মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২২, ০২:৩৬:৪০

শ্রুতি ও তৃষার সাথে ধানুষের পরকীয়া মেনে নিতে পারেননি ঐশ্বরিয়া

শ্রুতি ও তৃষার সাথে ধানুষের পরকীয়া মেনে নিতে পারেননি ঐশ্বরিয়া

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় : ২০০৩ সালে ধানুষের ‘কাধাল কোনদেন’ ছবি মুক্তির সময়ে ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎ। তখনও একে অপরকে চিনতেন না তারা। ছবি শেষ হওয়ার পর প্রেক্ষাগৃহের মালিক রজনীকান্তের কন্যার সঙ্গে ধানুষের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। সে দিন যদিও সৌজন্য বিনিময়টুকুই হয়েছিল। তার বেশি কথা এগোয়নি। কিন্তু এর পর যা ঘটেছিল, তাতে আপ্লুত হয়েছিলেন ধানুষ।

প্রথম সাক্ষাতের পরেই ধানুষের বাড়িতে ফুলের তোড়া পাঠিয়েছিলেন রজনী-কন্যা। সঙ্গে একটি কার্ড। তাতে লেখা, ‘ভাল কাজ করেছেন। যোগাযোগ রাখবেন।’ বিয়ের পরে এক সাক্ষাৎকারে ঐশ্বর্যা বলেছিলেন, ‘‘ধানুষের সঙ্গে আলাপের পর নিজেদের চিনতে চিনতেই আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল।’’ সেই বিয়ে ভাঙার বা দু'জনের আলাদা থাকার খবর নেটমাধ্যমে দিতে গিয়ে ধনুষ যেমন হিন্দু দেবতা শিবকে নমস্কার জানিয়েছেন তেমনি সকলকে ভালবাসা ছড়িয়ে দিতে বলেছেন।

এই 'আধুনিক' যুগের 'আধুনিক' ছড়ানো ভালবাসাই কি তবে তাদের বিচ্ছেদের কারণ? ২০১৫ সালে তামিল ইন্ডাস্ট্রির আর এক জুটি তৃষা এবং বরুণ মানিয়ান বিয়ে করার কথা ভেবেছিলেন। সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। অনেকে মনে করেন, তার পিছনে ধানুষের ভূমিকা ছিল। কারণ, তখন থেকেই তৃষাকে ধানুষের সঙ্গে দেখা যায়। শুধু তা-ই নয়, তাদের আংটি বদলের দিন ধানুষকে আমন্ত্রণ করা নিয়ে বরুণের সঙ্গে তৃষার বিবাদ তৈরি হয়। ঠিক সেই সময়েই তৃষা-ধানুষের একটি পার্টির ছবি ভাইরাল হয়ে যায়।

সেখানেই শেষ নয়। পরে কমল হাসনের মেয়ে শ্রুতির সঙ্গেও ধানুষের সম্পর্ক তৈরি হয়। সম্পর্কের জের ধানুষ-ঐশ্বর্যার দাম্পত্যের জমিতে ফাটল তৈরি করে। শোনা যায়, ‘বিবাহ-বহির্ভূত’ সম্পর্কের জন্য নাকি ধানুষ-ঐশ্বর্যার বিয়ে ভাঙতে বসেছে। তখনও রজনীকান্ত ও ধানুষের পরিবার তাদের ছেলে-মেয়েদের সম্পর্কের বাঁধন মজবুত করতে সরাসরি মাঠে নেমেছিলেন। দুই পরিবারের উপস্থিতিতে ধানুষ-ঐশ্বর্যার আধভাঙা দাম্পত্য জুড়ে যায়। 

এখন বোঝা যাচ্ছে, সে জোড়াতালি আসলে আলগাই ছিল। ২০১২ সালে গায়িকা ঐশ্বর্যা তার প্রথম ছবি পরিচালনায় হাত দেন। ছবির নাম ‘৩’। স্বামীর সঙ্গে ছোটবেলার বন্ধু শ্রুতিকেই নায়িকার চরিত্রে নেন তিনি। সেই শ্যুটের সময় ধানুষ-শ্রুতির প্রেম নাকি জমে ওঠে। বয়সে বছর তিনেকের বড় স্ত্রী ঐশ্বর্যাকে ধানুষের নাকি আর ভাল লাগছিল না। এক রেডিও অনুষ্ঠানে শ্রুতি-ধানুষ কথা বলার সময়ে পরিকল্পনা মতো যখন ঐশ্বর্যা যোগ দেন, তখন ধানুষ শরীর খারাপ বলে অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যান। কোনও ভাবেই তিনি ভিতরে-বাইরে ঐশ্বর্যার সঙ্গে এক মঞ্চে আসতে রাজি ছিলেন না।

এক জন মানুষ আর এক জন মানুষের সঙ্গে হঠাৎ কেনই বা থাকতে চায় না? কেন বিয়ের বিচ্ছেদ হয়? এক কথায় বলা খুব মুশকিল। আজকের দুনিয়া, যাকে আমরা ‘আধুনিক’ বলি, সেই দুনিয়ার ‘আধুনিক’ মানুষ প্রেম বিষয়টাকে আর তথাকথিত শৃঙ্খলের শিকলে আটকে রাখেনি। এটা সত্যি। যেমন সত্যি, প্রেম বিষয়ক পরিচিতির অ্যাপগুলোতে বিবাহিতদের সংখ্যা অবিবাহিতদের তুলনায় এখন অনেক বেশি।

এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে সম্পর্কবিহীন যৌ'নতার চলে এখন অনেক বেশি। ৪১ শতাংশ পুরুষ এবং ২৯ শতাংশ মহিলারা এক রাতের যৌ'ন সম্পর্কে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। মোটের উপর ২৬ শতাংশ মহিলা এমন এক জনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করতে আগ্রহী, যিনি তার স্বামী, বন্ধু বা প্রেমিক কেউই নন। সম্পূর্ণ অজানা এক মানুষ। এ ছাড়াও বিবাহিত দম্পতি অন্য পুরুষ বা নারীর সঙ্গে যৌ'ন সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করছে।

ফেসবুকে কারও কারও সম্পর্ক সম্পর্কে লেখা, ‘কমপ্লিকেটেড রিলেশনশিপ।’ যিনি বা যারা নিজের সম্পর্ককে এই তকমা দিচ্ছেন, দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গেই তারা ‘প্রোফাইল পিকচার’ রেখেছেন। অথচ সম্পর্কের পরিচয় দিতে গিয়ে তার জটিল পরি'স্থিতির উল্লেখ করছেন। ২০২০ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ৫৫ শতাংশ বিবাহিত ভারতীয় নিজের সঙ্গীর প্রতি আর বিশ্বস্ত নন। 

ভারতের প্রথম তৈরি বহুল প্রচলিত ডেটিং অ্যাপের পরিসংখ্যানে ৪৮ শতাংশ মানুষ বলছেন, একই সঙ্গে দু'জনকে ভালবাসা সম্ভব। অন্য দিকে, ৪৬ শতাংশ মানুষ বলেছেন লুকিয়ে কেউ যদি অন্য এক জনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন, তার মানে যে তারা স্বামী বা স্ত্রীকে ভালবাসেন না, এমন নয়। কিন্তু বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে এলে দেখা যাচ্ছে ৪০ শতাংশ মানুষ সঙ্গীকে ক্ষমা করে দিচ্ছেন। আর ৬৯ শতাংশ মনে করছেন, পরকীয়া থাকলেও তা ক্ষমারই যোগ্য। 

১,৫২৫ জন বিবাহিত ভারতীয়, যাদের বয়স ২৫ থেকে ৫০-এর মধ্যে এবং দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদ ও কলকাতার বাসিন্দা, তাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। ধানুষ-ঐশ্বর্যার বিবাহ বিচ্ছেদের পর পরিচালক রামগোপাল বর্মা টুইট করেছেন, ‘তারকাদের বিচ্ছেদ কাহিনির নিয়ত এই চর্চা খুব ভাল। তরুণ প্রজন্মকে এই চর্চা বিয়ের ভ'য়াব'হতা সম্পর্কে সতর্ক করবে।’ 

বলেছেন, বিবাহ বিচ্ছেদের সময় ‘সংগীত’ অনুষ্ঠান হওয়া উচিত। কারণ বিচ্ছেদে মুক্তির আনন্দ আছে। আর বিয়ে নামক অনুষ্ঠান চুপিসাড়ে হওয়া উচিত। এর মাধ্যমে উভয়ের ভ'য়ঙ্ক'র দিকগুলোর পরীক্ষা চলে। রামগোপালের বক্তব্য নিয়ে বি'তর্ক চলতে পারে। কিন্তু যা চলতে পারে না, তা হল ধানুষ-ঐশ্বর্যার বিয়ে টিকিয়ে রাখার অহেতুক চেষ্টা। যা তাদের পরিবার করে আসছে। কী এমন হত, ঐশ্বর্যা যদি আরও কিছু দিন ধানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে দিতেন? 

কী হত, ঐশ্বর্যা যদি স্বামীর পরকীয়া সম্পর্কে মুখ খুলতেন? যদি নিজের মনের কথা প্রকাশ্যে বলে দিতেন? তার ভগবানের মতো বাবার ভাবমূর্তি, ছেলেদের স্বাভাবিক জীবন— সব কিছুই তো নানা প্রশ্নের অস্বাভাবিকতায় নষ্ট হয় যেত। তবু বিচ্ছেদ নিয়ে এখনও এত বিস্ময়! ছুতমার্গ? এমন কী আছে, যা এই বিচ্ছেদ নিয়ে চলে যাবে? একটা বিয়ের শেষেই তো শুরু বিচ্ছেদের। সূত্র : আনন্দবাজার

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে