ত্রিবান্দ্রামে সিনেমার দাপটে ম্লান সাফ ফুটবল
সামন হোসেন কেরালা থেকে: ত্রিবান্দ্রামে সিনেমার চেয়ে অনেক পিছিয়ে ফুটবল। এখানকার মানুষের ধ্যানজ্ঞানে মালায়লাম ফিল্ম। এখানে হিন্দি ছবির নায়ক-নায়িকাদের খুব একটা কদর নেই, সিনেমার জগতে মালায়লাম ফিল্ম আর এর তারকারাই তাদের কাছে শেষ কথা। অনেক বিখ্যাত হিন্দি ফিল্ম মালায়লাম ছবির নকল।
তার ওপর ত্রিবান্দ্রামের যে স্টেডিয়ামে খেলা হচ্ছে তা লোকালয় থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন। ফুটবলের জনপ্রিয়তার ঘাটতি আর লোকালয় থেকে দূরে হওয়ার কারণে স্টেডিয়ামে দর্শক আসছে না। বরাবরের মতো সাফ আয়োজনে অবহেলা আছে ভারতীয় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ডব্লুএসজি’র। আছে স্থানীয় আয়োজদের আন্তরিকতার অভাব। এ নিয়ে নাখোশ অংশগ্রহণকারী দেশের কর্মকর্তারাও।
নানা বিষয়ে ঢালাও অভিযোগ করেছেন ভারত ও আফগানিস্তানের কোচও। তবে কোচদের করা সব অভিযোগ মানতে পারছেন না সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল। তার মতে শুরুতে কিছু অব্যবস্থাপনা ছিল সত্যি। কিন্তু আস্তে আস্তে সেটা কাটিয়ে উঠছেন আয়োজকরা।
ত্রিবান্দ্রামের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মালায়লাম ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন বা এফডিসি। সারা শহরের ট্যাক্সি ড্রাইভার, সিএনজি ড্রাইভারের আনাগোনোও এরিস্ট্রো জংশনের এই রোডটিতে। মালায়লাম ফিল্মের বড় তারকা মোহনলালদের দেখতেই তারা ভিড় করেন এফডিসি’র গেটে। এখান থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ।
এনিয়ে যেন ভ্রূক্ষেপ নেই কারও। এই টুর্নামেন্ট শুরুর আটদিন আগে কেরালা এসেছে আফগানিস্তান। সপ্তাহ খানেক আগে এসেছে মালদ্বীপ। দল দু’টিই লম্বা বহর নিয়ে ত্রিবান্দ্রাম এসেছে। ভারতীয়দের অবস্থাও প্রায় একই রকম। এই তিন দলের কোচই সংবাদ সম্মেলনে ধুয়ে দিয়েছেন আয়োজকদের। তাদের প্রত্যেকের অভিযোগ ছিল টিম হোটেল ও প্র্যাকটিস ভেন্যু নিয়ে। তাদের সব অভিযোগের উত্তর আছে সাফ সেক্রেটারি আনোয়ারুল হক হেলালের কাছে।
তার মতে কিছু ভুল-ত্রুটি হয়তো আছে। আছে প্রচার-প্রচারাণর অভাবও। স্বানীয় মিডিয়ারও টুর্নামেন্টের প্রতি তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ত্রিবান্দ্রাম সেন্ট্রাল থেকে এক ঘণ্টার দূরত্ব হওয়ার কারণে স্টেডিয়ামেও দর্শকের দেখা মিলছে না। নেপাল শ্রীলঙ্কার উদ্বোধনী ম্যাচে মাত্র শ’ দেড়েক দর্শক উপস্থিত ছিল।
এগুলো মেনে নিয়ে হেলাল বলেন, সংবাদ সম্মেলনে আফগান কোচ যা করেছেন, সেটা স্রেফ বাড়াবাড়ি। আফগানিস্তানের ২৭ সদস্যের দল আসার কথা, এসেছেন ৪১ সদস্য। এত বেশি লোক এলে তো আয়োজকদের পক্ষে এক হোটেলে রাখা সম্ভব নয়। দলের নির্দিষ্ট আয়তনের কথা মাথায় রেখেই ডব্লুএসজি হোটেল বুকিং করেছে। তাছাড়া বড়দিনের উৎসবের কারণে হোটেলগুলোতে নতুন করে রুম পাওয়া বেশ কঠিন।’
প্র্যাকটিস ভেন্যু নিয়ে অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, আগে আয়োজকদের এক রকম প্র্যাকটিসের সূচি দিয়ে পরে অন্য সময়ে মাঠে গেলে তো সমস্যা হবেই। তখন ওখানে অন্য দলের প্র্যাকটিস থাকে। একটা প্র্যাকটিস ফিল্ড একদম নিজেদের জন্য চায় তারা। এটা তো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। স্থানীয় মিডিয়ার ব্যাপারে হেলাল বলেন, টুর্নামেন্ট সফল করতে মিডিয়ার একটা বড় ভূমিকা থাকে। কিন্তু এখানকার মিডিয়ার সেই ভূমিকা চোখে পড়ছে না।’ এর কারণ হিসেবে স্থানীয় ফুটবলার সিফিন বলেন, ত্রিবান্দ্রামে ফুটবল জনপ্রিয় নয়। এখানকার মানুষের কাছে সিনেমা ও ক্রিকেট আগে। এরপর যদি সময় থাকে তবেই ফুটবল। তাছাড়া যে স্টেডিয়ামে খেলা হচ্ছে তা লোকালয় থেকে অনেক দূরে। সেখানে গিয়ে টাকা খরচ করে সাধারণ মানুষের পক্ষে খেলা দেখা সম্ভব নয়। এছাড়া টুর্নামেন্টের প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে ডব্লুএসজি’র গাফিলতি দেখছেন সিফিন। এসব গাফিলতি পাশ কাটিয়ে হয়তো নির্ধারিত সময়েই শেষ হবে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই ফুটবল আসর। কিন্তু ত্রিবান্দ্রামের মানুষের মনে কি সেটি দাগ কাটতে পারবে? গতকাল পুরো ত্রিবান্দ্রাম ঘুরে কিন্তু ছিটে-ফোটার লক্ষণ মিলেনি। -মানবজমিন
২৫ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস