রবিবার, ২২ মে, ২০২২, ১১:৪৩:২২

ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পরও ১০ বছর ধরে মানুষদের বিনোদন দিয়ে গেছেন ‘ভাদাইম্যা’

ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পরও ১০ বছর ধরে মানুষদের বিনোদন দিয়ে গেছেন ‘ভাদাইম্যা’

বিনোদন ডেস্ক: ১০ বছর আগে ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে আহসান আলী ওরফে ভাদাইমার শরীরে। চিকিৎসকের পরামর্শে ভারতেও গিয়েছিলেন চিকিৎসা নিতে। পরে দেশে এসে প্রতিমাসেই রক্ত দিতে হতো শরীরে। ছুটে গেছেন টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে। 

ক্যান্সারের পাশাপাশি লিভারেও পানি জমেছিল তার। রবিবার (২২ মে) সকালে হঠাৎ বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে টাঙ্গাইল শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হয়। 

এরপর সেখানে থেকে আহসান আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে মারা যান।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা দাইন্যা ইউনিয়নে ১নং ওয়ার্ডের দাইন্যা রামপাল গ্রামের মৃত বাবর আলীর চার ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে আহসান আলী ছিলেন পঞ্চম। 

বাবার কৃষি কাজকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। ২০০০ সালের দিকে যোগ দেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। কৌতুক অভিনয়ে সারা ফেলেন পুরো টাঙ্গাইলে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে দেশের সর্বত্রই। বের করেন সহস্রাধিক ক্যাসেট। সবক'টি ক্যাসেট ব্যাপক হিট হয়। সেই সময় থেকেই আহসান আলী নামের সাথে যোগ ভাদাইমা। ডিজিটাল যুগে এসে ক্যাসেটের পরিবর্তে বছর তিনেক আগে খুলেন ইউটিউব চ্যানেল।

ব্যক্তি জীবনে আহসান আলী ভাদাইমা দু'টি বিয়ে করেন। তাদের ঘরে তিন ছেলে ও দুই মেয়ে জন্ম নেয়। বড় ছেলে মোতালেব সৌদি আরব প্রবাসী। বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন। মেঝ ছেলে মজিবর রহমান বাবার গড়ে তোলা ইউটিউব চ্যানেল চালান আর ছোট ছেলে হৃদয় হাসান কোরআনে হাফেজ হয়েছেন।

এদিকে আহসান আলী ভাদাইমার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শোকে স্তব্ধ হয়ে পুরো গ্রামের মানুষ। তার গ্রামের বাড়িতে ভীড় জমাতে শুরু করেন লোকজন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে ভক্তবৃন্দ। বিকালের দিকে তার লাশ বাড়িতে এসে পৌঁছে। সেখানে সৃষ্টি হয় হৃদয় বিদারক দৃশ্যের। কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী ও ভক্তবৃন্দরা।

আজ রাত ৯ টায় দাইন্যা রামপাল জামে মসজিদ ঈদগাহ মাঠে প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা নামাজে মুসুল্লিদের ঢল নামে। প্রথম জানাজা পড়ান আহসান আলীর ছোট ছেলে হাফেজ হৃদয় হাসান। লোক সমাগম বেশি হওয়ায় একই স্থানে দ্বিতীয় জানাজা নাম অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

আহসান আলীর মেঝ ছেলে মজির রহমান জানান, তার বাবা দীর্ঘদিনের অভিনয় জীবনে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। ওনার অভিনয় ভালোবাসতেন সবাই। 

অভিনয়ের মাধ্যমে মানুষদের বিনোদন দিতেন তিনি। সহস্রাধিক ক্যাসেটও রয়েছে ওনার। বাবার স্মৃতি ধরে রাখতে ইউটিউব চ্যানেলটি চালিয়ে যাবেন তিনি। মহান আল্লাহ তাআলা যেন তার বাবাকে জান্নাতবাসী করেন এজন্য সকলের দোয়া চেয়েছেন তিনি।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন বলেন, সদা হাস্যোজ্জ্বল, বিনয়ী ও ভালো মনের মানুষ ছিলেন আহসান আলী। 

কখনো কাউকে মন খারাপ করে দিতেননা। তার মৃত্যুতে তিনি গভীর শোক প্রকাশ করেন। তার পরিবারকে সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। পরিশেষে তিনি বলেন মহান আল্লাহ তাআলা যেন আহসান আলীকে জান্নাত দান করেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে