শনিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৮, ০৮:৫৫:৩৮

আইয়ুব বাচ্চুর মতো ক্ষণকালের অতিথি ছিলেন যারা

আইয়ুব বাচ্চুর মতো ক্ষণকালের অতিথি ছিলেন যারা

বিনোদন ডেস্ক: শিল্পী সাজেদ ফাতেমী, ‘নকশীকাঁথা’ নামের লোকগানভিত্তিক ব্যান্ড এর ভোকালিস্ট। তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম “কতদিন তোমাকে দেখিনা” প্রকাশিত হয় ২০০৩ সালে। এর পর কাজ করেন বেশকিছু মিশ্র অ্যালবামে। টেলিভিশনে লোকগানের বেশ কিছু অনুষ্ঠানে গবেষণা ও উপস্থাপনার কাজ করেছেন সাজেদ ফাতেমী। পেশা হিসেবে বর্তমানে তিনি সাংবাদিকতায় রয়েছেন।

জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত দেশের প্রায় সকল মহলের মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছে শোক ও শ্রদ্ধা। বাংলাদেশের অকাল প্রয়াত শিল্পীদের নিয়ে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস লিখেছেন শিল্পী সাজেদ ফাতেমী। তার স্ট্যাটাসটি নিচে হুবহু তোলে ধরা হল-

‘মাত্র ৩৯ বছর বয়সেই ফুরিয়ে গেছেন এ দেশের মেলোডি গানের অন্যতম শিল্পী শেখ ইশতিয়াক (১৯৬০-১৯৯৯)। অসামান্য ভরাট কণ্ঠের অধিকারী খালিদ হাসান মিলু (১৯৬০-২০০৫) পেয়েছিলেন ৪৫ বছরের আয়ু। বাংলা ব্যান্ড সংগীতে ব্যতিক্রমী ধারার প্রবর্তক সঞ্জীব চৌধুরী (১৯৬৪-২০০৭) বেঁচে ছিলেন ৪৩ বছরের এক মাস কম। পপ সম্রাটখ্যাত আজম খান (১৯৫০-২০১১) এবং এ দেশে আধুনিক, সফট মেলোডি, মেলো রক ও হার্ড রকের অন্যতম পথিকৃৎ লাকি আখান্দ (১৯৫৬-২০১৭) সেই তুলনায় বেশি বেঁচেছেন। দুজনই জীবন পেয়েছেন প্রায় ৬১ বছর। ফোক ও ধ্রুপদী ঘরানার শিল্পী ও বংশীবাদক বারী সিদ্দিকী (১৯৫৪-২০১৭) আরেকটু বেশি, ৬৩ বছর। সর্বশেষ চলে গেলেন হার্ড, সফট ও অলটারনেটিভ রকার, এলআরবি ব্যান্ডের ভোকাল, উপমহাদেশের অন্যতম সেরা গিটারিস্ট আইয়ুব বাচ্চু (১৯৬২-২০১৮)। পেলেন মাত্র ৫৬ বছরের এক কর্মময় জীবন।

শেখ ইশতিয়াক বাদে বাকি ছয়জন শিল্পীর মৃত্যু হয়েছে এই শতাব্দীতে। এই শতাব্দী যেন আমাদের সংগীত শিল্পীদের চলে যাওয়ারই বছর। আমি কোনো মৃত্যুকেই ‘অকাল’ বলতে রাজি নই। তাহলে এখনই যে শিশুটি পৃথিবীতে জন্ম নিল, তাকেও আমার বলতে হবে – একটি শিশুর ‘অকাল’জন্ম হলো। কাল কিংবা অকাল নির্ধারণের কোনো ক্ষমতা মানুষের হাতে নেই।

হাতেগোনা যে ক’জন শিল্পীর প্রতিভায় স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের সংগীতজগৎ বিকশিত হয়েছে, উপরিল্লিখিত সাতজন শিল্পীর নাম নিশ্চয় সবার উপরে থাকবে। অল্প আয়ুর হলেও প্রত্যেকেই নিজ নিজ মেধায় কোটি কোটি সংগীতপ্রেমী মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন । তাঁরা সত্যিই ভাগ্যবান।

একটি কথা না বললেই নয়। একজন সংগীতশিল্পীর জীবন আর দশটা পেশাদারি জীবনের মতো নয়। একজন শিল্পী একটি কনসার্টের মঞ্চে ওঠা মানে তার মাথায় থাকে হাজার হাজার কিংবা লাখ লাখ দর্শক শ্রোতার মন জয় করার পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ। সেই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য শিল্পীকে দীর্ঘ সময় অন্য এক অনুভবের জগতে ডুবে থাকতে হয়, যা মোটেই সাধারণ মানুষের কাজ নয়। সারা জীবন একইভাবে ডুবে ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু ভাই। মৃত্যুর আগের দিন রংপুরে তাঁর জীবনের শেষ কনসার্টে সেই পরিমাণ মনঃসংযোগ করতে পারেননি তিনি। এ কারণে তাঁর মধ্যে ভীষণ হতাশা ভর করা বিচিত্র কিছু নয়। সেই হতাশার ধকল সামলে উঠতে সাময়িক নিদ্রা গেলেন তিনি।

আমরা জানি, কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। তাই জীবনানন্দ দাশের কবিতার মতো করেই আমাদের মাঝে যুগে যুগে ফিরে আসবেন প্রিয় আইয়ুব বাচ্চু ভাই’।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মৃতুবরণ করেন দেশের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী ও উপমহাদেশের প্রখ্যাত গিটারিস্ট আইয়ুব বাচ্চু।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে