বুধবার, ০৯ মে, ২০১৮, ১১:৩৭:৩৪

কোন ক্লাশে পড়া অবস্থায় নায়িকা হয়েছেন শাবনূর? জানলে অবাক হবেন!

কোন ক্লাশে পড়া অবস্থায় নায়িকা হয়েছেন শাবনূর? জানলে অবাক হবেন!

বিনোদন ডেস্ক: জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর। একসময়ের সাড়া জাগানো এই অভিনেত্রী তাঁর ঢাকার যাপিত জীবনের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন। যশোর জেলার শার্শা উপজেলার নাভারণে জন্মগ্রহণ করেন শাবনূর। তবে শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো কেটেছে এই ঢাকায়ই। জীবনের একটা বড় অংশ কাটিয়েছেন ঢাকার ইন্দিরা রোডে। সেখান থেকেই সিনেমায় অভিষেক। তখন সবে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। একটা সময় ইন্দিরা রোড ছেড়ে চলে যান ইস্কাটনে। বর্তমানে সেখানেই রয়েছেন।

ঢাকার বাইরের চেয়ে ভেতরটা অনেক বেশি দেখেছেন বলে তিনি মনে করেন। সেটি কেমন? ‘অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় নায়িকা হয়ে গেলাম। তখন থেকে বলতে পারেন নিজস্বতা বলতে আর কিছু ছিল না। যে বয়সটায় আমি বান্ধবীদের নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খাব, চটপটি খাব, নানা খুনসুটি করব—সেই বয়সটায় আমি পুরোদস্তুর নায়িকা বনে গেলাম। আর তখনকার নায়িকা মানে ‘স্টার’। কোথাও গেলে একেবারে ভিড় লেগে যেত পেছনে। ফলে একটু অবসর পেলে বাংলাদেশের চেয়ে বিদেশেই বেশি ঘোরা হতো’—বললেন শাবনূর। আর ভেতর বলতে? ‘এই যে ঢাকার বাইরের রূপ-লাবণ্যের চেয়ে ভেতরের আভিজাত্যের সঙ্গে বেশি পরিচিত ছিলাম।

শাবনূর সিনেমায় বড় বড় মানুষের আনাগোনা ছিল। বিভিন্ন পার্টি, অনুষ্ঠান তো লেগেই থাকত। এসবের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম বেশি। তবে আমি কিন্তু সাধারণ মানুষ। সব সময় সাধারণ কিছু খুঁজতাম। কিন্তু একটা বৃত্ত না চাইলেও ঘিরে রাখত। সেখান থেকে আর বের হতে পারতাম না। আমার অনেক ইচ্ছা ছিল, সারা ঢাকা হেঁটে হেঁটে ঘুরব। সেটি কখনো হয়ে ওঠেনি। আর কোনো দিন হবে বলেও মনে হয় না।’

ঢাকার ক্রমাগত বদলের সঙ্গে, তার সামাজিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আন্তরিকতাও অনেক কমে গেছে বলে মনে করেন তিনি। শাবনূর বলেন, ‘জীবনটা এখন টেকনোলজিনির্ভর হয়ে গেছে। মানুষের সঙ্গে মানুষের নয়। এখন মানুষের সঙ্গে টেকনোলজির সম্পর্ক বেশি। যে যত টেকনোলজির সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে, সে তত আধুনিক। ঢাকায় তো এটা আরো বেশি। আগেকার দিনে সবাই মিলে হৈ-হুল্লোড় করা, ঘোরা—এসব অনেক কমে গেছে। এই যে আমার এতটুকুন ছেলে—সেও মোবাইল কী, তা বুঝে গেছে। ল্যাপটপ বুঝে গেছে। এখন মনোযোগ ওই দিকেই বেশি। টেকনোলজি মানুষের আত্মিক সম্পর্কের মধ্যে একটা গণ্ডি কেটে দিয়েছে। আমরা কিন্তু শত ব্যস্ততার মধ্যেও যতটুকু সময়ই পেতাম, তা পরিবারের সঙ্গে কাটাতাম। এখনই সচেতন না হলে, আমার মনে হয় এই দূরত্বটা একসময় আরো ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেবে আমাদের।’

ক্রমাগত পরিবর্তিত রাজধানীর বিরাজমান পরিস্থিতি কিভাবে দেখেন? ‘ঢাকায় যারা বসবাস করে, তারা তো পরিবর্তনের মধ্যেই আছে। তাদের নানা রং ও ঢঙের কষ্টের মধ্যে পড়তে হয় প্রতিনিয়ত। যানজট, ময়লা-আবর্জনা, জলাবদ্ধতা, বৃষ্টি হলে রাস্তা নাকি নদী বুঝে ওঠা যায় না। চলাচলে অযোগ্য খানাখন্দে ভরা সব রাস্তা-ঘাট। অপর্যাপ্ত গণপরিবহন, ফুটপাতে যত্রতত্র দোকান বসিয়ে পথ রোধ করা, রাস্তার মাঝখানে গাড়ি পার্কিং করে জ্যাম সৃষ্টি করাসহ নানাবিধ সমস্যা ঢাকায় বসবাসরত নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী। সত্যি বলতে, একটা সময় এগুলো সহনীয় পর্যায়ে ছিল, যা এখন অতিরিক্ত হয়ে পড়েছে। আমার কাছে ঢাকার পরিবর্তন বলতে এটাই দেখি।’

এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ কী বলে মনে করেন জানতে চাইলে শাবনূর বলেন, ‘প্রথম বলতে হবে শহর বলতে আমরা কী বুঝি? অনেক মানুষ শহর বলতে বুঝে থাকেন উন্নত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আকাশছোঁয়া দালানকোঠা, পিচঢালা রাস্তা, কর্মক্ষেত্র, চিকিৎসার সুব্যবস্থা, শিল্প-সাহিত্য, সহজ যাতায়াত ইত্যাদির সহজ প্রাপ্তি ও বিকাশের ক্ষেত্র। সহজ কথায় আধুনিক জীবনযাপনের সব উপাদানসমৃদ্ধ একটি আদর্শ স্থান, যেখানে নাগরিকরা তাদের চাহিদা ও প্রাপ্তির সমন্বয় ঘটাতে পারবে। মূলত একটি আদর্শ শহর হওয়া উচিত মনোরম, উৎসবমুখর ও প্রাণবন্ত। তাই বলা যায়, উন্নত জীবনযাপন এবং সামাজিক সুবিধার আকর্ষণেই মানুষ আজ নগরমুখী। এসব সুবিধা দেশের অন্যান্য প্রান্তেও ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই মানুষের চাপ কিছুটা কমবে বলে মনে হয়। আর অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপেই অধিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এসব চাপ কিভাবে কমানো যায়, সেদিকে কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে