বিনোদন ডেস্ক: ভারতীয় বাণিজ্যিক ছবির অপরিহার্য অংশ হল গান এবং অনেক ক্ষেত্রে নাচও। সে দিক থেকে দেখলে, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ছাড়াও এর নেপথ্যে নৃত্য প্রশিক্ষকদের ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
বলিউডের নৃত্য প্রশিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘ কাল সাফল্যের চূড়ায় ছিলেন সরোজ খান। চল্লিশ বছরের কর্মজীবনে তিনি শ্রীদেবী, মাধুরী দীক্ষিত, জুহি চাওলা, ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনসহ বহু অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করেছেন।
‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ ছবির ‘হাওয়া হাওয়াই’ থেকে শুরু করে ‘দেবদাস’ ছবির ‘ডোলা রে ডোলা’, সরোজ খানের নির্দেশনায় দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। তবে কর্মসূত্রে তিনি বলিউডের এক নামকরা তারকার সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন।
সেই নায়িকাকে শেষ পর্যন্ত শ্যুটিং সেট ছেড়ে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল। তিনি আর কেউ নন, বি-টাউনের ‘গ্ল্যামার কুইন’ রেখা। ১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘শেষনাগ’ ছবিতে জীতেন্দ্র, ঋষি কাপূর ও রেখাকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল।
ওই ছবিতে রেখার একটি নাচের দৃশ্য ছিল। অভিনেত্রীকে নাচ শেখানোর দায়িত্বে ছিলেন সরোজ খান কিন্তু সমস্যা ছিল অন্য জায়গায়। ‘নাগিনা’ ছবিতেও একই ধাঁচের নৃত্য পরিবেশন করেছিলেন শ্রীদেবী। সরোজই সেই নাচ শিখিয়েছিলেন শ্রীদেবীকে।
দুই অভিনেত্রীর নাচের মুদ্রা যাতে এক রকম না হয়ে যায়, সে বিষয়ে সচেতন ছিলেন সরোজ। শ্যুটিংয়ের আগেই রেখাকে তিন দিন নাচটির রিহার্সালের জন্যে ডেকে পাঠিয়েছিলেন সরোজ।
তিনি জানতেন, একই ধাঁচের নাচ বলে সকলেই শ্রীদেবীর সঙ্গে রেখার তুলনা করতে শুরু করবেন কিন্তু এতে সম্মানহানি হবে খোদ নৃত্য পরিকল্পকেরই। এই ঘটনা তার কেরিয়ারেও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সরোজ কোনও ভাবেই ঝুঁকি নিতে চাননি।
সরোজ ভেবেছিলেন, তিন দিন যদি অভিনেত্রী ঠিক মতো রিহার্সাল করে নেন, তা হলে পরবর্তীকালে আর কোনও সমস্যা হবে না কিন্তু রেখা বেঁকে বসলেন। তার ম্যানেজার সরোজকে সময় দিয়ে রাখলেও তিনি এক দিনও রিহার্সালে আসেননি।
তিন দিন পার করে সোজা শ্যুটিং সেটে এলেন অভিনেত্রী কিন্তু সে দিনও তিনি বেঁকে বসলেন। অসুস্থ বোধ করছেন বলে নাচের দৃশ্যের শ্যুটিং করতে পারবেন না, জানালেন রেখা। এই ঘটনার পর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে সরোজের।
যেখানে বলিউড ফিল্মজগতের বড় মাপের অভিনেত্রীরা সরোজের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলে হাতছাড়া করতে চান না, সেখানে রেখা তাকে সময় দিয়েও কথার খেলাপ করেছেন। সেটের মধ্যেই রেখা অপেশাদার আচরণ করছেন বলে সরব হন তিনি।
অভিনেত্রীকে সরাসরি নির্দেশ দেন সরোজ, তাকে শ্যুটিং করতেই হবে। একেই রিহার্সালে অনুপস্থিত থেকে ঠিক করেননি রেখা। তার উপর শ্যুটিং না করলে রেখার কেরিয়ারে কোনও ক্ষতি হবে না, বরং এর প্রভাব পড়বে সরোজের কর্মজীবনে।
সরোজ এ কথাও জানতেও চান যে, তার সঙ্গে এমন আচরণ করার কারণ কী? সরোজের বক্তব্য শোনার পর তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন অভিনেত্রী কিন্তু পরক্ষণেই রেখা যখন সরোজের দিকে তাকান, তখন তার চোখে জল। রেখাকে এ ভাবে কাঁদতে দেখে ক্ষমা চান সরোজ।
সরোজ জানান, তিনি রেখাকে কষ্ট দিতে এই কথাগুলো বলেননি কিন্তু শ্যুটিংয়ের প্রস্তুতি শুরু না করলে সকলেরই ক্ষতি হবে। সরোজের কথা শেষ হতে না হতেই রেখা চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন। অভিনেত্রী জানান, তিনি অবশ্যই শ্যুটিং করবেন। সেই ঘটনায় কাঁদতে কাঁদতেই শ্যুটিং সেট ছেড়ে বেরিয়ে যান রেখা।
সেই সময় অধিকাংশ অভিনেত্রীর নিজস্ব নৃত্য প্রশিক্ষক থাকতেন। তাদের কাছে প্রশিক্ষণ নিতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন অভিনেত্রীরা। রেখার সঙ্গে কোরিয়োগ্রাফার কমলনাথেরও এমনই সমীকরণ গড়ে উঠেছিল।
সেই কারণেই হয়তো অভিনেত্রী সরোজের সঙ্গে কাজ করার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। সরোজ অভিনেত্রীর ম্যানেজারকে জানান, রেখা যদি তার কোরিয়োগ্রাফার বদলাতে চান, তা হলে তিনি ছবির পরিচালক ও প্রযোজকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
রেখা শেষ পর্যন্ত সেটে ফিরে আসেন। সরোজের নির্দেশ মেনে দুর্দান্ত নৃত্য পরিবেশন করেন তিনি। কিন্তু, ‘নাগিনা’ ছবি যে পরিমাণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, ‘শেষনাগ’ বক্স অফিসে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। সূত্র: আনন্দবাজার