স্পোর্টস ডেস্ক: বেওয়ারিশ দেহ সৎকার করেই প্রশংসা কর তাঁকে হয়তো অনেকেই চেনেন মহীশূর শহরে। কিন্তু, তার বাইরে কেউ নামই শোনেনি ‘বডি মিয়াঁ’র। আর তাঁকে সম্মান জানিয়েই এক টুইট করেছেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট তারকা ভি ভি এস লক্ষ্মণ। কিন্তু কে এই ‘বডি মিয়াঁ’? আর এমন কী করেছেন তিনি যে, লক্ষ্মণ স্বয়ং এত প্রশংসা করেছেন তাঁর!
বডি মিয়াঁর আসল নাম আয়ুব আহমেদ। ছোট থেকেই সে অন্য বাচ্চাদের থেকে ছিল বেশ আলাদা। অন্যরা যখন স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করছে, তখন মসজিদের বাইরে বসে থাকা ভিখারিদের সঙ্গে সময় কাটাত ১০ বছরের আয়ুব। জানতে পেরে উত্তমমধ্যম মারও খেয়েছিল বাবার কাছে। কিন্ত তার বক্তব্য ছ্লি, ওই দীন-দুঃখী মানুষগুলোর তার সাহায্যের প্রয়োজন। তাই সে তাদের কাছে যায়।
পড়াশোনো স্বাভাবিকভাবেই হয়নি আয়ুবের। একটু বড় হয়ে বাবার সঙ্গেই কুলির কাজ শুরু করে আয়ুব। এবং তার সমস্ত আমদানিই সে বিলিয়ে দিত গরীবদের। এর পরেই ঘটে গেল তার জীবনের সেই আশ্চর্য ঘটনা।
বছর ২০ বয়স তখন আয়ুব আহমেদের। বন্ধুর গাড়ি করে মহীশূর থেকে যাচ্ছিলেন গুন্দুলুপেত। দেখেন, পথের মাঝেই পড়ে রয়েছে একটি দেহ। ভেবেছিলেন, মৃতের আত্মীয়-পরিজন নিশ্চয়ই রয়েছেন এবং তাঁরাই যা করার করবেন। কিন্তু, না! প্রায় ৮ ঘণ্টা পরে একই রাস্তা দিয়ে ফেরার সময়ও দেখেন যে, দেহটি একই জায়গায় পড়ে রয়েছে। আর থাকতে না পেরে, বন্ধুর গাড়িতেই দেহ উঠিয়ে নিয়ে নেন আয়ুব। নিজের শহরে ফিরে পুলিশে খবর দেন। পুলিশের তরফ থেকে আয়ুবকে পুরস্কৃত করা হয় তাঁর মানবিকতার জন্য।
কিন্তু, পরিবার ও বাবা তাঁর এই কাজে বিরক্ত হবেন ভেবে শহর ছেড়ে বেঙ্গালুরু পালিয়ে যান আয়ুব। কাজ শুরু করেন একটি জল পরিশোধনাগারে। সেখানে তাঁর কাজে খুশি হয়ে আয়ুবকে টাকা দিয়ে পুরস্কৃত করে কর্তৃপক্ষ। সেই টাকা নিয়ে আয়ুব সোজা চলে আসেন মহীশূরে। বন্ধুর সেই অ্যাম্বাসাডর গাড়িটি কেনেন, যেটায় করে জীবনের প্রথম বেওয়ারিশ লাশ নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত, হাজারেরও বেশি এমন বেওয়ারিশ দেহ পুলিশের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন আয়ুব। যে কারণে তাঁর নাম হয়ে যায় ‘বডি মিয়াঁ’। অনেক সময়ে সৎকারও করেছেন অনেক দেহ। এই কাজ থেকে আয়ুবের কোনও আয় হয় না। কিন্তু তিনি মনে করেন, সমাজের জন্য তিনি ভাল কাজই করছেন।
আয়ুবের পরিবার চলে তাঁর স্ত্রীর উপার্জনে। তিনি দর্জির কাজ করেন। স্ত্রী ও দুই মেয়ে, আয়ুবের এই সামাজিক কাজে কোনও বাধাই দেন না। এক ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আয়ুবের ইচ্ছে একটি অ্যাম্বুল্যান্স কেনার। যাতে, আরও ভাল ভাবে কাজ করতে পারেন তিনি।এ হেন মানুষের স্তুতি করতে খুব স্বাভাবিকভাবেই তাই পিছ-পা হননি প্রাক্তন ক্রিকেটর।-এবেলা
এমটি নিউজ/আ শি/এএস