বিনোদন ডেস্ক: বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি সাত মাস আগে গীতিকার মহসীন মেহেদীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। আপাতত সন্তানের মুখ দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন এই দম্পতি।
গেল বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) মধ্যরাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে বিয়ে পরবর্তী জীবনের নানান ঘটনা নিয়ে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন নিজের মানসিক যন্ত্রণা ও অস্বস্তির কথা। এই গায়িকার সেই স্ট্যাটাস ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। ১২ হাজারের বেশি নেটজনতা ন্যান্সির স্ট্যাটাসটিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। হাজারেরও বেশি মন্তব্যে ভরে গেছে কমেন্টবক্স।
ন্যান্সি লিখেছেন, ‘আমার আর মেহেদীর সংসার জীবনের বয়স সাত মাস, এদিকে আমি অন্তঃসত্ত্বা। আমাদের দুজনের জন্যই নতুন করে অল্পদিনের পরিচয়ে একজন আরেকজনের জীবনসঙ্গী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন ছিলো। এরই মধ্যে একটি নতুন প্রাণের জন্ম দেওয়া যেন আনন্দের চাইতেও দ্বিগুণ ভীতি।’
নতুন অতিথি আগমনের খবরে পরিবারের অনেকেরই উচ্ছ্বাস নেই উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘আমার দুই ভাই, ভাবি এবং রোদেলা বাদে দুই পরিবারের কোনো সদস্যদের নতুন অতিথির আগমনের সংবাদে নেই কোনো উচ্ছ্বাস, উল্টো রয়েছে বিদ্রুপ মেশানো হতাশা। সেইসঙ্গে নতুন অতিথির আগমনের সংবাদে অর্থ বা সম্পদ বণ্টনে কে কী পাবে আর কি হারাবে, সেসব নিয়ে রয়েছে চুলচেরা হিসেব! আমি নিজেও যেন ভাবতে বসলাম, আচমকাই গোলক ধাঁধায় পরে গেলাম। মনে হলো স্বস্তি খুঁজতে গিয়ে অশান্তিকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এলাম। বিয়েটা না করলেই বরং প্রাণে না হলেও জানে বেঁচে থাকতাম।’
নিজেদের পূর্বের সংসার প্রসঙ্গে গায়িকার ভাষ্য, ‘দুজনই ভালোবেসে যার হাত ধরেছিলাম, সেটা যেকোনো কারণেই হোক, শেষ পর্যন্ত টেকাতে পারিনি। জীবন চলায় ব্যর্থতার তকমা কপালে জুটেছে। এখন দুজন দুজনের কাছে ভালোবাসার পাত্র-পাত্রী হওয়ার চাইতেও আস্থার হয়ে ওঠাটাই যেন বড় পরীক্ষা! আর প্রতিদিনকার জীবন-যাপনের প্রক্রিয়া দুজনের এতটাই ভিন্ন যে, সেটা রপ্ত করাটাও বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার! খাওয়া, ঘুমানো, আবেগ, অনুভূতি প্রকাশ করবার ভঙ্গি, নিত্যদিনের কথা বলা, মত প্রকাশ, গান শোনা, সিনেমা দেখা, ঘুরতে যাওয়া, কাছে আসা- এর সবই যেন নতুন করে শেখবার বিষয়! মনে হলো অল্পদিনেই বেশ হাঁপিয়ে উঠেছি।’
তিনি যোগ করেন, ‘পূর্বের সংসারে সন্তান যেহেতু আছে, কাজেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগও আছে। সন্তানদের কারণে উভয়ের জীবনেই প্রাক্তনদের উপস্থিতি আছে। সেটা উভয়ের সবসময় মন থেকে সহজভাবে মেনে নেওয়াটা কঠিন। এ যেন শেষ হয়েও হলো না শেষ। তার ওপর হঠাৎ খেয়াল করলাম আমাদের চাইতেও আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে নাটকীয় উদ্বেগ অন্য অনেকের যেন উথলে উঠছে। মেহেদির দুই সন্তান তাদের মায়ের বর্তমান স্বামী অর্থাৎ সৎ বাবাকে ঠিকই বহু আগেই হাসিমুখে মেনে নিয়েছে কিন্ত সৎ মা হিসেবে আমায় সহ্য করতে পারে না। অন্যদিকে, আমার ছোট মেয়ে নায়লা মেহেদিকে কোনোভাবেই সম্পর্ক অনুযায়ী সৎ বাবার আসনটুকু দিতে নারাজ। কিন্তু স্বাচ্ছন্দে তার বাবার জন্য পাত্রী দেখছে এবং তাদের সঙ্গে হাসিমুখে কথাও বলছে।’
বড় মেয়ে রোদেলা প্রসঙ্গে ন্যান্সি লেখেন, ‘ব্যতিক্রম আমার বড় মেয়ে রোদেলা। দিনশেষে সে সবাই যার যার মতো করে সুখে আছে, এটাই দেখতে চায়। এ কারণে বেচারিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট নোংরা মন্তব্যেরও মুখোমুখি হতে হয়। আমার রোদেলা! সন্তানের চাইতেও বেশি যে আমার জীবনে মায়ের রূপে এসেছে! আজ আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু বলতে রোদেলাই আছে এবং থাকবে জানি।’
ন্যান্সির আক্ষেপ, ‘এই সাত মাসের পথ চলায় এত বেশি হোঁচট খেয়েছি, সম্পর্কের বিষাক্ত দিক দেখেছি, সন্তানের অবহেলা পেয়েছি, অসম্মানিত হয়েছি, কাছের মানুষগুলোর কাছ থেকে যোগাযোগ হারিয়েছি, সৎ ছেলেমেয়ের কাছ থেকে নিজের সম্পর্কে বারংবার কটূ কথা শুনেছি, শ্বশুরবাড়ির তিরস্কার দেখেছি, নিজের অনাগত সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তা করেছি, পিতা-মাতাহীন নিজেকে অসহায় ভেবেছি, দু-মুখো মানুষ দেখেছি, থমকে দাঁড়িয়েছি, অবাক হয়েছি, ঘেন্না করেছি, তীব্র ভয় পেয়েছি, কেঁদেছি, টালমাটাল হয়েছি, অভিযোগে দিশেহারা হয়েছি। এত বছরের সংসার জীবনের মাঝপথে এসে নিজেকে একা আবিষ্কার করেছি, চিৎকার করেছি, গালি দিয়েছি, সুন্দর চেহারার আড়ালে কদর্য রূপ দেখেছি, শিক্ষিত মানুষের বিকৃত রুচি দেখেছি, আধুনিকতার নামে বেলেল্লাপনা দেখেছি, নির্মম সত্যের মুখোমুখি হয়েছি, মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছি, অভিমানে বোবা হয়ে গেছি, বিশ্বাস হারিয়েছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণের শিকার হয়েছি, সব ছেড়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছি, নিজের মৃত্যু কামনা করেছি, মানসিক অবসাদে ভুগে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছি। পূর্বে অনেক চড়াই-উৎরাই পার হলেও এতকিছু একবারে, একসঙ্গে আগে কখনও ঝড়ের গতিতে জীবনে আসেনি।’
ন্যান্সির বিয়ে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। এখনও হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে গায়িকা লিখেছেন, ‘আমাদের বিয়ের শুরু থেকেই রসালো আলোচনা, সমালোচনা, গবেষণা, নিন্দা, স্বল্পসংখ্যক শুভেচ্ছা, কাল্পনিক গল্পতে ভরপুর ছিল এবং এখনও আছে। আশা করছি ভবিষ্যতেও বহাল থাকবে। মেহেদী আর আমার একসঙ্গে ছবি দেখলে মেহেদীর সন্তানরা তাদের বাবার ওপর নাখোশ হয়। মেহেদী কষ্ট পায়, সেই কষ্টের রেশ আমার সংসার ছুঁয়ে যায়। নায়লাকে চাইলেও আগের মতো নিজের কাছে এনে রাখতে পারি না। সত্যি বললে দীর্ঘ ১০ মাস হলো সামনাসামনি দেখিনি। আমারও মন ভার হয়, ফলাফল সংসারে শীতল আবহাওয়া। নিজেদের অজান্তেই প্রতিনিয়ত আমরা স্বামী-স্ত্রী একজন অন্যজনের কাছে অপরাধী! এ ছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের স্বামীর সঙ্গে ছবি পোস্ট করলে উপহার হিসেবে একগাদা গালি; আতঙ্ক নিয়ে পোস্ট মুছে দিলে পুনরায় সংসার ভাঙার খেতাব! মাঝে মাঝে মনে হয়, বিশ্বজোড়া দজ্জাল শ্বশুরবাড়ি নিয়ে বসে আছি, যাদের কাজ হলো আমার খুঁত ধরা।’
এতকিছুর পরও সুখে সংসার করতে চান ন্যান্সি। সেই প্রত্যাশায় তিনি লেখেন, ‘এতকিছুর পরও মেহেদী আর আমি সংসার চালিয়ে যেতে চাই, একসাথে বৈরী পথ চলতে চাই, অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে চাই, একে অন্যকে জীবনের প্রথম প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলের মতো ভালোবাসি বলতে চাই, হাতের ওপর হাত রেখে ঘুরে বেড়াতে চাই, দিন শেষে সাত মাসের চেনা ঘরে ফিরতে চাই, সংসারের পরিচিত গন্ধে শ্বাস নিতে চাই, নিজেদের আনন্দের মুহূর্তগুলো সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চাই, রাত জেগে অহেতুক ঝগড়া শেষে জড়াজড়ি করে ঘুমোতে চাই। কী অদ্ভুত আমাদের চাওয়া-পাওয়া!’