বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৯, ০৩:৩৩:১৮

অসহায় মানুষকে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ার কাজ করেন রাশেদ সীমান্ত

অসহায় মানুষকে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ার কাজ করেন রাশেদ সীমান্ত

মাহতাব হোসেন: 'ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ঢাকা ক্যাম্পাস থেকে অনার্স শেষ করেই চাকরিতে জয়েন করি। সেটা ২০১১ সালের ঘটনা। পরিবারের বড় ছেলে আমি। অনেক দায়িত্ব, তাই চাকরিতে মনোযোগী হতে হলো আমাকে। বৈশাখী টিভির মার্কেটিং সেকশনে কাজ করি। ধীরে ধীরে আমি অনুষ্ঠানের প্রিভিউ কমিটির সদস্য হই। যেখানে আমার কাজ নাটকে দেখা ও পর্যবেক্ষণ করা। এই নাটক পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েই মনে হতো এই জায়গায় এভাবে অভিনয় না করে অন্যভাবে করলে ভালো হতো। আমার মন্তব্য , আমার পর্যবেক্ষণ খেয়াল করতেন আমাদের ডিএমডি টিপু আলম মিলন স্যার। তিনি ২০১৮ সালে আমাকে 'যেউ লাউ সেই কদু' নাটকে অভিনয় করতে বলেন। অভিনয়টা আমার কাছে চ্যালেঞ্জ মনে হলো, কিন্তু গ্রহণ করে ফেললাম। তারপর তো...'

রাশেদের বাক্য শেষ হয়নি। তবে তার সেই বাক্যের পরবর্তী অংশটুকু সবাই জানেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন আলোচিত নাম রাশেদ সীমান্ত। 'মধ্যরাতের সেবা' নাটকের সেই দৃশ্য যা লাখো মানুষের চোখে জল এনে দিয়েছে। ঈদ নাটকের অসংখ্য নাটকের ভিড়ে একজন অপরিচিত রাশেদ যেন এখন 'নায়ক।' তারকাদের ছাপিয়ে রাশেদ সীমান্ত এখন মধ্যমণি। অনেক নামী নির্মাতাও রাশেদের অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। পুর বরিশালের সংলাপ হলেও কখনোই বরিশালে বসবাস করেননি তিনি। রাশেদের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে টঙ্গিতে। তবে ভোলা জেলার সঙ্গে একটা সুতোর টান রয়েছে। কেননা নানা-দাদা বাড়ি সেখানেই। আর সে সুত্রেই বার কয়েক যাওয়া হয়েছে সেখানে।

'মধ্যরাতের সেবা' নাটকে রাশেদকে দেখা যায় একজন বাইক সেবাদানকারী হিসেবে। যিনি মায়ের মৃত্যুর পর রাতের কঠিন ও নির্মম ঢাকার অসহায় মানুষকে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ার কাজ করেন। কিন্তু অর্ষা তাঁকে না বুঝেই রাইড শেয়ারিং এর বাইক চালক মনে করে গালিগালাজ করেন। এই গালিগালাজের উত্তরে রাশেদের কথাগুলো দর্শক হৃদয়কে বিদীর্ণ করেছে।  

রাশেদ বলেন, 'আসলে এমন ঘটনা ঘটবে আমি ভাবিনি। আমি শুধু আমার অভিনয়টুকু করেছি। আমার কাজটুকু আমি সর্বোচ্চ সততার সাথে করেছি। অভিনয় যে মানুষকে এতো গভীরভাবে ছুঁয়ে যাবে তা কে ভেবেছে? এক জীবনে আমার শুধু এই নাটকের জন্য প্রাপ্তি অনেক। মানুষের মন্তব্য, আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। মানুষের এতো নিবিড় আবেগ, এতো কমিটমেন্ট আমার নিজের চোখেও জল এনে দিয়েছে। মানুষ যখন বলে ভাই, আপনার এই নাটক দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি এখন থেকে প্রতিদিন একটি করে ভালো কাজ করবো তখন এর চেয়ে বড় প্রাপ্ত আর কি হতে পারে?'

একান্নবর্তী পরিবারের বেড়ে ওঠা রাশেদ সীমান্ত টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৪ সালে এসএসসি পাস করেন। ২০০৬ সালে উত্তরার ঢাকা বয়েজ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।  শৈশব কৈশোর কেটেছে টঙ্গিতে। অনার্স শেষ করেই চাকরিতে যোগদান করেন বিক্রয় ও বিপণন বিভাগে। এখন বিভাগটির ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি। বলা যায় তিনি এখন পর্যন্ত কোনো টেলিভিশন চ্যানেলের সর্বকনিষ্ঠ বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের ইনচার্জ।

রাশেদ বলেন, 'আমার এই যে এখনকার যতটুকু ক্রেডিট তার অধিকাংশই দিতে চান নিজের প্রতিষ্ঠানের ডিএমডি স্যারকে। স্যার যদি আমি আমাকে অভিনয় করতে না পাঠাতেন তাহলে আজ হয়তো যে ক'জন আমাকে চিনেছেন তারাও হয়তো চিনতেন না।'

২০১৮ সালে 'যেউ লাউ সেই কদু' নাটক দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও একই বছর যে 'যেউ লাউ সেই কদু' ২ ও .বউয়ের দোয়া পরিবহন নাটকে অভিনয় করেন। এই নাটকগুলো টিআরপিতে শীর্ষে ছিল। যার কারণে সীমান্তকে অনেকেই চিনতে শুরু করে। পরিচিত হতে থাকে একটি মুখ। গত রোজার ঈদে রাশেদ সীমান্তের তিনটি নাটক টিআরপিতে বেশ ভালো দখল নেয়। এগুলো হলো- 'বরিশাল টু ঢাকা' 'ভাবির দোকান' 'বৌয়ের দোয়া-২।' বরিশাল টু ঢাকা রাশেদ সীমান্তকে নতুন পরিচয় এনে দেয়।

সীমান্ত বলেন, 'আমি কৃতজ্ঞ, আপ্লুত। এতো মানুষ আমাকে উজাড় করে ভালোবাসা জানিয়েছেন। এতো বেশি ভালোবাসা আমার নেওয়ার ক্ষমতা নেই। কিন্তু তারপরেও আমাকে নিতে হচ্ছে। আমি চাই দোয়া, সামনে যেন ভালো কাজ করতে পারি।' নাটকের সহ-অভিনেত্রী অর্ষাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, 'আমি এক টানে কথাগুলো শেষ করি, সহকর্মীর এক্ষেত্রে সবাক-নির্বাক ভূমিকা থাকে। আর নির্মাতা জিয়াউর রহমান জিয়া ভাইয়ের পরামর্শ ছাড়া হয়তো এমন শট আমি নাও দিতে পারতাম.'

রাশেদ সীমান্ত বিয়ে করেছেন,  স্ত্রীর নাম ফাতেমা আক্তার। তিন বছর বয়সী সন্তান সুবাতা রাহিক জারিফাকে রাশেদ সীমান্ত-ফাতেমা আক্তার সীমান্তের সুখের সংসার। ভক্তদের কাছে দোয়া ছাড়া কিছুই চান না।-কালের কণ্ঠ 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে