শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১২:০০:০৩

এ বছরের খসে যাওয়া তারকারা

এ বছরের খসে যাওয়া তারকারা

বিনোদন ডেস্ক : তারা ছিলেন এতোদিন আমাদের মাঝেই ছিলেন। কিন্তু আজ আর নেই৷ চলে যাবে এ বছরটি৷ আর বছরের গায়ে লেখা থাকা স্মৃতির ফলকে খোদাই থাকবে তাদের নামগুলো৷ এ বছরের স্মৃতি আসলেরই সুখের নয়৷ তা ভারাক্রান্ত করে আমাদের মনকে৷ তবু আমাদের পিছু ফিরে তাকাতে হয়, করতে হয় সেই সব তারকাদের স্বরণ৷ যারা চলে গেলেন- পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায় : গ্যালিলিও গ্যালিলি হয়ে আর তিনি বলবেন না, ‘দুর্ভাগা সে দেশ, যেখানে শুধু বীরেরই প্রয়োজন হয়৷’ টেলিভিশনের পরদায় মানসিক ভারসাম্যহীন স্ত্রীকে আর আগলে আগলে রাখবেন না তিনি৷ আর কোনও বৈঠকি আড্ডায় উদারগলায় গেয়ে উঠবেন না গান৷ আর ফিরবেন না পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়৷ দুর্ঘটনার কালো ছায়া তাকে টেনে নিয়ে গেল অকালমৃত্যুর পথে৷ শহরের এক নার্সিংহোমে ৫৪ বছর বয়সে যবনিকা পড়েছিল তার জীবন নাটকে৷ এবছর সপ্তমীর বিকেলে সাঁতরা গাছি ব্রিজের উপর বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় তার গাড়ির৷ ভর্তি করা হয় বেলভিউ নার্সিংহোমে৷ ধাপে ধাপে বেশ কয়েকটি অস্ত্রোপচার হয় পীযূষবাবুরও৷ কিন্তু ক্রমশ তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে৷ ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাকে৷ শেষমেশ চিকিৎসকদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হল৷ আর ঘরে ফেরা হল না তার৷ বাংলা সিনেমা ও থিয়েটারের দুনিয়া এবছরই হারিয়ে ফেলল এই কুশলী অভিনেতাকে৷ বাপ্পাদিত্য বন্দ্যেপাধ্যায় : মৃত্যু মানে না জীবনের কাঁটাতার৷ কাহিনি-চিত্রনাট্য-আলো-ক্যামেরা ফেলে জীবনের চার অধ্যায় থেকে তাই থেকে এবছরই চিরতরে বিদায় নিলেন পরিচালক বাপ্পাদিত্য বন্দ্যেপাধ্যায়৷ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বছরের গোড়াতে৷ পেস মেকার বসানোর পর সুস্থই ছিলেন৷ মেঘালয়ে গিয়েছিলেন নতুন ছবির শুটিংয়ে৷ সেখানেই আক্রান্ত হল নিউমোনিয়ায়৷ ভর্তি করা হয় শহরের এক নার্সিংহোমে৷ কিন্তু ফিরে আসা আর হল না৷ দিশা গঙ্গোপাধ্যায় : প্রায় প্রতিদিনই ছোটপর্দায় বাঙালির ড্রয়িংরুমে আসতেন তিনি৷ সেই মেয়েটিই যে এমন করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেবেন ভাবতে পারেননি কেউই৷ সবাইকে হতবাক করে আচমকাই এসেছিল অভিনেত্রী দিশা গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবর৷ পরবর্তীকালে জানা গিয়েছিল, তার প্রেম, সম্পর্ক ও বাড়ির সিদ্ধান্তের মধ্যে সমতা আনতে না পেরেই আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী৷ রনি চক্রবর্তী : অতল জলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি যে চিরকালের জন্য তলিয়ে যাবেন তা বোধহয় স্বপ্নেও কল্পনা করেননি কেউ৷ সন্তোষপুরে নিজের বাড়ির কাছের পুকুরে সাঁতার কাটতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল অভিনেতা রনি চক্রবর্তীর৷ টেলিভিশনের অ্যাহ্কর হিসেবে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন রনি৷ পরে অভিনয় করছিলেন বেশ কয়েকটি সিরিয়ালে৷ জানা গিয়েছিল, জিম করার পরই সাঁতারে নেমেছিলেন৷ সেই ক্লান্তিই কাল হল৷ এবছরই টলিউড পাড়া হারাল এই তরুণ অভিনেতাকে৷ সুচিত্রা ভট্টাচার্য : এবছরই দূরে চলে গেলেন ‘কাছের মানুষ’৷ বাংলা সাহিত্যের জগতে যেন আকস্মিক ইন্দ্রপতন৷ কোনও পূর্বসঙ্কেত ছিল না৷ পুজো উপন্যাসের কলম চলছিল সমানে৷ তারই মধ্যে অকস্মাৎ মৃত্যুর মুখোমুখি৷ আর ফিরে আসতে পারেননি সুচিত্রা ভট্টাচার্য৷ মৃত্যুকেই সঙ্গী করে পাড়ি দিয়েছিলেন ঘুমের দেশে৷ বাংলা সাহিত্য তো বটেই, বাংলা ছায়াছবির দুনিয়াতেও তার শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয়৷ আরতি আগরওয়াল : দক্ষিমের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মর্মান্তিক মৃত্যু হল এবছর৷ লিপোসাকশন অপারেশন করতে গিয়ে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে প্রাণ হারালেন তিনি৷ মাত্র ১৬ বছর বয়সে হিন্দি ছবি ‘পাগলপন’-এ৷ চুটিয়ে কাজ করেছেন বিভিন্ন ছবিতে৷ তবে ওবেসিটির সমস্যা ছিল৷ ক্রমশ কমছিল কাজ৷ আর তাই মেদ ঝরানোর অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন৷ কাল হল সেটিই৷ অপারেশনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াতেই মৃত্যু হয় তার৷ আশরাফ উল হক : এবছরই বলিউড হারাল বড় পরদা ও ছোট পরদার এই শক্তিমান অভিনেতাকে৷ ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’, ‘রাবণ’, ‘দিওয়ার’, ‘পান সিং তোমর’, ‘মাঝি’র মতো ছবিতে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি৷ থিয়েটার ও ছোট পর্দার দুনিয়াতেও ছিলেন সমান সাবলীল৷ দু’বছর ধরে ভুগছিলেন জটিল মাইলোডিসপ্ল্যাস্টিক সিনড্রোমে৷ মাত্র ৪৫ বছর বয়সে তার জীবনাবসান ঘটে৷ সৈয়দ জাফরী : ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ী’র প্রধান খিলাড়িকেই হারাতে হল এ বছরে৷ চলে গেলেন সৈয়দ জাফরি৷ হিন্দি সিনেমা তো বটেই, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ভারতীয় সিনেমার অন্যতম প্রতিনিধি ছিলেন তিনি৷ শেকসপিয়রের নাটক নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন সারা ইউরোপে৷ থিয়েটার দুনিয়ার এই শেকসপিয়রওয়ালাই প্রথম ভারতীয় অভিনেতা যিনি আন্তর্জাতিক অভিনয়মহলে খ্যাতিলাভ করেছিলেন৷ এবছরের নিয়তিতে লেখা থাকল এমন এক তারকার খসে পড়ার কাহিনিও৷ লাভ জাঙ্গুয়া : ‘জি করদা’, ‘ডান্স পে চান্স’ -এর মতো হিট গানের গায়ক ছিলেন তিনি৷ হঠাৎই আত্মহত্যা৷ এবছরই চলে গেলেন গায়ক লাভ জাঙ্গুয়া৷ ভাংরা গানের জন্য বিখ্যাত ছিলেন এই ‘হিপ হপ’ গায়ক৷ বলিউডি ছবিতে তার বেশি গান না থাকলেও, প্রায় প্রত্যেকটি গানই ‘হিট’৷ অক্ষয়কুমারের ‘সিং ইজ কিং’ ছবিতে ‘জি করদা’ গানটি গেয়েছিলেন তিনি৷ ‘রব নে বানাদি জোড়ি’ ছবিতে শাহরুখের লিপে গেয়েছিলেন ‘ডান্স পে চান্স’৷ ‘পার্টনার’ ছবিতে ছিল তার ‘সোনি দে নখরে’ গানটি৷ সাম্প্রতিক ‘কুইন’ ছবিতে ‘লন্ডন ঠুমাকডা’ এবং ‘সিং ইজ ব্লিং’ ছবিতে ‘দিল করে চুঁ চাঁ’ গেয়েছিলেন তিনিই৷ তার অকালপ্রয়াণ আজও রহস্যে মোড়া৷ ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে