বিনোদন ডেস্ক : অশ্লীল নায়ক হিসেবে তকমা পাওয়া ও বেশ সমালোচিত নায়ক শাহীন আলমের মৃত্যুর পর তার সম্পর্কেও জানা গেল দারুণ এক গল্প। যে গল্প পরিচয় করিয়ে দেয়া অজানা এক শাহীন আলমের সঙ্গে।
অনেকদিন অভিনয়ে ছিলেন না প্রায় চার শতাধিক সিনেমার অভিনেতা শাহীন আলম। গেল কয়েক বছর আগে হঠাৎ জানা যায় তার দিন চলে গুলিস্তানে কাপড়েরর ব্যবসা করে। অর্থনৈতিক জৌলুস নেই। কিডনির জটিল অসুখে আক্রান্ত হয়ে সিনেমায় বেকার শাহীন আলম নিজের চিকিৎসা করাতে করাতেই প্রায় নিঃস্ব হয়েছেন।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। তাই অসুস্থ শরীর নিয়েই দোকান চালাতেন তিনি। চেয়েছিলেন প্রধামন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের অনুদানও। সর্বশেষ ১ মার্চ তার শরীর বেশি খারাপ হলে তাকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে। তার একমাত্র ছেলে ফাহিম নূর আলমও এ যাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করেছিলেন।
কিন্তু সেই আকুতি প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছানোর আগেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে গতকাল ৮ মার্চ রাত ১০টা ০৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেছেন ‘হঠাৎ বৃষ্টি’র অভিনেতা শাহীন আলম। তার মৃত্যু শোবিজে শোক নামিয়েছে। অনেকেই তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছেন।
তাদের ভিড়ে একজন কাজি মুশফিকুর রহমান। তিনি ছিলেন শাহীন আলমের পুত্র ফাহিমের হোম টিউটর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এ ছাত্র ফাহিমকে বাসায় এসে পড়াতেন। সেই সুযোগে তিনি পরিচিত হয়েছিলেন চমৎকার দয়ালু চরিত্রের একজন শাহীন আলমের সঙ্গে।
এক আবেগঘন স্মৃতিচারণে তিনি লিখেছেন সেই অজানা শাহীন আলমের গল্প। তিনি লেখেন, ‘সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ দিকের কথা, আমার পড়াশোনার খরচ জোগানো বাবার পক্ষে খুব কস্ট হয়ে যাচ্ছিলো। তখন শাহীন আলম সাহেবের ছেলেকে পড়িয়ে নিজের খরচ চালাতাম। মগবাজারে ওনার বাসা ছিলো। তারপর চলে গেলেন নিকেতনে ঝকমকে ফ্ল্যাটে।
আমি পরলাম মহা ফাপরে। সেই জাহাঙ্গীরনগর থেকে আসতাম দুপুরের বাসে, আসাদগেট নেমে গুলশান ১ ট্যাম্পুতে তারপর হেঁটে নিকেতন। এখনকার মতো নিকেতন নয়, সবে শুরু হয়েছে বাড়ি ওঠা। সে গল্প থাক আত্মজীবনীর জন্য।
যখন বাচ্চাটাকে পড়িয়েছি বেশিরভাগ দিনই দুপুরের ভাত খাওয়াটা হতো না। সেই জাহাঙ্গীরনগরে ২টা ৩০ মিনিটে বাস ধরতে ছুটতে হতো। সেই জাহাঙ্গীরনগর টু নিকেতন। কাঁচা রাস্তা। মহাখালী ফ্লাইওভারের কাজ চলে... সে এক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
পড়ানো শেষ করে ফিরতে হতো রাত। যাক সে আলাপও থাক। একদিন শাহীন আলম সাহেবের মা এসে দেখলেন চায়ের সাথে দেয়া গোটা কয়েক বিস্কুট এক নিমিষেই খেয়ে ফেলেছি। চরম ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত আমার সেদিকে কোনো খেয়াল ছিলো না। পরদিন থেকে হঠাৎ রকমারি নাস্তা আসতো। রাক্ষুসে খিদেটা মিটতো।
একদিন কালো স্যুট পরা শাহীন আলম সাহেব আমাকে রাতে নিকেতনের কাঁদাপানিতে ফিরতে দেখেন। আমি হন্তদন্ত হয়ে ৮টার বাস টার্গেট করে জোর কদমে হাঁটছি বলা ভুল হবে, দৌড়োচ্ছি... পরেরদিন ছেলের পড়া দেখতে আসবার ছলে অবজারভ করেন আমি সমুচা-রোল যা দেয় তা ঝাঁপিয়ে পরে খাই।
পড়ানোর চেয়ে খাওয়ায় আমার আগ্রহ। কোনো কথা না বলে অন্য রুমে চলে যান।
তারপর থেকে মাস্টার্স দেয়া অবধি যতদিন ফাহিম সম্ভবত ছেলেটার নাম, পড়িয়েছি আমার জন্য বাহারি তরকারি দিয়ে ভাত আসতো নাস্তা হিসেবে। রাতে ওনার চকচকে গাড়িটা বেশিরভাগ দিনই আসাদ গেট নামিয়ে দিয়ে যেত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ টার বাস ধরতে। বেতনও বাড়িয়ে দিলেন না চাইতেই!!!’
তিনি আরও লেখেন, ‘এমন অসীম মমতাবান একজন মানুষকে আপনারা চিনেন একজন অভিনেতা হিসেবে। অশ্লীল ছবিও করেছেন তিনি। আপনাদের হিসেবে। আর আমি চিনি একজন অভূক্ত মানুষকে পরম মমতার ছায়ায় আশ্রয়দাতা হিসেবে। আপনাদের হিসেবে কূলোবে না।’ শাহীন আলমের জন্য দোয়া করে তিনি বলেন, ‘আল্লাহতালা আপনাকে অনেক অনেক শান্তিতে রাখুক। আমিন।’