পুরানো তারকায় বাজিমাত বলিউড
বিনোদন ডেস্ক : বছরের শুরুটা ছিল ছোট বাজেটের ছবির বক্স–অফিস বিজয়ের কাহিনী। বছরের দ্বিতীয়ার্ধে কিন্তু বড় বাজেটের ছবিদের দাপাদাপি বক্স–অফিসে।
গত দুটো বছর ছিল বলিউড আকাশে একঝাঁক নতুন তারকার উদয়ের। বরুণ ধাওয়ান, সিদ্ধার্থ মালহোত্রা, আদিত্য রায় কাপুর, শ্রদ্ধা কাপুর, আলিয়া ভাট, টাইগার স্রুফ, হুমা খান প্রমুখ।
২০১৫ কিন্তু প্রমাণ করল পুরনো তারকারা আছেন স্বমহিমাতেই। এখনও তারা স্থানচ্যুত হননি।
তবে সালমান খান, অক্ষয়কুমার, অজয় দেবগনদের বদলে নিতে হচ্ছে নিজেদের। আর নায়িকাদের কোমর কিংবা গাছের গুঁড়ি ধরে গান গাওয়া আর অনুপাত মেপে কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর ভিলেনের লোকজনের সঙ্গে মারামারির দিন যে শেষ, সেটা তারা এবং তাদের ছবির পরিচালকেরা বুঝে গেছেন।
ফলে তারা থাকছেন ঠিকই ছবিতে, তবে ছবিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে চিত্রনাট্য বা কাহিনী। যে কাহিনীতে সুপারস্টার–এর ‘ম্যাচিওর্ড’ একটা ভূমিকা থাকছে। তারকাকে ঘিরেই চিত্রনাট্য লেখা হচ্ছে, কিন্তু সেই চিত্রনাট্যে তারকার ভূমিকা বা চরিত্রটা হচ্ছে অভিনব। ইতিপূর্বে না দেখা। অ–অনুমানযোগ্য।
এটাই হয়ত ‘বজরঙ্গী ভাইজান’–এ সালমানের, ‘দৃশ্যম’–এ অজয় দেবগনের আর ‘গব্বর ইজ ব্যক’–এ অক্ষয়কুমারের সাফল্যের রসায়ন। সন্দেহ নেই, এই নতুন ধরনের চিত্রনাট্য গঠনে দক্ষিণী ছবি ও দক্ষিণী চিত্রনাট্যকারেরা একটা বড় ভূমিকা নিয়েছেন। ‘দৃশ্যম’ আর ‘গব্বর ইজ ব্যাক’ সরাসরি দক্ষিণী হিট ছবির রিমেক। ‘বজরঙ্গী ভাইজান’–এর চিত্রনাট্য লিখেছেন দক্ষিণের প্রবাদপ্রতিম চিত্রনাট্যকার ভি বিজয়েন্দ্র প্রসাদ।
‘বজরঙ্গী ভাইজান’ এদেশে ও বিদেশে মিলিয়ে মোট ব্যবসা করেছে ৬২৬ কোটি টাকার। ‘পি কে’–র পরে সর্বকালের সর্বোচ্চ বাণিজ্য। এরপরেই অবশ্য উল্লেখ করা প্রয়োজন এই ‘সর্বোচ্চ’ তালিকার তৃতীয় ছবিটাও এ বছরই মুক্তি পেয়েছিল। ‘বাহুবলী: দ্য বিগিনিং’। এই ছবির আয় ৬০০ কোটি টাকা। দেশে ও বিদেশে।
সবচেয়ে বড় কথা, এই দুই ছবি জুলাই মাসে মুক্তি পেয়েছিল এক সপ্তাহ আগুপিছু। তার মানে বলিউড এখন এক সপ্তাহের আড়াআড়ি ১২০০ কোটি টাকারও ব্যবসা করার ক্ষমতা রাখছে! বলিউডের বাজার কতটা প্রসারিত হয়েছে, এ তারই এক নমুনা। অবশ্য এ ছাড়া উপায়ও নেই। কারণ যেভাবে প্রচুর টাকা লগ্নি করে বড় বাজেটের ছবি তৈরি হচ্ছে, তাকে ব্যবসা পেতে গেলে বাজার বড় করতেই হবে।
ওই দুই মেগা হিটের পরেই বছরের সবচেয়ে বড় ব্যবসা ‘তনু ওয়েডস মনু রিটার্নস’–এর। এই ছবিতে দ্বৈতচরিত্রে ছিলেন কঙ্গনা রানাওয়াত। এ ছবি ব্যবসা করেছে দেশে ১৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি। এখানেও কঙ্গনা ফ্যাক্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ভাল চিত্রনাট্য। এতখানি বিরাট ব্যবসা না করলেও চিত্রনাট্যের জোরেই ১০০ কোটি টাকার কাছাকাছি ব্যবসা করেছে সুজিত সরকারের ‘পিকু’ও। এ ছবিতে অমিতাভ বচ্চন অভিনীত চরিত্রটি ছিল সত্যিই অভিনব।
চিত্রনাট্যের চমক ছাড়াই ফর্মুলা সম্বল করে ভাল ব্যবসা করছে একমাত্র ‘দিলওয়ালে’। প্রথম সপ্তাহেই তার যা বক্স–অফিস আয়ের ‘ট্রেন্ড’ তাতে এ ছবি বছরে ব্যবসা করা সেরা তিন ছবির মধ্যে থাকবে। বোঝা যাচ্ছে একইসঙ্গে প্রচুর ‘মাল্টিপ্লেক্স’–এ মুক্তি এবং শাহরুখ ফ্যাক্টর কাজ করেছে। পাশাপাশি নায়িকা হিসেবে কাজলের পাঁচ বছর পরে ফিরে আসাটাও বড় আকর্ষণ।
একইভাবে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ভাল ব্যবসা করছে ‘বাজিরাও মস্তানি’ও। ১০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। বক্স–অফিস মহলের ছবি যেহেতু ভাল হয়েছে এ ছবির দ্বিতীয় সপ্তাহে আয় বাড়বে। বহু দর্শকই বড়দিনের আগে শাহরুখের ‘দিলওয়ালে’ দেখেছেন। বড়দিনের সপ্তাহে দেখবেন ‘বাজিরাও মস্তানি’।
‘গব্বর ইজ ব্যাক’ আয় করেছে ১০৫ কোটি টাকা, ‘বেবি’ ১২৫ কোটি টাকা আর ‘সিং ইজ ব্লিং’ ১১৬ কোটি টাকা। তিনটিরই নায়ক অক্ষয়কুমার, প্রথমটি ‘অ্যাকশন মুভি’, দ্বিতীয়টি ‘স্পাই থ্রিলার’, তৃতীয়টি ‘স্ল্যাপস্টিক কমেডি’। তিন ‘জঁর’–এর তিনটি বিগ বাজেট ছবি একই বছরে বক্স–অফিস পার করিয়ে অক্ষয় বোঝালেন তিনি এখনও স্বমহিমায় আছেন। আজয় দেবগন–এর ‘দৃশ্যম’–এর আয়ও ৭৪ কোটি টাকা, এ ছবিও হিট। তিন খানের পাশাপাশি অক্ষয় এবং অজয়ও যে এখনও ‘সিওর সাকসেস শট’ তা বোঝা গেল।
তিন খানের মধ্যে আমিরের এ বছর ছবি ছিল না। দুটি ছবি ছিল সালমানের। ‘বজরঙ্গী ভাইজান’–এর মতো ব্যবসা না করলেও ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’ ব্যবসা করেছে দেশ–বিদেশ মিলিয়ে ৪৩১ কোটি টাকার।
এর বাইরে যে সব বই মোটামুটি ব্যবসা করেছে তার মধ্যে দু’ধরনের ছবি আছে। তার মধ্যে নিছক বিনোদনমূলক ছবি হল ‘ওয়েলকাম ব্যাক’, ‘এ বি সি ডি টু’ আর ‘পেয়ার কা পঞ্চনামা’। অন্যদিকে ‘মিডল রোড’ সিনেমার মধ্যে ভাল ব্যবসা পেয়েছে ‘তলওয়ার’, ‘এন এইচ টেন’, ‘বদলাপুর’,‘দম লাগাকে হেঁইসা’। মন্দ ব্যবসা পায়নি ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সি’ও। এরমধ্যে ‘তলওয়ার’ আর ‘এন এইচ টেন’ তৈরি হয়েছে একেবারে সাম্প্রতিক ঘটনার ওপর ভিত্তি করে।
এইসব সাফল্যের ভিত্তিতে বিচার করলে বছরের সেরা নায়ক সালমান খান। বছরের সেরা দুটি হিট তারই করায়ত্ত। তিনটি ছবিকেই ১০০ কোটি বেঞ্চমার্ক পার করিয়ে দু’নম্বরে থাকবেন অক্ষয়কুমার। দু’ধরনের দুই ছবি ‘পিকু’ আর ‘তলওয়ার’ সূত্রে তিন নম্বরে থাকবেন ইরফান খান।
নতুন নায়কদের মধ্যে সাফল্য পেয়েছেন দুজন। রণবীর সিংহ আর বরুন ধাওয়ান। এ বছরে বরুণের পকেটে দুটো হিট— ‘দিলওয়ালে’ আর ‘বদলাপুর’। অন্যদিকে রণবীর সিংহের বড় চমক ‘বাজিরাও মস্তানি’। যা তাকে অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিল। সঙ্গে আছে মোটামুটি ব্যবসা পাওয়া ‘দিল ধড়কনে দো’।
নায়িকাদের মধ্যে এক নম্বরে থাকবেন দীপিকা পাড়ুকোন দুই হিট ‘পিকু’ আর ‘বাজিরাও মস্তানি’র সুবাদে। মোটামুটি ব্যবসা পেয়েছে ‘তামাশা’ও। গত তিন–চার বছরে দীপিকা এমন জায়গায় পৌঁছেছেন তিনি থাকলে ছবি ‘ফ্লপ’ করে না। সে তার উপস্থিতির গুণ না চিত্রনাট্য বাছার ক্ষমতা তা নিয়ে তর্ক চলতেই পারে।
কিন্তু মাত্র একটি ছবি হিট দিয়েই তার কাছাকাছি যে পৌঁছে গেছেন কঙ্গনা রানাউত, তার কারণ ‘তনু ওয়েডস মনু রিটার্নস্’–এ কঙ্গনা রানাউতের বিস্ময়কর ‘পারফরমেন্স’। ‘দীপিকা’র সবকটি ছবিতেই বিপরীতে নামী নায়ক। সেখানে কঙ্গনা কিন্তু একার কৃতিত্বে ছবি টেনেছেন।
নায়িকাদের মধ্যে তিন নম্বর জায়গাটাতে থাকবেন দুজন। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ‘বাজিরাও মস্তানি’ আর ‘দিল ধড়কনে দো’ সূত্রে। আর অনুষ্কা শর্মা ‘এন এইচ টেন’ আর ‘দিল ধড়কনে দো’ সূত্রে। নতুন নায়িকাদের মধ্যে কেউই এ বছর সেভাবে চোখ টানতে পারেননি।
৩০ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস