বিনোদন ডেস্ক : আড়াই দশক ধরে যখন তিনি দক্ষিণি ও বলিউডের ছবিতে রাজত্ব করছেন, তখন তার সুডৌল দেহসৌষ্ঠবই পুরুষহদয়ের স্পন্দন বাড়িয়ে দিত। দীর্ঘ পনেরো বছর পরে যখন ‘ইংলিশ ভিংলিশ’-এর শশী হয়ে ফিরলেন, তখন কিন্তু তিনি ছিপছিপে, তন্বী।
গত পাঁচ বছর শ্রীদেবীর এই ‘নতুন রূপ’ নিয়ে চর্চা কম হয়নি। তারিফ কুড়িয়েছেন প্রচুর। নামজাদা বিদেশি পত্রিকার মলাটে ছবি বেরিয়েছে। কিন্তু শনিবার রাতে নায়িকার হঠাৎ প্রয়াণে অনেকের মনেই সন্দেহের কাঁটা। ৫৪ বছরের নায়িকার কৃশকায় চেহারার মধ্যেই কি মৃত্যুর বীজ বাসা বেঁধেছিল? যৌবনের মোহই কি কাল হয়ে দাঁড়ালো তার জীবনে?
নেটরাজ্য ছেয়ে ফেলা একটি ফেসবুক পোস্টের প্রশ্ন, জীবনের ঘড়ির কাঁটা উল্টো দিকে ঘোরাতে বার বার কসমেটিক সার্জারির তাড়নাই কি তার জীবন এতটা ছোট করে ফেলল? পোড়খাওয়া প্লাস্টিক বা কসমেটিক সার্জনদের একাংশ এই ধারণার মধ্যে যুক্তির থেকে আবেগের ভাগটাই বেশি বলে মনে করছেন।
প্লাস্টিক সার্জন মনীশমুকুল ঘোষ বা কসমেটিক সার্জন মনোজ খান্নার মতে, ক্যামেরার সামনে নিখুঁত হতে চামড়ার ওপরে অস্ত্রোপচারে বাড়তি ঝুঁকি নেই। নাক-ঠোঁট সুন্দর করতে অস্ত্রোপচার শরীরে দীর্ঘমেয়াদি ছাপ ফেলে না। ঢিলেঢালা চামড়া টানটান করতে বোটক্সের মাত্রা নিয়ে ডাক্তারদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে।
মনোজ খান্না বলছেন, ‘এই ধরনের ইঞ্জেকশনের প্রতি বেশি নির্ভরতা ভাল নয়।’ কিন্তু তা প্রাণঘাতী হতে পারে এমনটা বলছেন না কেউই। চামড়ার বলিরেখা সারানোর অস্ত্রোপচারে অভিজ্ঞ পিয়ালি মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘২৫-৩০ বছর ধরে এই ধরনের চিকিৎসা করিয়েও সুস্থ রয়েছেন অনেকেই।’
তবে ডাক্তাররা বলছেন, নিরন্তর তরুণ থাকতে চাওয়ার জেদ মানসিক চাপও তৈরি করে। যার প্রভাব অবশ্যই শরীরে পড়ে। আটের দশকের মাঝামাঝি শ্রীদেবীই কিন্তু প্রথম কসমেটিক সার্জারি করে ভোলবদল করার রেওয়াজ শুরু করেন বলিউডে।
সমস্যাটা অস্বীকার করছেন না অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তও। ‘রোগা বা বলিরেখাহীন হতে গিয়ে চোখমুখ অস্বাভাবিক দেখানোটা ভাল নয়।’ ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পালও বলছেন, মধুবালা-নার্গিসদের ঢলঢলে রূপ এখন বর্ষীয়ান অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরও না-পছন্দ। এখানেই সতর্ক করছেন ডাক্তাররা।
কার্ডিওথোরাসিক সার্জন কুণাল সরকার বা হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়দের মতে, দ্রুত ওজন ঝরিয়ে রোগা হতে গিয়ে শরীরে নানা ভারসাম্য টালমাটাল করে বড় বিপদ হতে পারে। ‘খিদে কমানোর ওষুধ খাওয়ার প্রবণতা হার্টের জন্য ভাল নয়,’ বলছেন সত্যজিৎ বসু।
রাতারাতি ওজন কমিয়েই তো নতুন রূপে আর্বিভূত হয়েছিলেন শ্রীদেবী। সে রূপ এতটাই ‘নতুন’ যে, মেয়ে জাহ্নবীর পাশে দাঁড়ালে মা-মেয়ের তফাত বোঝা যেত না! মোহই কি কাল হয়ে দাঁড়ালো শ্রীদেবীর জীবনে? এখন প্রশ্ন উঠছে।
এমটিনিউজ/এসএস