বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৬, ১১:০২:৫৭

টাকার অভাবে ফুচকা খেয়ে দিন কাটিয়েছিলেন অমিতাভ!

টাকার অভাবে ফুচকা খেয়ে দিন কাটিয়েছিলেন অমিতাভ!

সীমান্ত প্রধান : একজন সাধারণ মানুষ থেকে বলিউডের শাহেন শাহ হওয়া বোধ করি চাট্টে-খানে কথা নয়। এই স্থান দখল নিতে কতটা কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, কতটা সংগ্রাম করতে হয়েছে তা একমাত্র অমিতাভ বচ্চনই জানেন।

একসময় খেয়ে না খেয়ে অর্ধাহার অনাহারে থেকে কঠিন সংগ্রাম করা যুবকটিই আজ বলিউড শাহেন শাহ। যাকে বলিউডে এখনও অনেক অভিনেতা অভিনেত্রীই একজন বটের ছায়া বলেই মনে করেন। আর এই অমিতাভের যুবক বয়সটি মোটেও সুখকর ছিলো না। অর্ধেক ফুচকা খেয়েও কোন কোন রাত তিনি হাসি মুখে সয়ে গিয়েছেন।

অমিতাভ বচ্চনকে কলকাতার মানুষ জামাইবাবু বলে ডাকতেই ভালোবাসেন। এখানকার মানুষের কাছে তিনি জামাইবাবু। এই শাহেন শাহও অনেকবারই বলেছেন, এই কলকাতার সাথে তার নাড়ির টানের কথা। ইদানীং তো তিনি প্রায়ই আসেন কলকাতা। যেন এখানে এলেই স্বস্তি ফিরে পান শাহেন শাহ।

অমিতাভ নিজেই জানালেন তার কলকাতায় এসে সংগ্রাম করার কথা। কতটা সংগ্রাম করে আজ তিনি এ অবস্থায় এসেছেন অকপটে সবই বললেন ৭৫ বছর বয়সী বলিউডের এই শাহেন শাহ।

যুবক অমিতাভ সামান্য কিছু টাকা নিয়ে এলাহাবাদ থেকে কলকাতায় এসেছিলেন। এখানে তিনি শুরু করেছিলেন স্বল্প বেতনে চাকরি। তখন তার বেতন ছিল মাত্র চারশো টাকা। সেসময় তিনি থাকতেন টালিগঞ্জে তার বাবার এক বন্ধুর বাড়িতে। ট্রাম ধরেই অফিসে আসা যাওয়া করতেন নিয়মিত। সেসময় তার কাছে পোশাক বলতে ছিল কেবল একটি নীলমণি জ্যাকেট ও ট্রাউজার এবং একটি টাই।

বর্ষাকাল এলেই তাকে পড়তে হত বিপাকে। তিনি যে পথ দিয়ে যাতায়াত করতে এবং থাকতেন সেখানে বর্ষা এলেই জমে যেত পানি। তাই প্যান্ট বাঁচাতে হাঁটু অবধি প্যান্ট গুটিয়ে হাঁটতে হত তাকে। এর সাথে একটা চিন্তার ভাঁজও পড়ত তার কপালে, যাতে গুটিয়ে নেয়ার ফলে প্যান্টটা না কুচকে যায়!

কিছুদিন পর অফিসের কাছাকাছি থাকবেন বলে বাসা বদল করে অমিতাভ উঠে এলেন রাসেল স্ট্রিটের এক গেস্ট হাউসে। তখন অফিস থেকেই তিনি পেতে বিনে-পয়সায় দুপুরের খাবার। আর বাকি সময়? ফুচকা খেয়েই কাটাতে হত।

একসময় তাকে অফিস থেকে বদলি করে পাঠানো হল আসানসোল, ধানবাদের কয়লাখনি এলাকায়। সেখানে খনি-শ্রমিকদের নিদারুণ কষ্ট দেখে এক অদ্ভুত অবসাদ গ্রাস করেছিল শাহেন শাহকে।

কলকাতার নাটক পড়ায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল এই শাহেন শাহর। এছাড়া কাছাকাছি ছিল ব্রিটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরি, সেখানে গিয়েই বই পড়তেন অমিতাভ।

এছাড়া বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা বা আনন্দ করার জন্য তার গন্তব্য ছিল পার্ক স্ট্রিটের সাবেক ব্লু-ফক্স। সেখানে এক বার আচমকাই শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে নাচার সুযোগও হয়েছিল যুবক অমিতাভের।

যুবক অমিতাভ তখনও বুঝতেও পারেননি যে, উনি শর্মিলা। পরে বন্ধুরা বলার পরে মাথায় হাত! তখন তো জানা ছিল না আগামী দিনে ‘চুপকে চুপকে’, ‘ফরার’, ‘দেশপ্রেমী’ বা ‘বিরুধ’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করতে হবে এই শর্মিলার সঙ্গেই!

অফিসের ফাকে বিজ্ঞাপনে ভয়েসওভার করার কাজ পেয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন। সেই বিজ্ঞাপনটি ছিল কাপড় কাচা সাবানের। আর সেখান থেকেই তিনি পেয়েছিলেন মাত্র পঞ্চাশ টাকা। সেই রেকর্ডকে উপজীব্য করে তিনি পেয়েছিলেন মৃণাল সেনকে। মুম্বাইয়ের ফিল্মিস্তান স্টুডিওয় ওই রেকর্ড শুনেই মৃণাল তাকে ‘ভুবন সোম’-এ ভয়েসওভারের কাজ দেন।

খেদ থেকে গিয়েছে, ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’-র ভয়েসওভার ছাড়া সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ করা হয়নি। যদিও সত্যজিতের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছে তার অনেকবার।

অমিতাভ বলছিলেন, সত্যজিতের ঘরটা ছিল পৃথিবীর যে কোনও গৃহিণীর কাছে দুঃস্বপ্ন। কাগজ আর বইপত্রের ভিড়ে সবার খেই হারিয়ে যেত। ‘অথচ হাত বাড়িয়ে ঠিক জায়গা থেকে ঠিক বইটা দিব্যি খুঁজে বের করে ফেলতেন মানিক-দা!’

অমিতাভ জানালেন, ‘আজও যখন জয়া (বচ্চন) আমার অগোছালো অফিসঘর নিয়ে খোঁচায়, আমি বলি মানিক-দার কথা ভাবো!’ সূত্র অনন্দবাজার
২৮ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে