মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৫:১২:৪০

এবার ঢাকায় দুর্গাপুজো, অপেক্ষা করব সৃজিত কখন আসবে: মিথিলা

এবার ঢাকায় দুর্গাপুজো, অপেক্ষা করব সৃজিত কখন আসবে: মিথিলা

রাফিয়াত রশিদ মিথিলা : ২০১৮ সালে প্রথম বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানা পেরোই। কিন্তু সে বার পুজোর সময়ে কলকাতা আসিনি। ২০১৯ সালে সৃজিতের (মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে বিয়ের আগে প্রথম সেই কলকাতাকে দেখলাম। যে কলকাতায় চারদিকে ঢাক বাজছে, আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে গোটা শহর, সবাই সেজেগুজে রাস্তায় বেরিয়েছে। এর আগে দুর্গাপুজো বলতে ‘পাড়ার পুজো’-কেই বুঝতাম।

ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে বড় হয়েছি। সেখানে একটি কালীমন্দির রয়েছে। বিশাল আয়োজন করে দুর্গাপুজো হত। সপ্তাহজুড়ে মেলা বসত। আমরা ঠাকুর দেখতে যেতাম সেজেগুজে। কিন্তু তার মধ্যে ‘পাড়ার পুজো’-র আমেজটাই যেন বেশি। মন্দিরের প্রাঙ্গণ জুড়েই কেবল ঢাক বাজত। তার বাইরে পুজো পুজো গন্ধ পেতাম না। তবে কোনও দিনও সাম্প্রদায়িক কোনও কথা শুনিনি কারও কাছে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার বেশির ভাগ ইসলামধর্মী। কিন্তু আমাদের ছোটবেলায় কোনও পুজো বা উৎসবের সময়ে মানুষ ধর্মের কথা মাথায় রাখতেন না। এখন যেমন বিশ্বের প্রতিটি দেশে ছোঁয়াচে রোগের মতো সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে পড়েছে, আমাদের সময়ে কিন্তু সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি আমরা। দুর্গাপুজো, ইদ বা বড়দিন— প্রতিটি উৎসবেই আমরা একই ভাবে আনন্দ করেছি। 

তবে এ কথা ঠিক যে, কলকাতায় যেমন বড় করে দুর্গাপুজো পালন করা হয়, বাংলাদেশে তেমনই ঘটে ইদের সময়ে। ইদ যদিও খুব ঘরোয়া ভাবে উদ্‌যাপিত হয়। আত্মীয়দের বাড়িতে বাড়িতে যাওয়া, খাওয়া বা খাওয়ানো— এ সবই আসল। দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রে সেটি নয়। দুর্গাপুজো মানে যে একটা গোটা শহরের উৎসব। কলকাতা যেন মুখর হয়ে ওঠে। সেই চেহারাটিই দেখেছিলাম ২০১৯ সালে কলকাতায় এসে।

সে বার প্রথম কলকাতার দুর্গাপুজো দেখি। আমি, সৃজিত, আয়রা বিভিন্ন পুজো মণ্ডপ ঘুরে বেরিয়েছি। কিছু মণ্ডপের কারুকার্য দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। উৎসবের শৈল্পিক গুণে আমি মুগ্ধ। কলকাতার পুজো আমার কাছে এখনও তাই বিস্ময়কর। আয়রা ঢাকাতেও কোনও দিন পুজো দেখেনি। আমার মেয়ে প্রথম থেকেই কলকাতার পুজোর সঙ্গে পরিচিত।

কিন্তু ২০২০ সালে অতিমারির প্রকোপে সৃজিত আমাদের বাড়ি থেকেই বেরোতে দেয়নি। করোনার ভয়ে বাড়িতে সিঁটিয়ে বসেছিল ও। কিন্তু আমি তো ছাড়ার পাত্রী নই। গোটা পুজোয় বাড়ি বসে কাটিয়ে দিতে আমি রাজি ছিলাম না। বলেছিলাম, ‘‘ঠিক আছে, মণ্ডপে যাব না। কিন্তু বন্ধুদের বাড়িতে যাব, খাওয়া দাওয়া করব, আড্ডা মারব।’’ সৃজিতকে আমার আবদার রাখতে হয়েছিল। প্রতিদিন বন্ধুদের বাড়ি গিয়েছি। আমার জামদানি শাড়িগুলি পরে পরে ছবি তুলেছি। 

তাই সেই পুজোতেও কম আনন্দ করিনি। এ বার কলকাতায় থাকছি না। সৃজিত মুম্বাইয়ে শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত থাকবে। কলকাতায় একা একা মন খারাপ হবে আমার। তাই বাংলাদেশে নিজের বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আয়রার স্কুল তো এখানেই। তাই এই ছুটিতে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাব। মা আর বোনের জন্য কলকাতা থেকে শাড়ি কিনেছি। আয়রার জন্য আমাকে আর কিছুই কেনাকাটা করতে হয়নি। 

কত কত উপহার পেয়েছে সে! সৃজিতের জন্য আলাদা করে কিছু কেনা হয়নি। নিজের জন্যও নিইনি কিছুই। মুম্বাই থেকে সৃজিত সোজা বাংলাদেশে যাবে। আর সে দেশে গিয়ে সৃজিত কেনাকাটা না করে থাকতেই পারে না। তাই ওর পুজোর কেনাকাটা ওই দেশেই হবে বলে মনে হচ্ছে। এবার কলকাতার দুর্গাপুজোর জন্য মন খারাপ হবে। মণ্ডপসজ্জা, শহরের কলতান, আড্ডা— সব মিলিয়ে জমজমাট এই উৎসবের সঙ্গে দেখা হবে পরের বছর। তাই এখনই বলব, ‘‘আসছে বছর আবার হবে।’’ সূত্র : আনন্দবাজার

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে