শনিবার, ১৪ মে, ২০২২, ১১:৫৪:০৮

যে বিষয়টি আজও রহস্য শাশ্বতের কাছে!

যে বিষয়টি আজও রহস্য শাশ্বতের কাছে!

বিনোদন ডেস্ক: ২৭ মে সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে ‘তীরন্দাজ শবর’।  তার আগে একান্ত সাক্ষাৎকারে শাশ্বত চট্টোপাধ‌্যায়। সিনেমা, কেরিয়ার নিয়ে স্পষ্ট কথা শোনা গেল অভিনেতার মুখে। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ‌্যায়।

প্রায় চার বছর পর ‘শবর’ ফিরছে। আগের থেকে কতটা আলাদা? আপনি নাকি এই ছবির জন‌্য ওজন কমিয়েছেন?
সেটা করতেই হত। এমনিতেই অরিন্দম শীল আগের তিনটে ‘শবরে’ যা ছুটিয়েছে! শুটিং শুরুই করত আমার ছোটার সিন দিয়ে যাতে পরের দিকের সিনে আমাকে রোগা লাগে (হাসি)। তবে এবার ছুটোছুটি একটু কম। এবার ইন্ট্রোডাকশন সিন শুরু হচ্ছে অ‌্যাকশন দিয়ে। চার-পাঁচজন ঘিরে ধরেছে, সেখান থেকে শবর মেরে বেরোচ্ছে।

আপনি ‘তোপসে’ দিয়ে শুরু করেছিলেন, তারপর ‘অজিত’। এখন আর অ‌্যাসিস্ট‌্যান্ট নয়, মেন গোয়েন্দা। ‘শবর’ জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠে আপনার ছবি রিলিজের পরে। এটা কতটা তৃপ্তি দেয়? সত‌্যি বলতে কী, আমার জীবনে তৃপ্তিই বেশি। কারণ, আমি নিজেকে নিয়ে খুব একটা ভাবি না। আমার চাহিদা খুব কম। যা পেয়েছি সেটাই বোনাস। তোপসে-অজিত-শবর–ওই স্কুল-উচ্চমাধ‌্যমিক-কলেজ থেকে গ্র‌্যাজুয়েট হয়ে বেরনোর মতো। এই ভাবে দেখি। আর না চাইতে এত কিছু পেয়েছি সেটা আমি কেন, আমার বাবাও কোনওদিন ভাবেননি। কিন্তু দুঃখের কথা হল, তিনি দেখে যেতে পারলেন না।

এটা আপনার মাঝেমধ্যেই মনে হয়? হ্যাঁ, মনে হয়। বিশেষ করে যখন অন‌্যান‌্য ইন্ডাস্ট্রি থেকেও ডাক আসে–হিন্দি, তেলুগু। তখন বাবার কথা মনে পড়ে। যখন আমরা সিরিয়াল করতাম, তখন বলা হত সিরিয়াল আর্টিস্টদের ছবিতে নেওয়া যায় না। বাড়িতে বসে যাদের দেখতে পাওয়া যায়, তাদের দেখতে কেউ হলে আসে না। তাই সিনেমাতে অভিনয় করব সেটাও বাবা ভাবেননি।

এই যে কিছু দক্ষিণের ছবি, যার একটা নির্দিষ্ট ট্রেন্ড আছে– লার্জার দ‌্যান লাইফ, একটা গল্প, চোখধাঁধানো অ‌্যাকশন, হাইপার ম‌্যাসকুলিনিটি! দর্শক প্রায় মন্ত্রমুগ্ধের মতো ছুটছে। কী মনে হয় কারণটা কী? এই ট্রেন্ড কতদিন থাকবে? আরে এই ট্রেন্ড তো আগেও ছিল। না হলে অ‌্যাংরি ইয়াং ম‌্যান হিসাবে মিস্টার বচ্চন এইভাবে মেগাস্টার হয়ে উঠতেন না।

এটা আর কিছুই না, আমাদের মনের মধ্যে যা ফ্রাসট্রেশন রয়েছে, যে কাজ আমরা করতে পারছি না, যে চাপা হিংসা বের করতে পারছি না, সমাজে থাকি বলে এবং লিগ‌্যালি সেটা করাও যায় না। সেগুলো আমাদের হয়ে কেউ করে দিচ্ছে। সিটি, হাততালি তো পড়বেই। কারণ আমাদের রক্ত ফুটছে তখন। আমাদের জীবনে না পাওয়া, হতাশা যতদিন থাকবে এই ধরনের ছবিও থাকবে। এগুলোর সিনেম‌্যাটিক ভ‌্যালু আছে কি না সে অন‌্য কথা।

আপনার তো পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর হয়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে…
উমম… আমি যদি একদম প্রথম ক‌্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর কথা বলি, ‘চার্বাকে’ জয়েন করি তখন ‘সোনেক্সে’র জন‌্য সিরিয়ালে ছোট ছোট কাজ করতাম। ওই দূরে দাঁড়িয়ে হয়তো পাখা দিয়ে হাওয়া করছি– সেটা ৯৪/৯৫ হবে। তাহলে সাতাশ-আঠাশ বছর হয়ে গেল।

এত বছর ভাল-মন্দ নানা ছবিতে কাজ করা, সাফল্যের মুখ দেখার পর অভিনেতা হিসাবে খিদেটা কতটা আছে? এখন ছবি সাইন করলে চরিত্র, ব‌্যানার নাকি টাকার অঙ্ক–কোনটা জরুরি? খিদেটা আছে বলেই আমিও আছি। না হলে শেষ হয়ে যাব। এটা আরও বুঝলাম অনিল কাপুরের শো–‘নাইট ম‌্যানেজারে’র হিন্দি ওয়েব সিরিজ ‘ক‌্যাপ্টেনে’ কাজ করতে গিয়ে। অনিল কাপুর জীবনে কী অ‌্যাচিভ করেননি!

শুটিংয়ে ১০-১২ বার রিহার্সাল দিচ্ছেন, পাঁচ-ছ’টা টেকেও ওঁর শান্তি হচ্ছে না। ‘এক অউর করতে হ‌্যায়’– এই যে আরও ভাল করার প্রচেষ্টা এইটা নতুন করে শিখলাম যেন। কোনও কাজ মনের মতো হচ্ছে না, আমারও হয়েছে। কিন্তু তারপর বুঝেছি আমার কাজটা আমাকে ভাল করে করতে হবে, ছবি যা হচ্ছে হোক। আমি বিশ্বাস করি চারটে হিট-একটা ফ্লপ দিয়ে কিছু হয় না। আর ছবি সাইন করার সময় প্রথম হল গল্প আর সেখানে আমার চরিত্র কী! এটাই!

সাফল‌্য তার মানে আপনার কাছে হিট-ফ্লপ নয়? একেবারেই না। সফল অভিনেতা সেই, যার কথা উঠলে, তার সিনগুলো মনে পড়বে, সে চলে যাওয়ার পরেও। এখন হয়তো সত‌্যজিৎ রায়ের থেকেও হিট ডিরেক্টর আছে আমাদের এখানে যাদের ছবি ভাল ব‌্যবসা করছে, আগেও এমন পরিচালক ছিল। কিন্তু জেনারেশনের পর জেনারেশন সত‌্যজিৎ রায়কেই মনে রাখবে। আসলে ইতিহাসটা বর্তমানে লেখা হয় না।

আপনার কী মনে হয় এমন কোনও চরিত্রে অভিনয় করেছেন যেটা মানুষ মনে রাখবে, ‘বব বিশ্বাস’ বাদ দিলে… ‘মেঘে ঢাকা তারা’-র ঋত্বিক ঘটক। আমার কাছে এখনও পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে চ‌্যালেঞ্জিং কাজ। আমি তো কোনওদিন ওঁকে দেখিনি। যারা ওঁকে দেখেছেন তেমন মানুষ আমাকে ফোন করেছিলেন। নিমাই ঘোষ, নির্মল কুমার। নিমাইদা বলেছিলেন, ‘তোমাকে ফোন করতে দু’টো দিন সময় লেগেছে, দুটো দিন আমি ভেবেছি।’ এইগুলোই প্রাপ্তি। পুরস্কার কিন্তু কেউ মনে রাখে না।

পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের কেরিয়ারে ভাল এবং খারাপ সময়? আমার তো মনে হয় এখন এই যে নানা ধরনের কাজ করছি, এটাই সবচেয়ে ভাল সময়। ওই ২০১২-১৩ থেকে একটা ফেজ শুরু হয়েছে। যেগুলো এক্সপেক্ট করিনি সেই সব জায়গা থেকে কাজ আসছে।

খারাপ সময়? চাহিদা কম তাই আক্ষেপও কম। তবে একটা ফেজ আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারিনি, কেন হয়েছিল। আমার কোনও দোষও ছিল না তাতে। ‘ফেলুদা’ অর্থাৎ ‘বাক্সরহস‌্য’ করার পর দেড় বছর কোনও কাজ ছিল না। সেই ইয়ার প্ল‌্যানারটা আমি রেখে দিয়েছিলাম। সব মিলিয়ে বোধ হয় ষোলো দিন কাজ করেছিলাম। আমি জানি না কেন। আজও আমার কাছে রহস‌্য।

নতুন আর কী কাজ করছেন, আগে টলিউডের কথা বলুন… Zeee5-এর জন‌্য একটা সিরিজে কাজ করছি। নারায়ণ সান‌্যালের গল্প নিয়ে তৈরি। চরিত্রটার নাম পি. কে. বাসু। উনি উকিল। পি. কে. বাসুর স্ত্রী-মেয়ে নিয়ে সংসার। অ‌্যাকসিডেন্টে মেয়ে মারা যায়। তারপরে পাহাড়ি অঞ্চলে আসে, একটা রহস‌্য দানা বাঁধে। এক-এক করে খুন হতে আরম্ভ করে। তখন সে কী করে সলভ করে।

ফিফটি প্লাস চরিত্র। মুম্বই থেকে আমি নিজে দাড়ি-গোঁফ নিয়ে এসেছি। আমার স্ত্রীর চরিত্রে অনন‌্যা চট্টোপাধ‌্যায় রয়েছেন। আপাতত একদিন শুট হয়েছে। এটা ওরা ফ্র‌্যাঞ্চাইজি তৈরি করার চেষ্টা করেছে।

পরিচালনা করছেন জয়দীপ মুখোপাধ‌্যায়। হইচই-এর ‘মহাভারত ডায়েরিজ’ আসছে। ওদিকে ‘প্রোজেক্ট-কে’-এর একদিনের শুটিং হয়েছে দীপিকার সঙ্গে। ‘ধাকড়’ রিলিজ করবে। ‘ব‌্যাড বয়’, ‘দোবারা’ রয়েছে। মাধুরী দীক্ষিত-এর বিজ্ঞাপন শুট করে এলাম। নানা চরিত্রে অভিনয় করেছি।

শাশ্বত মানেই বব বিশ্বাস। এই পুনরাবৃত্তিতে বিরক্ত লাগে না? আমি বুঝি না এটা নিয়ে কেন লোকে এত বাড়াবাড়ি করে। আমাকে দেখলেই ‘বব বিশ্বাস’ বলবে, আরে আমার তো একটা নামও আছে।

আরও অন‌্য কাজও করেছি। কিছু কিছু চরিত্র আইকনিক হয়ে যায়। এবং ‘কাহানি’ না হলে আমার হিন্দি ছবির জগতের দরজাটা খুলত না। ভাললাগা থাকবেই। তবে সত‌্যি কথা বলতে কী, ম‌্যাজিক একবারই হয়। তবে ওই পুরনো কাজ নিয়ে বারবার কথা হলে মনে হয় নতুন কী করব। ওটাতে আটকে থাকলে তো এগনো যাবে না। -এই সময়

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে