিকে। এবং এরিয়েল শট ক্লোজ ইন হয়ে আসবে। সেখান থেকে কাট দিয়ে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর একটি চরিত্রের প্রবেশ ঘটবে দৃশ্যপটে। এই ক্ষেত্রে আবু উসমান নামের এক চরিত্র। এরপর কাহিনী সামনে এগিয়ে যাবে।

লেখক আবু উসমান চরিত্রটিতে মোটিভ এবং পেছনের গল্প যোগ করার চেষ্টা করেছেন। অনেকটা জানা কাহিনীর মতোই। আমেরিকায় পড়াশোনা করা, অনৈতিকভাবে নির্যাতনের শিকার। তবে এই সিনেমায় গল্পটি ভালোই কাজ করেছে। আবু উসমান চরিত্রে তাক লাগিয়ে অভিনয় করেছেন সাজিদ ডেলাফ্রোজ। সে যেন টাইগারের মুখোমুখি হওয়ার জন্যই অপেক্ষা করছিল।

এই ভিলেনরা একটু ভিন্নভাবেই তাদের নিজেদের মতো করেই হাস্যকর হয়ে থাকে। এরা সবসময়ই খুব বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ এবং ভয়ানক হয়ে থাকে। কিন্তু কাজের সময় এসে তাদের সব দক্ষতা হাস্যকরভাবে এলোমেলো হয়ে যায়। এরা আপনাকে ঠিক পেছন থেকে ডেকে উঠবে যখন আপনি হয়তো ভাবছেন যে আপনি হয়তো তার থাবার আয়ত্বের বাইরে চলে এসেছেন। অথবা তারা নায়কের সেরা বন্ধুকে হত্যা করে বসে। আর তখনই নায়ক তার যথাযথ চেহারা নিয়ে প্রধান খেলোয়াড়টি হিসেবে হাজির হয়। আপনি হয়তো এমন দৃশ্য আগেও দেখেছেন, সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে বা ডায়ালগ আউড়িয়ে।

আপনি যা যা ভেবেছেন টাইগার জিন্দা হ্যায় তার সবই করেছে। ভারত-পাকিস্তান বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠা করা থেকে শুরু করে দুর্ধর্ষ এজেন্ট টাইগার এর সেক্যুলার পরিচয়, সবই আপনি দেখতে পাবেন। আর ভালো বিষয় হলো সবকিছুই ঘটেছে খুব দ্রুত। ১৬১ মিনিটের টাইগার জিন্দা হ্যায় যদি ধীর গতির হতো তাহলে সিনেমাটি পুরোই ধ্বংস হয়ে যেত।

একটি মাত্র গানকেই ইয়াশ রাজ ফিল্মস এর মানদণ্ডে ভালো সংযুক্তি বলে গণ্য করা যায়। আর টম স্ট্রুদার্স এর এর অ্যাকশন বেশ আভিজাত্য যোগ করেছে। তবে ভক্তরা সল্লু ভাইয়ের বাজুকা চালনা দেখে হয়তো রেগেও যেতে পারে।

এসব কিছুর মাঝে ক্যাটরিনার অবস্থানটি কোথায়। ক্যাটরিনা খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই তার অংশটির যোগান দিয়েছে। পুরো সিনেমাটি টাইগারের ক্যারিশমা এবং যুদ্ধ দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল। তথাপি ইকরিতের সিটি কাউন্সিল বিল্ডিংয়ের ভেতরে লম্বা অ্যাকশণ দৃশ্যে ক্যাটরিনার জোয়া চরিত্রটি দর্শকের পুরো মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে তার দিকে। এই দৃশ্যে ক্যাটরিনার দৈহিক সৌন্দর্যও দর্শকের নজরকাড়ার জন্য বড় ভুমিকা পালন করেছে। তবে এরপরও দৃশ্যটির জন্য ক্যাটরিনার উদ্দেশ্যে হাততালি বাজাতে পারবেন আপনি।

সালামানও তার স্লো মোশন এবং ক্লোজআপ শটগুলো উপভোগ করেছে। সে তার কাছ থেকে প্রত্যাশা মতোই ডেলিভারি দিয়েছে। যদিও এর ফলে অন্যদেরকে খরচের খাতায় ফেল দিতে হয়েছে। আঙ্গাদ বেদি বাধ্য হয়েছে একটি ক্রমাগত বিরক্তিকর চেহারা নিয়ে হাজির হতে।

বেশ কয়েকটি সারপ্রাইজও আছে। সেসবও বেশ ভালো কাজ করেছে। আসলে টাইগার জিন্দা হ্যায় এমন একটি সিনেমা আপনি সালমান খানের কাছ থেকে ঠিক যেমনটা চান। সুতরাং সিনেমাটি আপনাকে মোটেও হতাশ করবে না।

হলিউডের সঙ্গে পুরোপুরি তাল মেলাতে না পারলেও টাইগার জিন্দা হ্যায় তে যা করা হয়েছে একজন বলিউডি সুপারস্টারকে নিয়ে এর চেয়ে বেশি আর কিছু করা হয়তো সম্ভব হবে না। তার জন্য শুধু আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষণ না সালমান খান সবচেয়ে দুর্ধর্ষ অপরাধী এবং তাদের ছোড়া রকেট লাঞ্চারকে সুকৌশলে পরাস্ত করবে ঘোড়ায় চেপে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে