মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১, ০৭:১২:৪৯

মোহন ভাগবতের সঙ্গে মিঠুন চক্রবর্তীর সাক্ষাৎ, বিজেপি যোগের জল্পনা

মোহন ভাগবতের সঙ্গে মিঠুন চক্রবর্তীর সাক্ষাৎ, বিজেপি যোগের জল্পনা

বিনোদন ডেস্ক : সৌরভের সঙ্গে সমীকরণ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি এখনও। তার মধ্যেই কি মিঠুনকে দলে টানার চেষ্টা শুরু করে দিলো বিজেপি? সোমবার গভীর রাতে আরএসএস সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে মিঠুন চক্রবর্তীর সাক্ষাতের পর এমনই জল্পনা মাথাচাড়া দিচ্ছে। মিঠুন যদিও তেমন কোনও সম্ভাবনার কথা খোলসা করেননি। 

তবে জানিয়েছেন যে, ভাগবতের সঙ্গে তার 'আধ্যাত্মিক যোগ' রয়েছে। তাতে বিজেপির হাত ধরে রাজনীতিতে তার প্রত্যাবর্তন ঘিরে জল্পনা আরও জলবাতাস পাচ্ছে। সোমবার গভীর রাতে মুম্বাইয়ের মাড আইল্যান্ডে মিঠুনের বাংলোয় হাজির হন ভাগবত। বেশ কিছুক্ষণ কথাও হয় তাদের মধ্যে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর যোগাযোগ করলে মিঠুন বলেন, ''মোহন ভাগবতের সঙ্গে একটা আধ্যাত্মিক যোগ রয়েছে আমার। লখনউতে ওর সঙ্গে একবার দেখা হয়েছিল। তখনই ওঁকে বলেছিলাম, কখনও মুম্বাই এলে বাড়িতে আসার জন্য। সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করতেই উনি এসেছিলেন।''

কিন্তু সামনে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন। তার অব্যবহিত আগে মিঠুন-মোহন যোগাযোগ নিয়ে জল্পনা তো হবেই। বিশেষত, মিঠুন যখন একদা তৃণমূলের কাছের লোক ছিলেন। বস্তুত, মিঠুন একটা সময়ে তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদও ছিলেন। নিছক সৌজন্য রক্ষার্থেই ভাগবতের এই আগমন নাকি এর পিছনে রয়েছে 'রাজনৈতিক সংযোগ'? এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি মিঠুন।

বলেছেন, ''দয়া করে কোনও জল্পনা তৈরি করবেন না। এখনও পর্যন্ত সে রকম কিছু ঘটেনি।'' অর্থাৎ, মিঠুনের দাবি, তার সঙ্গে বিজেপির কোনও 'রাজনৈতিক সংযোগ' ঘটেনি। এখনও পর্যন্ত। এই 'এখনও পর্যন্ত' শব্দবন্ধেই আবার জল্পনা বাড়ছে। অর্থাৎ, এখনও পর্যন্ত তেমনকিছু হয়নি। তা হলে কি ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে? ভবিষ্যতে যে তেমনকিছু ঘটনার সম্ভাবনা নেই, তেমনও তো বলেননি 'মহাগুরু'।

তবে মিঠুন রাজনীতিতে 'বীতশ্রদ্ধ' বলেই তার ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর। তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ থাকাকালীনই তার নাম জড়িয়েছিল সারদা কেলেঙ্কারিতে। সে সব ঝেড়ে মুছে ফেলতে মিঠুন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে চিঠি লিখে টাকা ফেরত দিয়েছিলেন। যেমন মমতাকে সবিনয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তার দেওয়া রাজ্যসভার সাংসদপদটি। কিন্তু একেবারে সাম্প্রতিক জল্পনা হল এই যে, কলকাতায় একটি টেলিভিশন রিয়েলিটি শো করতে এসে মিঠুন তার ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন, বিজেপি তাকে বাংলার বিধানসভা ভোটে প্রচারে নামার প্রস্তাব দিয়েছে। 

তিনি অবশ্য কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। ভাগবত-সাক্ষাতের সঙ্গে তার কোনও যোগ অচিরাৎ প্রমাণিত হবে কি না, তা নিয়েও কৌতূহল দেখা দিয়েছে। ঘটনাচক্রে, এর আগে একবার প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তীর স্ত্রী রমলার হয়ে উপ নির্বাচনের প্রচারে নামতে দেখা গিয়েছিল মিঠুনকে। সেটাই শেষ। তার পরে মিঠুনকে আর কোনও রাজনৈতিক প্রচারে দেখা যায়নি। তবে তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ থাকাকালীন তিনি প্রত্যাশিত ভাবেই নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন। এখন তৃণমূলের একেবারে বিপক্ষ শিবিরের হয়ে তিনি প্রচারে নামলে তা 'বড় চমক' হবে!

প্রসঙ্গত, রাজভবন থেকে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে বেরনোর পর মাস দুয়েক আগে মিঠুনের মতোই উত্তর শোনা গিয়েছিল সৌরভ গাঙ্গুলীর মুখেও। সৌরভের মতো মিঠুনের সঙ্গে পদ্মশিবিরের রসায়ন নিয়েও তাই আলোচনা থামছে না। তবে এ ব্যাপারে সৌরভের চেয়েও মিঠুন একধাপ এগিয়ে। কারণ, সঙ্ঘের সদর দফতর নাগপুরে গিয়েও এর আগে ভাগবতের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। 

সে বারও মুম্বাইয়ের আকসা সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন তার বাংলোয় আসার জন্য ভাগবতকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছিলেন তিনি। বাংলার মানুষের কাছে জনপ্রিয়তায় সৌরভের চেয়ে কিছু কম যান না মিঠুন। তাই তাকে প্রচারে পেলে যে বাংলায় গেরুয়ার হাত শক্ত হবে, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু একদা বাম আদর্শে উদ্বুদ্ধ মিঠুন কি বিজেপির দক্ষিণপন্থী আদর্শের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন? সে প্রশ্নও উঠছে। 

তবে ওয়াকিবহালরা বলছেন, বাম আদর্শের একসময় তৃণমূলেরও হাত ধরেছিলেন মিঠুন। সারদা মামলায় নাম জড়ানোর পর সেই সম্পর্ক তিক্ততায় পর্যবসিত না হলে এখন জোড়াফুলের হয়ে রাজ্যসভায় প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা যেত মিঠুনকে। তৃণমূলের সঙ্গে তার বিচ্ছেদকেই কি বিজেপি কাজে লাগাতে চাইছে? বাংলায় ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পরেই এর জবাব মিলবে। আর সেই জবাবের দিকে পশ্চিমবঙ্গের জনতার নজর।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে