শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৮:১৮:১৬

‘বাগিচার বুলবুলি তুই ফুলশাখাতে দিসনে আজি দোল’

‘বাগিচার বুলবুলি তুই ফুলশাখাতে দিসনে আজি দোল’

গজল এক ধরনের লঘু রাগসংগীত। ‘গজল’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ প্রেমিক-প্রেমিকার কথোপকথন। তাই গজলকে প্রণয়সংগীতও বলা হয়। কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা ভাষায় সার্থক বেশ কিছু গজল লিখে গেছেন, যা দেশ ও বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

গজল সংগীতে নর-নারীর বিচিত্র মনোভাব যেমন—পূর্বরাগ, অনুরাগ, মনস্তাপ, বিরাগ, বিচ্ছেদ, আকাঙ্ক্ষা, আসক্তি, বিরহ, মিলন ইত্যাদি প্রকাশ পায়। এর পাশাপাশি সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রেম, ভক্তি ও ভালোবাসাও প্রকাশ পায়।

গজলের উদ্ভব পারস্য দেশে। পারস্য সংগীত থেকেই গজল গানের ধারা ভারতে অনুপ্রবেশ করে। ভারতীয় সংগীতের গজলের দুটি ধারা হচ্ছে হিন্দুস্তানি (উত্তর ভারতীয়) ও কর্ণাটকি (দক্ষিণ ভারতীয়)। দিল্লি ও লখনউ গজল চর্চার দুটি প্রধান কেন্দ্র।

পারস্যের শ্রেষ্ঠ সাধক কবিরা যে গজল রচনা করেন তাতে গভীর দার্শনিক তত্ত্ব প্রকাশ পেয়েছে। ভারতে গজল গানের প্রবর্তন হলে ফারসি, উর্দু ও অন্যান্য ভাষায়ও প্রচুর গজল রচিত হয়। তাতে রাগসংগীতের মাধুর্য যুক্ত হওয়ায় গজল গান নতুন মাত্রা পায়।

গজল গানে মনকে আপ্লুুত করার একটা বিশেষ গুণ আছে। মীর্জা গালিব, জওক, আরজু, সম্রাট জাহাঙ্গীর, সম্রাজ্ঞী নূরজাহান, নবাব ওয়াজেদ আলী খান, চলচ্চিত্রাভিনেত্রী মীনা কুমারীর অজস্র সুন্দর গজলের সন্ধান পাওয়া যায়।

গজলে সুরের চেয়ে কথার প্রাধান্য বেশি। এ গান শৃঙ্গার রসাত্মক এবং এর প্রধান উপজীব্য মানবপ্রেম। গজলের মধ্যে ৫ থেকে ১৫টি শ্লোক থাকে। শ্লোককে বলা হয় ‘শের’। প্রতিটি শেরে দুটি করে পঙক্তি থাকে। তার অর্থ গজল হতে হলে সে কবিতায় ১০ থেকে ৩০টি পঙক্তি থাকতে হবে। দৈর্ঘ্যটা সনেটের মতো নির্দিষ্ট। গানের ভাষায় বললে প্রথম শ্লোকটিকে বলা হয় স্থায়ী। পরবর্তী শ্লোকগুলোকে বলে অন্তরা। প্রতিটি অন্তরা একই সুরে গাওয়া হয়। টপ্পা এবং ঠুমরির মতো গজল গানে মধুর ও মৃদু স্বভাবের রাগ ব্যবহৃত হয়। সাধারণত কাফি, ঝিঁঝিট, ভৈরবী, পিলু, বারোয়া প্রভৃতি রাগ এবং পশতু ও দীপচন্দী তালে গজল গাওয়া হয়।

বাংলা ভাষায় গজল রচনার পথিকৃৎ অতুলপ্রসাদ সেন। উত্তর ভারতের লখনউ শহরে থাকার কারণে তিনি এ ধারার সঙ্গে পরিচিত হন এবং বাংলা গজলের বুনিয়াদ রচনা করেন। তবে গবেষক ও প্রাবন্ধিক গোলাম মুরশিদের মতে, সত্যিকার অর্থে বাংলা গজল নজরুলেরই সৃষ্টি, নজরুলের হাতেই তার পুষ্টি লাভ এবং চূড়ান্ত পরিণতি। তবে নজরুলের গজলও এক অর্থে ব্যতিক্রম। কারণ তিনি যখন গজল গান রচনা করেন, তখন গজল জনপ্রিয়তা তো দূরের কথা, পরিচিতিও লাভ করেনি। ১৯২৬ সালের নভেম্বর মাসে তিনি লিখেছিলেন তাঁর প্রথম গজল ‘বাগিচার বুলবুলি তুই ফুলশাখাতে দিসনে আজি দোল।’ সেই সঙ্গে শুরু হয়েছিল বাংলা গানের ইতিহাসে একটা নতুন অধ্যায়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে