এ বছরের বলিউড সেরা ১৫ সিনেমা
বিনোদন ডেস্ক : প্রতিবারের মতো এবারও বলিউডের সামনে উকি দিচ্ছে নতুন একটি বছর। অার পুরোনো দিনের ক্যালেন্ডারের প্রতিটি পরতে পরতে যেন লুকিয়ে রয়েছে বলিউডের সাফল্য গাঁথা। ২০১৫ সালটি হারিয়ে যাচ্ছে বলিউডের পাতা থেকে কিন্তু রেখে যাচ্ছে কিছু স্মৃতী। আর সেই স্মৃতীগুলোই আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই হারানো অতিতের কথা। এবছর হাঁসি তামাশার মাধ্যদিয়ে বলিউডে যেই সিনেমাগুলো মাতিয়ে রেখেছিল এমন কিছু সিনেমা সম্পর্কে আজকের অায়োজন। কলকাতা ২৪ এর এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়।
১. বাজরাঙ্গি ভাইজান : কবীর খানের পরিচালনায় ‘ভাইজান’ সালমানের এ ছবি, এ বছরের অন্যতম সেরা ব্লকবাস্টার৷ শুধু ব্যবসার নিরিখে নয়, ছবির সামাজিক বার্তা আর বলিউড পাড়ার বিনোদনের ফর্মূলাকে যেভাবে মেশানো হয়েছে তা সচরাচর দেখা যায় না৷ বলিউডে এরকম ছবি কমই হয় যেখানে বিনোদন ও সামাজিক বিষয় এমন সমানুপাতে মিশে যায়৷ সালমানকেও এ ছবিতে পাওয়া গিয়েছিল একেবারে অন্যভাবে৷ সাংবাদিকের চরিত্রে মাতিয়ে দিয়েছিলেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি৷ আর মুন্নির চরিত্রে সবার মন কেড়ে নিয়েছিলেন ছোট্ট হর্ষালি মালহোত্রা৷
২. বেবি : অক্ষয়কুমারের ক্যারিয়ারে নিঃসন্দেহে বড় জায়গা করে নেবে এ ছবি৷ নীরজ পান্ডের এ ছবির বিষয় ছিল দেশের সিক্রেট এজেন্সির কাজকর্ম৷ এজেন্টের ভূমিকায় ছিলেন অক্ষয়কুমার৷ সিক্রেট এজেন্সির কাজের সূত্রেই ছবি যেভাবে সন্ত্রাসদমনের ছবি তুলে ধরেছিল, তা আলোড়িত করেছিল সারা দেশের মানুষকে৷ অভাবিত বাণিজ্যিক সাফল্যও পেয়েছিল ছবিটি৷
৩. মাঝি : দশরথ মাঝির জীবন অবলম্বনে কেতন মেহতার এ ছবি৷ নিজের হাতে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করেছিলেন দশরথ৷ তার জীবনকে অনবদ্য সিনেম্যাটিক অভিব্যক্তিতে পরদায় তুলে এনেছিলেন কেতন৷ দশরথের চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি৷ একেবারে অন্যরকমভাবে পাওয়া গিয়েছিল রাধিকা আপতেকেও৷ কাহিনি, অভিনয়, দেশপ্রেম সব মিলিয়ে এ ছবি এ বছরের তো বটেই, হিন্দি সিনেমার আকার্ইভেও তুলে রাখার মতো সেরা একটি ছবি৷
৪. তলওয়ার : আরুষি হত্যা মামলা অবলম্বনে মেঘনা গুলজারের এ ছবি৷ এ ঘটনায় অনালোকিত সত্যির দিকে আলো ফেলতে চেয়েছিলেন পরিচালক৷ তবে তার সংযমের মুনসিয়ানাই ছবিটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে৷ কোনও পক্ষ অবলম্বন করেননি মেঘনা৷ ফলত ছবিটির কাঠামো নিরপেক্ষ হতে পেরেছে৷ ‘রশোমন’-এর আদলে ‘সত্যি’ সম্পর্কিত বিভিন্ন ভার্সনগুলিকে আলাদা আলাদা করে উপস্থাপিত করা হয়েছে৷ সেখান থেকে প্রকৃত সত্যি খুঁজে নেওয়ার ভার দর্শকের৷ এ কাহিনি নিয়ে আগেও ছবি হয়েছে৷ তবে আঙ্গিকে, উপস্থাপনায় এ ছবিটি স্বতন্ত্র হয়ে উঠেছে৷ ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন ইরফান খান৷
৫. দৃশ্যম : দক্ষিণী ছবির রিমেক হলেও বলিউডের ‘দৃশ্যম’ এ বছরের অন্যতম সেরা সিনেমা৷ উপস্তাপনার গুণে এ সিনেমা আলাদা হয়ে উঠেছে৷ ছবির চিত্রনাট্যেই ছিল টানটান উত্তেজনা৷ গোত্রে থ্রিলার এ ছবি জানিয়ে দিয়েছিল, চোখের দেখাও ভুল হতে পারে৷ পরিবারের জন্য একজন মানুষ কতদূর যেতে পারেন তাইই দেখিয়েছিলেন পরিচালক নিশিকান্ত কামাত৷ দুরন্ত অভিনয় করেছিলেন অজয় দেবগণ, টাবু, রজত কাপুর প্রমুখ৷
৬. তানু ওয়েডস মানু রিটার্নস : বছরের অন্যতম সেরা ‘এন্টারটেইনিং’ ছবি৷ ‘তানু ওয়েডস মানু’ ছবির সিকুয়েল এ ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন কঙ্গনা রানাওয়াত৷ দ্বৈত চরিত্রে এমন শক্তিশালী অভিনয় বহুদিন দেখা যায়নি বলিউড পাড়ায়৷ খোদ ‘বিগ বি’ কঙ্গনাকে নিজের হাতে চিঠি লিখে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন৷ আনন্দ এল রাইয়ের এ ছবি দাম্পত্যের এক গভীর সত্যিও তুলে ধরেছিল পরদায়৷
৭. পিকু : বাবা-মেয়ের সম্পর্কের মাধুর্য, পারিবারিক বন্ধন, প্রেম-সব মিলিয়ে ক্যানবাসে যেন এক মনোরম গার্হস্থের ছবি এঁকেচিলেন পরিচালক সুজিত সরকার৷ অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনয়ে অমিতাভ বচ্চন আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছিলেন কেন তিনি বিগ বি৷ যোগ্য সঙ্গতে ছিলেন দীপিকা পাড়ুকোন ও ইরফান খান৷
৮. মশান : এ ছবিতে দুটো আলাদা গল্প, কিন্তু কোথাও যেন তা মিলে গিয়েছিল এক পরিণতিতে৷ এই সমাজ কখনও প্রেমকে স্বীকার করে নেয়, কখনও বা জাতিভেদ প্রথার বদ্ধমূল ধারণায় মাঝে মধ্যে হয়ে ওঠে শ্মশানের মতো৷ এছবিতে আছে ছিল ইঙ্গিত৷ কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দারুণ অভিবাদন পেয়েছিল ছবিটি৷ পরিচালক নীরজ ঘ্যানের এ ছবিতে অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন রিচা চাড্ডা৷
৯. মার্গারিটা উইথ দ্য স্ট্র : ছবির বিষয় ছিল বেশ চমকে দেওয়ার মতো৷ সেরিব্রাল পালসির মতো জটিল অসুখে আক্রান্ত নারীরও যে কিছু চাহিদা থাকে, এই সমাজের ব্যবস্থায় তা যে অবদমিত হয়ে থেকে যায়-এরকমই বিষয় উঠে এসেছিল ছবিটিতে৷ সোনালী বোসের পরিচালনায় এ ছবিতে নিজের অভিনয় প্রতিভা চিনিয়ে দিয়েছিলেন কালকি কোয়েচলিন৷
১০. এনএইচ টেন : ছবিতে প্রযোজক হিসেবে অভিষেক হয়েছিল অানুশকা শর্মার৷ দুরন্ত অভিনয়ও করেছিলেন তিনি৷ খাপ পঞ্চায়তের নিষ্ঠুরতা এবং সেই সূত্রে ওম্যান এমপাওয়রমেন্টের বার্তা রাখা ছিল ছবিতে৷ ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন নভদীপ সিং৷
১১. দিলওয়ালে : এ বছরের ব্লকবাস্টার ছবি৷ বহুদিন পর পরদায় ফিরল শাহরুখ-কাজল জুটি৷ সে জুটির রসায়ন তো আছেই, অনসম্বল কাস্টিংয়ে রোহিত সেট্টি আরও একবার বাজিমাত করলেন৷ বলিউডি সিনেমার চেনা ফর্মূলাতেই এল সাফল্য৷
১২. বাজিরাও মস্তানি : পেশোয়া বাজিরাও ও তার আধা মুসলিম স্ত্রী মস্তানির জীবন অবলম্বনে তৈরি এ ছবি পরিচালক সঞ্জয় লীলা বনশালীর একটি ‘মাস্টারপিস’৷ সঞ্জয়ের সিগনেচার হিসেবে এ ছবিও নান্দনিক৷ সেই সঙ্গে দুরন্ত অভিনয় করেছেন রণবীর সিং, দীপিকা পাড়ুকোন ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়া? তবে অসহিষ্ণুতা নিয়ে দেশের বাতাস যখন ভারী, তখন ধর্মের উর্ধে প্রেমের নিশানকে আরও একবার উড়িয়ে দিল এ ছবি৷
১৩. জজবা : বহুদিন পর বড় পরদায় ফিরলেন ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন৷ কাহিনি দুই মায়ের৷ একজন অবশ্যই ঐশ্বরিয়া অার অন্যজন শাবানা আজমি৷ মাতৃত্বের ধর্মে দুই মা কোন পথে এগিয়েছেন তাইই উঠে এসেছিল সঞ্জয় গুপ্তার এ ছবিতে৷ বলা বাহুল্য, দুজনেই অসামান্য অভিনয় করেছিলেন৷ দারুণ অভিনয় করেছিলেন ইরফান খানও৷
১৪. দম লাগাকে হাইস্যা : এ ছবির বিষয়ও চিল চমকে দেওয়ার মতো৷ নায়িকাদের চেনা ছবিকে ভেঙে ভূমি পেদিনীকরের অভিষেক হয়েছিল ছবিতে৷ কল্পনা আর বাস্তবের মিল কখনও হয়, কখনও হয় না৷ কিন্তু তাতে সম্পর্ক কতখানি প্রভাবিত হয়, সম্পর্কের আসল বাঁধন কোথায় লুকিয়ে তাইই দেখিয়েছিল এ ছবি৷ আর সেই সঙ্গে ফিরে এসেছিল পুরনো দিনের গানের সুর৷
১৫. তামাশা : ইমতিয়াজ আলি আরও একবার ছকভাঙা জীবনের কথা শোনালেন এ ছবিতে৷ তেমন বাণিজ্যিক সাফল্য না পেলেও, ছবির বার্তা ঠিল সময়োপযোগী৷ অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন রণবীর কাপুর ও দীপিকা পাড়ুকোন৷
২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই
�