শুভশ্রীকে নিয়ে চাপে প্রশাসন
বিনোদন ডেস্ক : কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়কে হেনস্থা করার ঘটনায় ক্রমশ চাপ বাড়ছে প্রশাসনের উপরে। ফালাকাটায় শনিবার রাতে কলেজের অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় তাকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন শুভশ্রী।
এ ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অনুষ্ঠানে ফালাকাটা থানার পুলিশ ছাড়াও র্যাফ মজুত ছিল। তার পরেও কী করে শুভশ্রী অভব্য আচরণের মুখে পড়লেন, তারও কোনও জবাব মেলেনি।
তবে জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, শুভশ্রীকে দেখার পরেই এমন কাণ্ড ঘটতে পারে, তা তারা ভাবতেও পারেননি। মঞ্চের কিছুটা দূরে অভিনেত্রীর গা়ড়ি যেখানে দাঁড় করানো হয়, সেখানে কোনও ব্যারিকেডও ছিল না। তখনই তাঁকে দেখতে ছুটে আসেন বহু মানুষ। পুলিশ ভিড় সামাল দিতে পারেনি। তবে ঘটনার সময় তোলা ছবিতে দেখা গিয়েছে, কয়েক জন পুলিশকর্মী দূরে চুপ করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথ জানান, সব ঘটনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে ঘটনার ভার লঘু করতে গিয়ে পাল্টা সমস্যাতেও পড়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। ফালাকাটার বিধায়ক তথা দলের ব্লক সভাপতি অনিল অধিকারী বলেছেন, ‘‘যা ঘটেছে তা নিন্দনীয়। তবে যা শুনেছি, তাতে মনে হচ্ছে শুভশ্রীর কিছুটা সংযত হওয়া উচিত ছিল।’’
তার বক্তব্য, ‘‘ভিড়ের মধ্যে দু’চার জন ছেলে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমাদের ছেলেরা পরে অভিনেত্রীকে গাড়িতে তুলে দেন।’’
তবে শুভশ্রীর কী ভাবে সংযত হওয়া উচিত ছিল, তার কোনও ব্যাখ্যা তিনি দেননি। সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ মিনতি সেনের বক্তব্য, ‘‘খুবই নিন্দনীয় মন্তব্য করেছেন তৃণমূল নেতা। তৃণমূল নেতাদের উচিত তাঁদের দলের ছেলেদের সংযত করা।’’
তবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও অনিলবাবুর সঙ্গে সহমত নন। শুভশ্রী-কাণ্ডে দলের কেউ জড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পার্থবাবু। পার্থবাবু রবিবার বলেন, ‘‘শুভশ্রী যে অভিযোগ করেছেন, তেমন ঘটনা ঘটে থাকলে তা দুর্ভাগ্যজনক। শুভশ্রী ফিরলে তার সঙ্গে কথা বলব। আমাদের দলের কেউ এই ধরনের আচরণ করে থাকলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
সেই সঙ্গেই শিক্ষামন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘অনুষ্ঠানের আয়োজক ছাত্র সংসদ ছিল ঠিকই। কিন্তু দর্শকের মধ্যে অনেক বাইরের লোকও ছিল। দর্শকদের মধ্যে থেকে কেউ অসভ্যতা বা অভব্যতা করে থাকলে তার জন্য তৃণমূলকে দায়ী করা ঠিক নয়।’’
অনেকটা একই সুরে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘শুভশ্রী জনপ্রিয় অভিনেত্রী। ফালাকাটা কলেজে শুধু ছাত্ররা নন, উপস্থিত ছিলেন আশপাশের গ্রামের বহু মানুষ। অতি উৎসাহীরা ছবি তুলতে ও কথা বলতে তাঁর কাছে গিয়েছিলেন। তবে ঘটনাটি দুঃখজনক। এর বেশি কিছু বলব না।” তবে এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি মহানন্দ বিশ্বাস জানান, তৃণমূল চাইছে বহিরাগতদের ঘাড়ে ঘটনার দায় চাপাতে। কিন্তু তা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘‘ফালাকাটা কলেজ টিএমসিপির দখলে। শাসক দলের ছাত্রনেতারা ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না। এখন ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’’
শনিবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ফালাকাটা কলেজ সংসদের বাৎসরিক অনুষ্ঠানেই এসে চরম অস্বস্তিতে পড়েন শুভশ্রী। মঞ্চে ওঠার সময় ভিড়ের মধ্যে কিছু মানুষের অভব্য আচরণে ক্ষুব্ধ হন তিনি। প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ অভিনেত্রীকে ভিড়ের মধ্যে কাউকে হাত দিয়ে দু’বার চড় মারতেও দেখেন কেউ কেউ। কোনও রকমে মঞ্চে উঠে আঙুল দিয়ে একটা নির্দিষ্ট দিকের ছাত্রদের দেখিয়ে অভিযোগ করেন, ‘‘ওই ছাত্রেরা আমার সঙ্গে অভব্য ব্যবহার করেছে। এই ব্যবহার আমি কেন, কোনও মেয়ের সঙ্গেই করা উচিত নয়।’’ তার পরে ওই অবস্থায় অনুষ্ঠান করার মতো মানসিকতা নেই জানিয়ে যাঁরা দীর্ঘ ক্ষণ তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে সটান গাড়িতে উঠে চলে যান। ঘটনার পর ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি সঞ্জয় দাস মঞ্চে উঠে ক্ষমা চান। রবিবার তিনি জানান, অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে তাঁরা নিজেরাই তদন্ত শুরু করেছেন।
কিছু দিন আগে কোচবিহারে রাসমেলার অনুষ্ঠানের শেষে কটূক্তির অভিযোগ তুলেছিলেন সঙ্গীত শিল্পী আকৃতি কক্কর। সেই বারেও অভিযোগের আঙুল ছিল শাসক দলের সংগঠনের দিকে। এ বার ফালাকাটায় শুভশ্রীর অভিযোগের পরে ডুয়ার্স উৎসবে মোনালি ঠাকুরের যাওয়া নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না শাসক দল ও প্রশাসন। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার জানান, মোনালির নিরাপত্তার জন্য আলাদা করে ৪০ জন মহিলা পুলিশ ও র্যাফ রাখা হবে।
২১ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন
�