মঙ্গলবার, ০৫ জানুয়ারী, ২০২১, ০৪:৪৫:৪০

প্রেম, বিয়ের ব্যাপারে প্রশ্ন করায় অবশেষে যা জানালেন নায়িকা বুবলী

প্রেম, বিয়ের ব্যাপারে প্রশ্ন করায় অবশেষে যা জানালেন নায়িকা বুবলী

শামছুল হক রাসেল: গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পর। সবে প্রস্তুতি নিচ্ছি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে।  এরই মাঝে বেজে উঠলো মুঠোফোনের রিংটোন। মুঠোফোনের ডিসপ্লেকে অনেকটা ওভারলুক করে ফোনটা ধরা হল। অপরপ্রান্ত থেকে বলল "কেমন আছেন, রাসেল ভাই... বুবলী বলছি"। এটা শোনার পর কান থেকে মুঠোফোনটা সরিয়ে ভালো করে ডিসপ্লেতে তাকালাম, দেখলাম বুবলী নাম শো হচ্ছে। এবার জিজ্ঞেস করলাম সত্যি বুবলী, নাকি বুবলীর ভূত? অপরপ্রান্ত থেকে অট্টহাসির শব্দ শোনা গেল। বললেন, "এ কেমন কথা। যে দু'একজনের সঙ্গে এ সময় যোগাযোগ হতো তাদের মধ্যে আপনিও তো ছিলেন। তাহলে ভূত বলছেন কেন?" মুখের কথা কেড়ে নিয়ে উল্টো বললাম, গত ১১ মাসে যে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছি তার মধ্যে ৬০ ভাগ সফল হয়েছি। বাকি ৪০ ভাগ হইনি। এছাড়া আপনি নিজে কখনো এর মধ্যে ফোন দেননি। যোগাযোগ করলে রিপ্লাই দিয়েছেন। স্বেচ্ছায় ফোন দিয়েছেন তাই ভূত-ভূত মনে হলো।   

কথা না বাড়িয়ে সরাসরি প্রশ্ন ছুড়লাম, এগার মাস আড়ালে ছিলেন। এবার সত্যিটা বলুন, এটা কি স্ট্যান্টবাজি না কোনো রিকভারির জন্য? বুবলী বলেন, "প্রথমত, আমি যখন টানা কাজ করি তখন কাজের ক্ষেত্রে সবাই কিন্তু আমাকে পায়। এমন কিন্তু কখনো হয়নি যে একটা কাজের জন্য কাউকে কথা দিয়েছি কিন্তু সেটা রাখিনি। যখন কাজের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকি তখন অবশ্যই আমাকে পাওয়া যায়। কিন্তু যখন ব্যক্তিগত কোন বিষয় চলে আসে তখন ওভাবে আড়ালে থাকা হয়। এবারও একই ঘটনা, কিছু পার্সোনাল রিজন ছিল..." এবারও মুখের কথা কেড়ে নিয়ে উল্টো প্রশ্ন ছুড়লাম, 'ব্যক্তিগত কারণের কথা বলছেন। তাহলে কি সেটা বলা যাবে কি?' বললেন, "গত বছরই প্লান ছিল সময় পেলে কিছু প্রফেশনাল কোর্স করবো। সে উদ্দেশ্যে ফেব্রুয়ারির শেষে নিউ ইয়র্কে যাই। যদিও করোনা ও লকডাউনের কারণে কোর্সটা খুব অল্পসময়েই শেষ হয়েছে। আর ব্যক্তিগত? আসলে সবকিছুরই একটা সঠিক সময় দরকার। গত কয়েক বছর ধরে আমাকে নিয়ে খুব গুঞ্জন। আমার প্রেম, আমার বিয়ে- সব শেষে সন্তান হওয়া নিয়ে গুঞ্জন। এসবের পেছনে যখন কেউ কেউ একতরফাভাবে কথা বলে মনের মাধুর্য দিয়ে, তখন কিন্তু মানুষজন তাদের মতো করে বিচার করে। তবে আমি  দর্শকদের তাদের আগ্রহের জায়গা থেকে ধন্যবাদ ও সম্মান জানাবো। তারাও আমার থেকে অনেক কিছু শুনতে চান যেটা স্বাভাবিক। এমনকি এসব গুঞ্জন নিয়ে সাংবাদিকরা আমাকে আমার দিক থেকে বিষয়টি খোলাসা করতে বলেছেন। কিন্তু এই জায়গা থেকে বিষয়টা এত বেশি সেনসিটিভ যে আমি হুট করে কিছু বলতে চাই না। আসলে সব কিছুর একটা প্রপার টাইম আছে, সময় হলে বিষয়গুলো আমি জানাবো। আমরা যতই বলি ব্যক্তিগত বিষয়গুলো আমাদের মধ্যে রাখবো, আসলে সেটা হয় না। যেহেতু আমরা মিডিয়াতে কাজ করি।"

তাহলে কিন্তু নতুন রিউমার ছড়াবে যে ‘যা রটে তার কিছুতো বটে’। তার মানে যেটা শোনা যাচ্ছে সেটা সত্য। অথবা মৌনতা সম্মতির লক্ষণ, এটাই কী ধরে নেবো? "দেখুন, সববিষয় কেন জানাতেই হবে? ব্যক্তিগত সে বিষয়গুলো জানাবো যা নিয়ে মানুষের আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু আমি ওটাও করতে চাই না যেটা বা যাতে কাজের থেকে পারসোনাল বিষয়গুলো বেশি ফোকাসড হয়। অনেকেই আছেন যারা ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে লাইমলাইটে থাকতে চায়। আমি ওটা চাইনি বলে শুরু থেকেই  এড়িয়ে যাই। কিন্তু দিন শেষে মানুষের কিছু জায়গায় ভুল ধারণা ও বিভ্রান্তি এখনো রয়েছে। যার প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি হয়তো আমার ব্যক্তিগত বিষয়গুলো ভবিষ্যতে শেয়ার করবো। না হলে ব্যক্তিগত বিষয়গুলো ব্যক্তিগতই রাখতাম। কিন্তু আমরা যেহেতু মিডিয়াতে কাজ করি মানুষের আগ্রহের একটা জায়গা থাকে। সেটাকে সম্মান জানিয়ে আমি দর্শকদের বলবো, তারা যেন বিষয়টা আমার মুখ থেকে জেনে বিশ্বাস করে, তার আগে অন্য কোনো কথায় কান না দেয়।"

 সম্প্রতি দেশে ফিরে প্রায় এক বছর পর ফটোশুট করেছেন এ লাস্যময়ী। সেই ছবিতে এক বছর আগের ও বর্তমান বুবলীকে দেখে মনে হচ্ছে ওজন বেশ কমিয়েছেন। জানতে চাইলাম এটা কী অর্গানিক না কোনো কোর্স? এবার বুবলী বলে উঠলেন, "এটা আবার কেমন প্রশ্ন? সবাই তো চায় স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য সচেতন থাকতে। আর আমরা যারা মিডিয়াতে আছি তাদেরকে তো আরও বেশি যত্নবান হতে হয়। না হয় আপনারাই তো আবার নেগেটিভ নিউজ করা শুরু করবেন। হ্যাঁ, অবশ্যই অরগানিক। এমনতো না যে আমি ১২০ থেকে ১২৫ কেজি ছিলাম ওখান থেকে এমন কমিয়েছি। ওয়েট কমানো বিষয়টা হচ্ছে একটা টোটাল প্যাকেজ। শুনুন, আমি কিন্তু কখনোই তেমন মোটা ছিলাম না। ফার্স্ট ছবি থেকে আমার লুক দেখেন। অনেকে আছেন ধীরে ধীরে মোটা হয়ে যান। ভাগ্যবতী, আমি তেমনটা কখনোই ছিলাম না। কিন্তু আমার যে ট্রান্সফরমেশনটা তা অবশ্যই চোখে পড়ার মতো। গত বছর যেমন ছিলাম সেখান থেকে আজকের বুবলীতে আসতে আমাকে প্রায় বিশ কেজি ওজন কমাতে হয়েছে। এর পেছনে একটা বিষয় কাজ করেছে, সেটা হচ্ছে নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করা। এজন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। দেশজুড়ে করোনার কঠিন সময় গেছে। মাঝে নিউ ইয়র্কেও ছিলাম। এর মধ্যে এখনো যে সুস্থ আছি সে জন্য আলহামদুলিল্লাহ।"

প্রায় ১ বছর আড়ালেই ছিলেন বুবলী। অনেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। মাঝে মাঝে বুবলীও রিপ্লাই দিয়েছেন। এরপরও কেমন যেন একটা দূরত্ব ছিল মিডিয়ার সঙ্গে। তবে কাজের ব্যাপারে অনেকের সাথে অনেকের সাথে কথা হয়েছে। এমনটাই জানালেন বুবলী। বললেন, " আসলে, ওইভাবে কারো সাথে কথা হয়নি। তবে কাজের ব্যাপারে মাঝখানে নির্মাতা সৈকত নাসিরের সাথে কথা হয়েছে। তার বেশ কয়েকটা প্রজেক্ট নিয়েই কথা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘ক্যাশ’। বাকিগুলো নিয়ে প্রাইমারি কথাবার্তা হয়েছে। তবে ‘ক্যাশ’ এর ব্যাপারে তাদের সঙ্গে হয়তো ব্যাটে-বলে মেলেনি বা আমার দিক থেকে মিলছে না। তবে সামনে ইনশাআল্লাহ নতুন প্রজেক্ট হবে।"

এছাড়া আড়াল ভেঙে সবার সঙ্গে যোগাযোগ প্রসঙ্গে বুবলী বলেন, "এমন না যে আমি আড়ালে থেকে কথা বলছি। যদি শুটিং থাকতো আমাকে এফডিসিতেই পেতেন। যেহেতু শুটিং নেই, এখনো কাজ শুরু করিনি তাই ফোনে কথা হচ্ছে। যখন কাজ শুরু হবে তখন সবাই সামনাসামনিই দেখতে পাবেন।"

সবার একটাই অভিযোগ, একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে না জানিয়ে আড়ালে যাওয়ার বিষয়ে বুবলীর কী কোনো দায়বদ্ধতা ছিলো না? হঠাৎ উধাও হয়েছিলেন। প্রয়োজনে জানিয়ে যেতে পারতেন যে তিনি কয়েক মাস মিডিয়াতে আসবেন না, কাজও করবেন না। এই সময়ে কারো সঙ্গে যোগাযোগও করবেন না। কিন্তু বুবলী তা জানান দিয়ে যাননি। একজন পাবলিক ফিগার হয়ে কেন এই দায়বদ্ধতা নিলেন না? এমনটা জানতে চাইলে বুবলী বলেন, " সুন্দর প্রশ্ন। আমি এই বিষয়টা পরিষ্কার করি। শুরু থেকেই সাংবাদিক ভাইয়েরা আমার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যারা ভালোবাসেন, আবার যারা একটু কম পছন্দ করেন তারাও। এমনকি ক্রাইম রিপোর্টাররাও খোঁজ নিয়েছেন। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি বিশেষভাবে বলতে চাই মিশা সওদাগর ভাই শুরু থেকেই আমার খোঁজ-খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এরপর মুশফিকুর রহমান গুলজার ভাইও। এজন্য বিশেষভাবে আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা কয়েকদিন পরপরই খোঁজ-খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে কেমন আছি কি অবস্থায় আছি। আর দায়বদ্ধতার বিষয়টি হচ্ছে, মানুষের জীবনে অনেক সময় অনেক কিছুই হয়। যেটা আমরা পরিকল্পনা করে করি না। আমরাও মানুষ, অনেক সময় অনেক কিছু মন-মানসিকতার উপরও নির্ভর করে। যা বলতেও পারি না যে নিজের মতো থাকছি না কাজ করছি। বিষয়টি পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। তো ওই জায়গা থেকে বলা হয়ে ওঠেনি। তবে বিষয়টা নিয়ে আমি খুবই দুঃখিত। ইনশাআল্লাহ এমনটা আর ভবিষ্যতে হবে না।"

আপনি ক্রাইম রিপোর্টারের কথা বললেন, এখানে কি আপনার কোনো আতঙ্কের বিষয় বা কোনো বিভ্রান্তি ছিল? " না, না। আমি যখন কাজ করেছি তখন সবার সাথে যোগাযোগ ছিল। এমনও হয়েছে একসঙ্গে দুই-তিনটা কাজের চাপের মধ্যেও যোগাযোগ রেখেছি। এর মধ্যেও অনেক ক্রাইম রিপোর্টারদের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে। হয়তো তারাও কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলেন আমার আড়াল হওয়া নিয়ে। তাদের জানিয়েছি আমি নিরাপদে আছি। কারণ পাবলিক ফিগার হিসেবে আমিতো সবাইকে আতঙ্কে রাখতে পারি না। আর ব্যক্তিগত বিষয়টা পরে বলবো।"

যেহেতু আপনি সব কিছু পরেই বলবেন বলছেন। তাহলে সেটা কি প্রেম-ভালোবাসা বা বিয়ে এগুলো নিয়েই বলবেন? আর কবে বলবেন? এবার না হয় বলেই ফেলুন। "বললেন, একথা আগেও বলেছি। এগুলো গুঞ্জন থাকবেই। গুঞ্জন যদি নাই থাকে তাহলে কিসের নায়িকা হলাম। একটু কৌতূহল বা আগ্রহ থাকুক না সবার। আল্লাহ সুস্থ রাখলে সামনে আরও অনেক কাজ করবো। সময় হলে একের পর এক অনেক কিছুই তারা জানবে। একটু গুজব, গুঞ্জন ও কৌতুহল থাকলে হয়কি মানুষের আগ্রহের জায়গাটা থাকে।"

কাজের ক্ষেত্রে হিংসা বা জেলাসি না থাকলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি আরও অনেক বেশি এগিয়ে যেত এবং ভালো ভালো কাজ হতো মনে করেন বুবলী।আর হিংসা প্রসঙ্গ যেহেতু চলেই আসলো তাই জানতে চাইলাম। কারা আপনাকে হিংসা করে বা থামাতে চায়? পরিষ্কার করে বলবেন কি?কিছুক্ষণ চুপ থেকে এবার বুবলী বললেন, " ব্যাপারটা হচ্ছে যে কোনও প্ল্যাটফর্মে কাজ করতে গেলে- কিছু মানুষ থাকে যারা পেছনে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করে। তাদের মধ্যে আবার এমনও আছে যাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত জানাশোনা নেই, দেখাও হয়নি। তারা অন্য কাউকে খুশি করার জন্য কোথাও কিছু বলে দিলো, যা একেবারে খামাকা। এই জিনিসগুলো আমার কাছে খারাপ লাগে। গল্পের পেছনেও অনেক গল্প থাকে, তাদেরকে বুঝেশুনে এগুলো করা উচিৎ। কাজের ক্ষেত্রে হিংসা বা জেলাসি না থাকলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি আরও অনেক বেশি এগিয়ে যেত এবং ভালো ভালো কাজ হতো।"

গল্প ও আড্ডার ছলে অনেক কিছু বলা হলো, শোনা হলো। এরপরও কেন জানি মনে হলো কিছুই জানতে পারলাম না। দর্শক ও পাঠকের যে কৌতূহল বুবলীকে নিয়ে তার সমাধানসূত্র পেলাম না। সরাসরি বললাম আপনি এত ডিপ্লোমেটিক অ্যান্সার দেন কেন? পাঠকদের জন্য কিছুই তো পেলাম না। নতুন কোনো খবর দেন। বুবলী বললেন, " বলেন কী? এতক্ষণ কার সাথে কথা বললাম। সবই তো বললাম। বাকি গল্প না হয় আরেকদিন হবে। মুঠোফোনটি রাখার আগে বললাম, একটা শেষ প্রশ্ন- আড়ালের এই সময়টাতে শাকিব খানের সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা? বুবলী বললেন, "শাকিব খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছে। বেশ কয়েকবার  চেষ্টা করেছে..."-বিডিপ্রতিদিন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে